প্রিয় লোকাল গাইডস,
আশা করি সবাই চমৎকার ভালো আছেন। আজকে আমি রিসেন্টলি কন্ডাক্ট করা একটি আন্তর্জাতিক মিট-আপের চমৎকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে এসেছি। লোকাল গাইডস বাংলা কর্তৃক আয়োজিত এটি হল ২য় আন্তর্জাতিক মিট-আপ। এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১ম আন্তর্জাতিক মিট-আপ আয়োজন করা হয়েছিল।
আমরা দুই লোকাল গাইড এবং কানেক্ট মডারেটর ( @ShahMdSultan @KhokonSharker and @ShafiulB ) বেশ আগেই প্লান করেছিলাম যে, এবার রোজার ঈদের ছুটিতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ঘুরতে যাবো এবং একটা মিট-আপের আয়োজন করবো। মেঘালয় ভারতের পূর্ব রাজ্যে অবস্থিত একটি অত্যন্ত সুন্দর জায়গা। ভারী বৃষ্টিপাত, পর্বতমালা, রোদেলা দিন, উচ্চ মালভূমি, দর্শনীয় জলপ্রপাত, নদী এবং আকর্ষণীয় সমভূমি এবং অনন্য সব জায়গাগুলোর জন্য খুবই জনপ্রিয়।
১ম দিন (১২ এপ্রিল ২০২৪):
ঈদের দিন রাতে আমি ঢাকা থেকে বাসে করে ভোরবেলা সিলেটে এসে পৌছাই। আর একই দিনে খোকন ভাইও রওনা হয় বাংলাদেশ-ভারতের ডাউকি-তামাবিল বর্ডারের দিকে। সিলেট শহর থেকে এই বর্ডারে আসতে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। সিলেট থেকে ডাউকি-তামাবিল বর্ডারে আসার সময় ৩ জন (শান্ত, আহাদ, আলম) ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তারাও মেঘালয় রাজ্যে ঘুরতে যাচ্ছে। পরে আমরা ৪জন একই সাথে বর্ডারে আসি সকাল ৯টার দিকে। প্রায় ১ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের ইমিগ্রেশনে সহ অন্যান্য কাজ শেষ হয় এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করি। আমি তাদেরকে আমি গুগল মাপ্স, লোকাল গাইড এবং এই মিট-আপ সম্পর্কে জানাই।
এরপর ডাউকি বাজার থেকে মানি এক্সচেঞ্জ করে এবং শিলং শহর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য একটা ট্যাক্সি ভাড়া করা হয়। ট্যাক্সি ভাড়া এমন ভাবে করা হয়, যেন ডাউকি বাজার থেকে শিলং শহরে যাওয়ার পথে বেশ কিছু ট্যুরিস্ট পয়েন্টে ঘুরিয়ে এবং যাত্রা বিরতি দিয়ে নিয়ে যায়। ট্যাক্সি করে ডাউকি বাজার থেকে শিলং শহরে যাওয়ার সময় আমাদের দেশের জাফলং জিরো পয়েন্ট সহ অন্যান্য ভিউগুলো আমাদের বেশ মুগ্ধ করে। ট্যাক্সি ড্রাইভার ভাই আমাদেরকে Borhill Falls, Mawlynnong Cleanest Village, Living Root Bridge, Mawjngih Lapynshongdor View Point ইত্যাদি ট্যুরিস্ট পয়েন্টগুলো ঘুরিয়ে দেখায়।
Borhill Falls দেখার পর আমরা মাওলিনং গ্রামে যাই। এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে মাওলিনং গ্রাম এ খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার পরে গ্রামটি ভালো করে এক্সপ্লোর করি এবং এর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখি। সত্যিকারেই গ্রামটি অনেক সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন।
উল্লেখিত ট্যুরিস্ট পয়েন্টগুলো এক্সপ্লোর করি এবং আমরা সন্ধ্যার পরে শিলং শহরের পুলিশ বাজার পয়েন্টে এসে যাই। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ বাজারে খোকন এবং তারেক ভাইয়ের সাথে আমাদের দেখা হয়। এখন আমরা মোট ৬জনের একটা গ্রুপ। তারপরে সবাই একটা মুসলিম রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিই এবং শিলংয়ের G.S Road এ থাকার জন্য হোটেল ঠিক করে ফেলি।
২য় দিন (১৩ এপ্রিল ২০২৪):
মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং। এই রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরকে ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’ নামে ডাকা হয় এই শহরের চোখজুড়ানো পাহাড়ি দৃশ্যাবলী আর শীতল আবহাওয়ার কারণে। আবার বলা হয়ে থাকে যে, মেঘালয়ের ভৌগলিক কাঠামো অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, হিমাচল প্রদেশের শিমলা ও সিকিমের গ্যাংটকের মতো। শিলং শহর বিশেষ করে এর পুলিশ বাজার এরিয়াতে দুইদিনই বেশি রাত পর্যন্ত ঘোরাফেরা করতে পারি নাই, কারণ রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে এই শহরের রাস্তাঘাট, দোকানসহ এবং অন্যান্য সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা শেষ মুহূর্তে পুলিশ বাজারের সেরা মিষ্টির দোকান (Delhi Mistan Bhandar) থেকে সেখানের ট্র্যাডিশনাল মিষ্টান্নের স্বাদ নিয়ে নিই। এই মিষ্টান্নটির টেস্ট বেশ দারুণ ছিল।
২য় দিনে খুব ভোরে আমি আর খোকন ভাই Madina Masjid দেখতে যাই। মসজিদটি শিলংয়ের লাবানে অবস্থিত। মসজিদটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এর চমৎকার স্থাপত্য, সুউচ্চ মিনার এবং নজরকারা নকশা রয়েছে যা সকলের চোখ বিমোহিত করে। আমরা গিয়ে মসজিদের গেট খোলা পাইনি এবং বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি। খুব সম্ভবত সেই সময় সেখানে কেউ ছিল না। এর জন্য বাইরে থেকে কিছু ছবি আর ভিডিও নেওয়া হয়। পরে শিলংয়ের Police Bazar Jama Masjid এ আমরা নামাজ আদায় করি। এই মসজিদটিও অনেক চমৎকার বিশেষ করে এর প্রবেশদ্বারের কারুকাজ এবং কার্পেটের নকশা আর কালার।
সকালের নাস্তা করে আমরা সবাই শিলংয়ের বড় বাজারে এসে নিজের এবং পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করে হোটেলে ফিরে আসি। তারপর আমরা শিলংয়ের পুলিশ বাজার পয়েন্ট থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করি চেরাপুঞ্জি এবং সেভেন সিস্টার ওয়াটার ফলস দেখার জন্য। শিলং শহর থেকে চেরাপুঞ্জি প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান হিসেবে বেশ পরিচিত। এক বছরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের হিসেবে চেরাপুঞ্জি ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’এর অন্তর্ভুক্ত। চেরাপুঞ্জি হল বৃষ্টি ও ঝরনার শহর, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
আজকে ShafiulB ভাই বাংলাদেশ থেকে একই সীমান্ত দিয়ে (ডাউকি-তামাবিল) চেরাপুঞ্জিতে আসার জন্য রওনা দিয়েছেন এবং ভারতের আসাম রাজ্য থেকে @BijohnAdams ভাইয়েরও আসার কথা। কিন্তু পরে জানতে পারলাম যে, তিনি আসামের নির্বাচনের একটা দায়িত্ব পালনের জন্য আসতে পারেবেন না। আমরা দুপুরে চেরাপুঞ্জিতে পৌছাই এবং সেখানে নেমে স্থানীয় একটা রেস্টুরেন্ট থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। এরপরে এখানে কিছু ফটোগ্রাফি করে আরেকটা ট্যাক্সি ভাড়া করা হয় সেভেন সিস্টার ওয়াটার ফলস এর জন্য। ট্যাক্সিটি সেভেন সিস্টার ওয়াটার ফলস এ যাত্রা বিরতি দিবে এবং পরে শিলংয়ে গিয়ে নামিয়ে দিবে।
সেভেন সিস্টার ওয়াটার ফলস (Seven Sister Waterfalls) মেঘালয় রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দরতম একটি ঝর্ণা। একই সাথে এটি চেরাপুঞ্জির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। সাতটি অঙ্গরাজ্য থেকে পানি এসে এক সাথে মিলিত হয়ে ঝর্নার রূপ ধারণ করেছে বলেই এটি সেভেন সিস্টার ফলস নামে ডাকা হয়। বৃষ্টি হলে এর সৌন্দর্য সবাইকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে। বেশ কয়েকদিন টানা বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে আমরা কাঙ্ক্ষিত ভিউ দেখতে পাইনি। তবুও আমরা অনেক আনন্দিত এই ভেবে যে, এখানে এসে এক্সপ্লোর করতে পেরেছি এবং প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এখানে বলে রাখা ভালো যে, সঙ্গত কারণে ShafiulB ভাই এর সাথে মিট করা হয়নি। রাতে আমরা সেই মুসলিম রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিই।
পরের দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ২০২৪ (বাংলা ১ বৈশাখ) সকালে আমরা ৩জন (আমি, খোকন ভাই এবং তারেক ভাই) শিলংয়ের পুলিশ বাজার পয়েন্ট থেকে একই সীমান্ত দিয়ে সিলেট আসি। তারেক ভাই সিলেট পর্যন্ত আমাদের ভ্রমণ সঙ্গী ছিলেন এবং আমি, খোকন ভাই সিলেট থেকে বিকালের একটা ট্রেনে করে ঢাকাতে ফিরে আসি।
Photo Album: https://photos.app.goo.gl/Wc76iTUP78ohFZpE8
Google Maps List Link: https://maps.app.goo.gl/vZanvgxKQ18W6vnH9
এই আন্তর্জাতিক মিট আপটিকে সফল করার জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে এবং লোকাল গাইডস বাংলার প্রত্যেক সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। হ্যাপি গাইডিং!