পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সুন্দরবন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় বিস্তৃত নোনাপানির এ বন দেশের মানুষের কাছেতো প্রিয় বটেই, সারা বিশ্ব থেকেই পর্যটক আসে এ বন দেখতে। সুন্দরবনের ট্যুরিজম মূলত বোট/জাহাজ নির্ভর। অনেকের মনে ইচ্ছে থাকে এ বনের একেবারে কাছে থাকতে, কিন্তু সে সুযোগ এতদিন ছিলোনা। এবার তাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ইরাবতী ইকো রিসোর্ট ও রিসার্চ সেন্টার।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পর্যটক সুন্দরবনে ঢুকে বাগেরহাট জেলা মোংলা উপজেলা হয়ে। চাঁদপাই রেঞ্জ বলে পরিচিত বনের এ অংশে যারা একদিনের ট্রিপে আসেন তারা সাধারণত করমজল বা হাড়বাড়িয়া ঘুরে আসেন। এ মোংলার অদূরেই সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে পশ্চিম ঢাংমারীতে গোলপাতায় ঘেরা জায়গায় গড়ে উঠেছে ইরাবতী ইকো রিসোর্ট ও রিসার্চ সেন্টার। ঢাংমারীর খালটি সুন্দরবনের ইরাবতী ডলফিনের (Orcaella brevirostris) অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। খালের পারে বসে থাকলে হর-হামেশাই দেখা মিলবে লবণ পানি সহ্য করার ক্ষমতা সম্পন্ন এ ডলফিনের জলকেলি।
পুরো রিসোর্টটি তৈরী হয়েছে পানির উপরে। আর এতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ, গোলপাতা সহ সব পরিবেশ-বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত চারটি রুম আছে এ রিসোর্টটিতে। নদী ও বন দুটোই দেখা যায় এরকম দুটি রুম রয়েছে। ফুলেশ্বরী ও সুন্দরী নামের এ দুটো রুমে চারজন করে থাকা যায়, ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪,০০০ টাকা প্রতিরুম/প্রতিরাত। এছাড়া শুধুমাত্র বন দেখা যায় এরকম দুটো রুম রয়েছে, বনামালী ও ডাগর নামের এ দুটি রুমের ভাড়া প্রতিটি ৩,৫০০ টাকা। রুমগুলোতে দুটি ডাবল বেড রয়েছে যাতে চারজন করে থাকতে পারবেন।
জোয়ারের সময় রিসোর্টের নিচের অংশ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি করে অপার্থিব সৌন্দর্য। রাত নেমে আসলে বনের নীরবতা ভেদ করে শোনা যায় বিভিন্ন পাখি, জন্ত-জানোয়ারের শব্দ। এধরণের পরিবেশ সবাই পছন্দ করবেনা। তবে যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন তাদের জন্য নি:সন্দেহে দারুণ একটি জায়গা। সবচেয়ে ভালো লাগবে পূর্ণিমা রাতে এখানে থাকলে। সুন্দরবনের উপর চাঁদের আলো এক অদ্ভূত দৃশ্যের অবতারণা করে। সেই সাথে চাঁদের টানে জোয়ারের পানিও অনেক বেশি থাকে।
চাইলে রিসোর্ট থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন সুন্দরবনের কোন খাল ধরে ভেতরের দিকে। এছাড়া খুব কাছেই করমজল ও হাড়বাড়িয়া। নৌকা নিয়ে সেদিক থেকেও ঘুরে আসতে পারবেন। এখানে ডলফিন, হরিণ, বানর, উল্লুক, বন্য শুকর, নোনা পানির কুমির, সাপ সহ বিভিন্ন রকমের বন্যপ্রাণী দেখা যায়। তবে গত দশ বছরে ঢাংমারী এলাকায় কোন বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি। বর্তমানে কটকা-কচিখালী এলাকায় মাঝে মাঝে বাঘের দেখা মিলে।
রিসোর্টটি পুরোপুরি পানির উপরে নির্মিত বলে নৌকা ছাড়া এখানে যাওয়া সম্ভব না। আগে থেকে যোগাযোগ করে রাখলে মোংলা পৌছে রিসোর্টের নির্ধারিত নৌকা নিয়ে ইরাবতী রিসোর্টে যেতে পারবেন। নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২,০০০ টাকা (প্রতি পথে)। এছাড়া মোংলার ঘাটে এসে নৌকা ভাড়া করে যেতে পারবেন, খরচ কাছাকাছিই পড়বে। মোংলা পোর্ট থেকে ইরাবতী রিসোর্টে পৌছাতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টা (জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল)।
রিসোর্টটিতে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে। খিঁচুড়ি ও আচার, কিংবা পরটা-সব্জি-ডিম দিয়ে ব্রেকফাস্ট জনপ্রতি ১৫০ টাকা। আর দুপুর ও রাতের খাবার ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। স্থানীয়ভাবে ধরা মাছ দিয়ে খেলেই বেশি ভালো লাগবে। তবে সুন্দরবনে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে থাকলে মাংশের উপরই নির্ভর করতে হবে। জায়গাটা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন, তাই সঙ্গে করে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে মোংলা বেশ কয়েকটি গাড়ি চলে। পদ্মা সেতু হওয়ায় বেশির ভাগ গাড়ি পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করে। সায়েদাবাদ থেকে পর্যটক পরিবহন, কমফোর্ট পরিবহন চলে। বিএম লাইন ছাড়ে আবদুল্লাহপুর থেকে ভাড়া ৭০০ টাকা (এসি)। এছাড়া ঢাকা-খুলনার গাড়িতে উঠে খুলনা হয়ে অথবা খুলনার পথে কাটাখালী নেমে সেখান থেকে লোকাল বাসে যেতে পারবেন মোংলা। নন এসির ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকার মতো।
খরচ: রিসোর্টে পৌছাতে এবং আসতে ৪,০০০ টাকা ট্রলার ভাড়া লাগবে (২,০০০ করে প্রতি পথে), ট্রলারে সহজেই ২০ জন পর্যন্ত যেতে পারবেন। রুম ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ টাকা, এক রুমে চারজন আনায়সে থাকতে পারবেন। এর বেশি থাকলে ৫০০ টাকা জনপ্রতি দিতে হবে। খাওয়া-দাওয়া ব্রেকফাস্ট ১৫০ টাকা ও রাত/দুপুরের খাবার ৩৫০-৪০০ টাকা।