ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ | Traveled to Chandpur, the home of Hilsa fish

জীবন মানেই ছুটে চলা, এদিক থেকে ওদিকে, এইখানে সেইখানে, আমরা সর্বদাই ছুটে চলি নিরন্তর। বরাবরের মত এবারো ছুটে গিয়েছিলাম ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে, উদ্দেশ্য ছিলো চরে গিয়ে ছুটাছুটি ও নদীতে গোসল করে একটা চমৎকার সময় কাটানো, ইলিশ দিয়ে দুপুরের ভুরিভোজ করা, বিকেলে বড়ষ্টেশন মোহনায় গল্পগুজব আর আড্ডাবাজি। এবারের ভ্রমণে আমাদের ট্যুরমেট ছিল ১১ জন, আর চাঁদপুর গিয়ে আরো একজন যোগ হয়ে মোট ১২ জন হই। গিয়েছিলাম ৪ অক্টোবর ২০১৮ সালে।

সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে লঞ্চে উঠি, সকালটা বেশ চমৎকার ছিলো টান্ডা টান্ডা আবহাওয়া, সকালের এই সুন্দর সময়টাকে উপভোগ করার জন্য সবাই হন্য ছয়ে লঞ্চের ছাদে চলে আসে, আমরা ছাড়াও আরো অনেক অনেক যাত্রীতে লোকারন্য হয়ে উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই। ঘন্টাখানেক বুড়িগঙ্গার চারপাশ নৌযানের ছুটাছুটি দেখে আমরা কজন বসে যাই কার্ড খেলতে। ৯ টার পর থেকেই রোদের উকিঝুকি লঞ্চের ছাদের উপরে থাকা মানুষদের একটু জ্বালাচ্ছিল। আমরা ছিলাম নাছোরবান্দা গরম উপেক্ষা করেই ছাদের উপর কার্ড খেলায় মনযোগী ছিলাম।

সকাল ১০টা ৩০ এর দিকে আমরা সবাই চাঁদপুর টার্মিনালে এসে পৌছাই। নাস্তা সেড়েই ট্রলার ভাড়া করে চলে যাই চরে। মোহনার উত্তাল পাতাল ঢেউয়ে আমারা সবাই শিহরিত এবং পুলকিত হই। ঘন্টা খানেক চরে ডুবাডুবি করে আবার ফিরে আসি বড়ষ্টেশন। দুপুরের ভোজন সারতে চলে যাই চাঁদপুর শহরে। ইলিশ খাবার ইচ্ছে নিয়ে গেলেও কোন এক কারণে আমাদের কাচ্চি বিরিয়ানী খেতে হলো। খেয়ে দেয়ে আবার বড়ষ্টেশন এসে সন্ধ্যা অবধি উপভোগ করি মোহনার রুপ সৌন্দর্য্য। বিকেল বেলা এই জায়গাটি হাজারো মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিং এই জায়গাটি।

এই চাঁদপুর ভ্রমণের পুরোটা সময় আমাদের মাতিয়ে রেখেছেন ট্যুরমেট জাহিদ হাসান, টিমে এইরকম একজন থাকলেই হয়। আর চাঁদপুরে আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন চাঁদপুর নিবাসী বাবু ভাই, সব ব্যাপারে আমাদের সর্বাত্বক সহায়তা করেছেন। চাঁদপুর গেলেই বেচারাকে আমরা খুব জ্বালাই। এই ভ্রমণের আয়োজক, আহবায়ক, অরগানাইজার ছিলো আমাদের শাকিল। স্পেশাল থ্যাংকস শাকিল, মাসে দুই তিনটা এরকম ট্রিপের আয়োজন চাই আরো। আমাদের সময় সীমিত ছিলো, দিনে দিনেই ঢাকা ফেরার অভিপ্রায় নিয়ে এসেছিলাম। তাই সন্ধ্যা ৬ টায় আবার ফিরে আসি লঞ্চ টার্মিনালে, এই সন্ধ্যা থেকে ঢাকা আসা পর্যন্ত লঞ্চে বাকিটা সময় ছিলো আরো বেশি উপভোগ্য। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১ টার মধ্যে আমরা ফিরে আসি ঢাকায়। এভাবেই শেষ হয় আরেকটি স্মৃতিময় ভ্রমণের।

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাদপুরগামী যেকোন লঞ্চে। ভাড়া চেয়ারে বসে গেলে ১৫০/- টাকা, আর নরমাল লঞ্চের ভেতর দাঁড়িয়ে, হেটে, ছাদে বসে গেলে ১০০/- টাকা। আর কেবিন নিয়ে গেলে ৫০০/- থেকে ৮০০/- টাকা লাগে। তবে আমার সাজেশন হলো কেবিন বা চেয়ার কোনটাই নেবার দরকার নেই। এতে আপানার টাকাও বাচলো আবার পুরো সময়টা লঞ্চে উপভোগ করতে পারবেন।

সতর্কতাঃ যারা সাতার জানেন না তারা চরে ডুবাডুবি বা সাতার কাটতে চাইলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাবেন বা ওইখান থেকে সংগ্রহ করে নেবেন। আর অবশ্যই অপচনশীল দ্রব্য নদীতে ফেলবেন না। পরিবেশ ও প্রকৃতি পরিচ্ছন্ন রাখাই সত্যিকারের ট্রাভেলার এর পরিচয়। হ্যাপি ট্রাভেলিং

15 Likes