আমি একজন পরিব্রাজক। দেশের যেখানেই যাই, চেষ্টা করি শুধু ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, সেই এলাকার লোকজ সংস্কৃতি, স্থানীয় বিখ্যাত খাবার, আর নদ-নদীগুলো ঘুরে দেখার। কারণ আমি বিশ্বাস করি, একটি এলাকার জীবনযাত্রা, উন্নয়ন, আর সংস্কৃতি মূলত নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে।
মানব সভ্যতার জন্মই হয়েছিল নদীর তীরে। কৃষিকাজ, বসতি গড়ে ওঠা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ—সব কিছুরই কেন্দ্রবিন্দু ছিল নদী। আজও, যতই আধুনিকতা আসুক না কেন, নদী ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। বিশেষ করে কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ চাষাবাদের জন্য নদীর পানির উপর নির্ভরশীল। হাজারো মানুষ নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। নদীপথ এখনো আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এমনকি পানীয় জলের উৎস হিসেবেও নদীর অবদান বিশাল।
আমি নিজেকে সবসময় “ব্রহ্মপুত্রের ছেলে” বলে পরিচয় দিই। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র। ছোটবেলা থেকে এর পাড়ে হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা করে বড় হয়েছি। আজও মন খারাপ হলে আমার শেষ আশ্রয় এই নদীর পার।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা নিজেরাই এই নদীগুলো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর ভাঙন বাড়ছে, ভিটেমাটি হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা ও শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে জলজ প্রাণীর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। অযাচিত বাঁধ নির্মাণ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট করছে, ফলে অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীর দুই তীর দখল হয়ে যাওয়ায় নদীর আয়তন কমছে, অনেক নদী মানচিত্র থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের মনে রাখা দরকার, নদী বাঁচলে আমরা বাঁচব। নদী হারিয়ে গেলে শুধু পানি নয়, হারিয়ে যাবে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, কৃষি, অর্থনীতি আর জীববৈচিত্র্য।
আজ বিশ্ব নদী দিবসে আমি আমার দেখা কিছু নদীর ছবি শেয়ার করছি, আর সেই সাথে সবাইকে আহ্বান জানাই—
নদী দূষণ বন্ধ করি।
নদী দখল রোধ করি।
নদীর প্রবাহ ঠিক রাখি।
নদীর জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখি।
•ব্রহ্মপুত্র নদ, ময়মনসিংহ
বনসাই নদী, টাঙ্গাইল
শীতলক্ষ্যা নদী, গাজীপুর
মহাদেব নদী, নেত্রকোণা
ধলেশ্বেরী নদী, নারায়নগঞ্জ
ঢেপা নদী, দিনাজপুর
নরসুন্দা নদী, কিশোরগঞ্জ
টাঙ্গন নদী, ঠাকুরগাঁও
ধরলা নদী, কুড়িগ্রাম
তিস্তা নদী, লালমনিরহাট
করতোয়া, পঞ্চগড়




























