সর্বশেষ ভোর দেখেছেন কবে মনে আছে?
মেঘের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন লাস্ট কবে?
অনেক দিন কোথায় যাবেন ভাবছেন?কোন পাহাড় ট্রেকিং এ যাবেন ভাবছেন?
মারায়ন তং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলিকদম এ অবস্থিত একটি পাহাড় ৷ বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি ক্যাম্পিং সাইট এর এটি একটি৷
পাহাড়ের চূড়ায় রাত কাটানোর মজাটা অন্যরকম ৷ চারদিকে নিস্তব্ধতা আর আকাশ ভরা তারা ।সাথে যদি থাকে বন্ধুবান্ধব তাহলে ত কথাই নাই!!
সারারাত আড্ডা গান, বার্বি কিউ সব ই করতে পারবেন।
শুধু প্রয়োজন ১৬৪০ ফুট উঠার ইচ্ছা।
যখন চূড়ায় পৌছে যাবেন সব কষ্ট ভুলে যাবেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে ৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই চারদিকে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সন্ধ্যার পর রাত কইটা বাজে ঘড়ি দেখা ছাড়া অনুমান করা কঠিন । নিচে তাকালে দেখা যাবে ছোট ছোট লাইট জোনাকির মত জ্বলজ্বল করছে ৷ ঝিঝি শব্দ আর আকাশ ভরা তারা আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে মিল্কি ওয়ের ছবিও পেয়ে যেতে পারেন ।
হাতে ২ দিন সময় থাকলে চলে যেতে পারেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে৷
তবে এখন খানিকটা বিধিনিষেধ আছে পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্পিং করার।তবে সম্ভব না যে তা না!!!
এবার আসি বিস্তারির আলোচনায়!
গরীব মানুষ তাই সব সময় বাজেট ট্রিপ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।বাজেট ট্রিপ এ আলাদা একটা মজা আছে ?।
প্লান ছিলো চাঁদপুর যাব । কি মনে করে জানি চলে গেলাম মারায়ন তং এ।পাহড় উঠার অভ্যাস আছে তাই কোন কিছু না ভেবেই রওনা দিলাম পাহাড় এ ক্যাম্পিং করতে কিন্তু…!!! শেষে পাবেন কিন্তুর কারন…
এইটা একটা বাজেট ট্যুরের বিস্তারিত আলাপ আলোচনা। তাই যারা রিলাক্স ট্যুর পছন্দ করেন এভোয়েড করতে পারেন।খরচা পাতি বরাবরের মতই লাস্ট এ দেওয়া আছে।
?বৃহস্পতিবার রাতে কমলাপুর থেকে চিটাগাং গামী মেইল ট্রেন এ করে রওনা দেই চিটাগাং এর উদ্দেশ্যে ।মেইল ট্রেন এ চিটাগাং যাওয়ার উদ্দেশ্য খরচ কমানো ৷ বৃহস্পতিবার বিধায় সিট পেতে ভালোই ভোগান্তি হয়েছে।
মেইল ট্রেন এর বিস্তারিত সবাই জানেন আশা করি ।ভ্রমন এর সময় এর কিছু ভাবলে চলে নাকি?
?চিটাগাং পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সকাল ৯ টা বেজে গেলো। ট্রেন অনেক লেট করেছে। সকালে নাস্তা করে স্টেশন থেকে ২ নাম্বার বাসে করে চলে যায় বহদ্দারহাট টার্মিনাল এ৷
সেখানে মার্সা গাড়িতে করে রওনা দেই চকরিয়ার উদ্দেশ্যে। মার্সার সার্ভিস ভালো। লোকাল করে না রাস্তায় ৷
চকরিয়া পৌছাতে পৌছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো।
চকরিয়া পৌছে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম জীপ/চাদের গাড়ি স্ট্যান্ড এ।
সেখান থেকে আলিকদম বাজার যাওয়ার জীপ/চান্দের গাড়ির টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম ১৪ জন যাত্রি হওয়ার জন্য৷ জীপ ১৪ জন যাত্রী না হলে ছাড়ে না।
। বাস দিয়েও যাতায়ত করা যায়, ভাড়া ৫০ টাকা তবে সময় অনেক লাগে।
পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উচু নিচু পথে চলছে গাড়ি৷ চারদিকে সবুজ আর সবুজ । শহরে এই দৃশ্য কোথাই পাবেন!!!
আলিকদম বাজার পৌছাতে পৌছাতে প্রায় বিকাল ৪ টা বেজে গেলো। প্রচন্ড খুদা নিয়ে হোটেল এ ভাত মাংশ খেয়ে নিলাম৷ খাওয়া শেষে পানি, চিপস আর রাতের জন্য খাবার নিয়ে নিলাম।
তারপর অটো নিয়ে চলে গেলাম পাহাড়ের আবাসিক এ যেখান থেকে পাহাড় এর রাস্তা শুরু সে অব্দি। রাস্তায় আর্মি চেক পোস্ট এ নাম এন্ট্রি করানোর জন্য নামলাম । সব জিজ্ঞেস করল। পরে যা বলল, তা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আর্মি এবং পুলিশ এর সদস্য বললেন, মারায়ন তং এ এখন কোন প্রকার ক্যাম্পিং করা যাবে না ৷ আপনারা ৬ টার মধ্যে নেমে আসবেন পাহাড় থেকে। আমরা পেট্রোলিং এ গেলে কাউকে পাহাড় এ পেলে ধরে নিয়ে আসব তাকে।
মন খারাপ! কি করব না করব ভেবে চলেই গেলাম পাহাড়ে।
প্রায় সন্ধ্যা তখন পাহাড় এ উঠা শুরু করি। তাবু, স্লিপিং ব্যাগ, হ্যামক, কাপড় চোপড়, পানি সব মিলায়া পুরা এক ভারি ব্যাগ ছিলো । পাহাড় এইটা অনেকটাই খাড়া।
পথ শেষ হচ্ছে না এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়েই এলো।রাতে পাহাড়ে উঠার অভ্যাস না থাকায় একটু ভয়েই ছিলাম।
সন্ধ্যার আগে পাহাড়ে ওঠার তাড়া ছিল। তাড়া থাকায় (মূলত রায়হান ভাই বারবার তাড়া দেয়ার) ±৫০ মিনিটেই উপরে উঠে গেলাম। কষ্ট হইছে কিন্তু উপরে ওঠার পরে যা দেখেছি, সব কষ্ট ধুয়েমুছে গেছে। আরও আগে কেন আসলাম না, মনে মনে এই আফসোস করলাম।
ভেবেছিলাম কোন টিম বা কেউ থাকবে না। একাই হয়ত পাহাড়ে থাকব কিন্তু গিয়ে আরো ২ টা টিম পেয়ে যায়। একটু রেস্ট নিয়ে তাবু সেট করলাম।তখন সন্ধ্যা কিন্তু মনে হচ্ছে অনেক রাত৷ নিচে এত গরম অথচ পাহাড়ে! পুরাই জুস ঠান্ডা আর বাতাস৷
রাতে বার্বিকিউ আর নুডলস এর আয়োজন ছিলো চট্রগ্রামের লোকাল ভাইব্রাদার এর টিমের। আমরা কাউকে পাব না ভেবে নিচে থেকেই রাতের খাবার কিনে নিয়ে গেছিলাম।তাদের সাথে বার্বিকিউ এ যোগ দিলাম।
একটু পর পর হালকা বৃষ্টি আবার বাতাস৷ রাতে সবাই মিলে আড্ডা হলো, কেউ গান গাইল, কেউ এদিক সেদিক হাটল।
হটাত করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বাকি ২ টিমের সবাই তাবু ছেড়ে জুম ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিলো তাদের তাবু ছিলো ১ সিজন। এই জন্য পানি তাবুর ভিতরে গেছে। আমরা তাবুতেই ছিলাম। তবে শেষ রাতের দিকে মনে হলো তাবুর মেঝে ভিজে গেছে। উঠে দেখি হালকা ভিজা ভিজা লাগছে।অবশ্য যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে এইটা সামান্য ভেজা ছিলো।
অনেক দিন পর এমন সুন্দর একটা সকাল দেখলাম।বৃষ্টি তখন শেষ । চারদিকে মেঘ আর মেঘ।এর মাঝেই কখন যে সূর্য উঠে গেলো টের পেলাম না।সকালের দৃশ্য টা ছিলো মনে রাখার মত ।
চারদিকে পাহাড় আর পাহাড় নিচে মাতামুহুরি নদী দেখা যাচ্ছে সাপের মত ।
সকালের পাহাড় অন্য রকম সৌন্দর্যের হাতছানি দেয় ৷ চারদিকে মেঘ আর মেঘ। বাতাসে মেঘের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য আপনাকে সাজেক এর ফিল দিবে?।
সকাল ৮ টার দিকে তাবু, ব্যাগ গুছায়া চারপাশ পরিষ্কার করে পাহাড় থেকে নামা শুরু করলাম।
একটু নিচে নামতেই রোদ মামার ঝলক দেখা গেলো।নামার সময় তেমন কষ্ট নাই।খালি নামবেন আর নামবেন। না নামলেও নেমে যাবেন?।
৩০/৪০ মিনিট নামার পর পৌছে গেলাম নিচে। সেখানে এক ভাই এর সাথে জম্পেস আড্ডা দিলাম।পাহাড় এর নিচে একটা ঝর্না আছে। আমাদের তাড়া থাকায় সেখানে যাওয়া হয় নি।তবে এখন পানি নেই বললেই চলে শুনেছি।
আবাসিক এ গিয়ে সকালের নাস্তা করে রওনা দিলাম আলীকদম বাজার এ। আলীকদম বাজার থেকে হাইস মাইক্রো তে করে আসলাম চকোরিয়া।
কেউ চাইলে কাছেই মাত্র ৫০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে কক্সবাজারএ ঘুরে রাতে ঢাকা ব্যাক করতে পারেন।অথবা চকরিয় থেকে চিটাগাং এ আসতে পারেন।
আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম।
পুরো ট্যুরের একটা ভিডিও এখানে আছেঃ-
here is video link: https://www.youtube.com/watch?v=TCLgDI8vgN4&t=409s
খরচাপাতি
ঢাকা টু চিটাগংঃ মেইল ট্রে3নঃ১১০ টাকা
চিটাগাং রেলস্টেশন টু বহদ্দারহাটঃ ১০ টাকা
বহদ্দারহাট টার্মিনাল টু চকরিয়াঃ১৮০ টাকা(মার্সা ভালো গাড়ি)
চকরিয়া টু আলিকদমঃ জীপ/চান্দের গাড়িঃ৭০ টাকা
আলিকদম বাজার টু পাহাড়ের নিচে রিজার্ভ অটোঃ১০০ টাকা
অথবা
ঢাকা টু আলিকদম ৮৫০ টাকা ।আবাসিক এ নেমে যাবেন ।
একই ভাবে আবার চিটাগাং আসবেন।
চিটাগং টু ঢাকাঃ বাস ৪৮০ টাকা
৩ বেলা খাবারঃ৩০০ টাকা
মোটামুটি ১৫০০ টাকা হলে ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গিয়ে শনিবার দিনে ঢাকা ব্যাক করতে পারবেন।
নিজস্ব তাবু থাকায় তাবু ভাড়া কত বা কোথায় পাওয়া যায় এই নিয়ে আমার কোন অভিজ্ঞতা নাই।
বিদ্রঃ
অফিশিয়ালি এখন রাতে থাকা নিষেধ, কেউ গেলে নিজের রিস্কে যাবেন।
১. আর্মি ক্যাম্প এ নাম এন্ট্রি করে যাবেন। এন আইডি/জন্মনিবন্ধন সাথে রাখবেন।
২. পাহাড়িদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
৩. ব্যাগ নিয়ে উঠতে কষ্ট হলে অনেক পিচ্চি পাবেন যারা আপনার ব্যাগ নিয়ে পাহাড়ে উঠায়া দিবে।বিনিময়ে টাকা নিবে৷ দামদর করে নিবেন।
৪. এখন বৃষ্টির সময় তাই তাবু নিলে ৩ সিজন তাবু নিয়ে যাবেন নাইলে রাতে ঘুমাতে পারবেন না বৃষ্টির জন্য৷
৫. আবাসিক এর পর কোন দোকান পাবেন না। পাহাড়ে উঠার আগে নিচে একটা দোকান পাবেন। তাই আবাসিক থেকেই সব কিনে নিয়ে যাবেন।
৬. চূড়ায় একটা ময়লা ও নেই।তাই সেখানে ময়লা না ফেলে নিচে নিয়ে এসে ফেলে দিবেন জায়গা মত।
৭.চূড়ায় বৌদ্ধ মন্দির আছে তাই এমন কিছু করবেন না যাতে অন্য ধর্মের লোকেরা কষ্ট পায়৷
৮. রাতে চূড়ার সাইডে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।অন্ধকার পড়ে গেলে খুজে পাওয়া মুশকিল৷
৯. পাহাড়ের চূড়ায় অনেক ঠান্ডা আর বাতাস। তাই হালক শীতের কাপড় নিয়ে যাবেন।
যেখানে ঘুরতে যাবেন সেখানে পরিষ্কার করে আসবেন ।প্লাস্টিক এবং পলিথিন সাথে করে ব্যাক নিয়ে ডাস্টবিন এ ফেলে দিবেন ।পরিবেশ দূষণ করলে তার ফল আমাদের ই ভোগ করতে হবে ভবিষ্যতে ।