বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় সৌন্দর্য — দেবতাখুম।
মাত্র মাসখানেক আগেই আমি সেখানে ঘুরে এসেছি, আর সেই অভিজ্ঞতা এখনো আমার চোখে লেগে আছে।
যাত্রার শুরু: বান্দরবান শহর থেকে
আমাদের যাত্রা শুরু হয় বান্দরবান শহর থেকে।
সকালেই আমরা চাঁদের গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিই। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে গাড়ি চলতে থাকে রোয়াংছড়ি হয়ে লিরাগাঁও আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত। এখানে পৌঁছে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হয়, কারণ এটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা।
অনুমতির পর লোকাল গাইড নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি শীলবান্ধা পাড়ার দিকে — যেখানে পাহাড়ি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে। এখান থেকে পায়ে হেঁটে দেবতাখুমের উদ্দেশ্যে রওনা হই।
শীলবান্ধা থেকে দেবতাখুম – হাইকিং ও খুমের পথে
এই অংশে যাত্রা শুরু হয় প্রকৃত অর্থে। আমাদের হাঁটতে হয় পাহাড়ের ভেতর দিয়ে, কখনো খাড়া পাহাড় বেয়ে, কখনো পাথুরে পথে।
এক পর্যায়ে পৌঁছে যাই খুমের (গহীন পানির গিরিখাত) কাছাকাছি। এখানেই দেবতাখুমের অসাধারণ গুহা আর পাহাড় ঘেরা পানিপথ শুরু হয়।
শীলবান্ধা পাড়া থেকে দেবতাখুমের রাস্তা
I Love Debotakhum
বাঁশের ভেলায় দেবতাখুমের বুক চিরে এগিয়ে চলা:
বাঁশের তৈরি ভেলায় চড়ে আমরা দেবতাখুমে প্রবেশ করি।
দুই পাশে বিশাল পাথুরে দেয়াল — উপরে তাকালেই মনে হয় যেন আকাশের সাথেই মুখোমুখি। পানির রং গভীর সবুজ, নিঃশব্দ পরিবেশ, শুধু ভেলার শব্দ আর পাখির ডাকে ঘেরা মুহূর্তগুলো যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য।
চোখ ও ক্যামেরায় ধরা সৌন্দর্য
আমি কিছু ছবি তুলেছিলাম — কিন্তু মনে হয় না এই অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি ক্যামেরায় ধরতে পেরেছি।
ছবিতে যেমনই দেখাক, বাস্তবের দেবতাখুম তার চেয়ে অনেক বেশি রহস্যময়, অনেক বেশি সুন্দর।
লিরাগাও বাজারে দুপুরের খাবার
দেবতাখুম যাওয়ার আগে আমরা এখানে খাবারের অর্ডার দিয়ে যাই। অইখান থেকে ঘুরে আসার পর আমরা এখানে দুপুরের খাবার খাই। খাবারের স্বাদ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলো।
লিরাগাও বাজারের একটি হোটেল যেখানে আমরা খাবার খেয়েছিলাম।
দেবতাখুমে ভ্রমণকারীদের জন্য টিপসঃ
- সেনা ক্যাম্প থেকে অনুমতি নেওয়ার জন্য অবশ্যই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি সাথে নিতে হবে। এনআইডি কার্ড না থাকলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে।
- স্থানীয় গাইড ছাড়া না যাওয়াই উত্তম - পথ কঠিন এবং জটিল।
- পানি রোধকারী মোবাইল ব্যাগ ও স্যান্ডেল নেওয়া জুরুরি। লিরাগাও বাজারেও ওয়াটার প্রুফ মোবাইল ব্যাগ পেয়ে যাবেন।
- খাবার পানি সঙ্গে রাখুন, কারণ পুরো পথ পারি দিতে পানির পিপাসা লাগবে।
- প্রকৃতি ও স্থানীয়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
শেষকথা
দেবতাখুম শুধু একটি গন্তব্য নয় — এটি একটি অনুভূতির নাম।
যারা প্রকৃতি, অ্যাডভেঞ্চার, আর নিজের সীমা ছাড়িয়ে কিছু খুঁজে পেতে ভালোবাসেন — তাদের জন্য এই জায়গাটি এক স্বর্গ।