ফুকেটের অফবিট প্লেস -
আজকের যাত্রা ফুকেট থেকে রাত্রীকালীন বাসযোগে ব্যাংকক। তবে সারাদিনটা কাটবে ফুকেটের কিছু ভিন্ন জায়গায়, যেখানে সাধারণত পর্যটক কম যায়। সকাল ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, হোটেল চেক আউট করলাম। তারপর থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় সুপারশপ থেকে কিছু রেডি টু কুক খাবার কিনে নাস্তা সেরে নিলাম। এদিকে সকাল সকাল ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাজির - থাইল্যান্ডে কর্মরত সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও চমৎকার ভ্রমণপ্রিয় একজন - " তৌকির ভাই " তিনি আজকে সরাটা দিন আমাদের অচেনা অদেখা ফুকেট দেখাবেন। স্পেশালি অনেক অনেক ধন্যবাদ Towkir Ahmed ভাইকে। উনার আতিথিয়তা বেশ দারুন ছিল।
হোটেল থেকে বের হয়ে পতং রোড ধরে সামনের দিকে যাচ্ছি, রবিবার বন্ধের দিন হলেও রাস্তার মোটামুটি জ্যাম ছিল। কিছুদুর যেতেই শুরু হল পাহাড়ি পথ। সবুজ প্রকৃতি সেই সাথে নীল সমুদ্র, এক দৃষ্টিনন্দন মৈত্রী সৌন্দর্য যেন অভাবনীয়।
আকাবাকা পথে, কোথাও নেই কোন হর্ণ বা কোনো খট্টর খট্টর শব্দ। নিশ্চুপ প্রকৃতির নিদারুন ছোয়া। কোথাও পাহাড়ি ছোট্ট ছোট্ট শহর, আবার কোথাও ঘন জঙ্গল।
শান্ত বিস্তৃর্ণ কারন বীচ দেখে, চলে এলাম কারন ভিউ পয়েন্টে। যেখান থেকে বলা চলে পুরো পাটং এলাকার এরিয়াল ভিউ, পাহাড় থেকে সমৃদ্র দর্শণ, চমৎকার পরিসেবা এই ভিউ পয়েন্টে।
পরবর্তী গন্তব্য কাটা বীচ। ছোট্ট এই বীচটি সাজিয়েছে বিভিন্ন এডভেঞ্চার এক্টিভিটির মাধ্যমে। বেনানা বোট, প্যারাস্যাইলিং, সার্ফিং সহ আরো অনেক অনেক এক্টেভিটি। এই বীচকে বলা হয় ফ্যামিলি বীচ। বেশিরভাগ ফ্যামিলি পর্যটকেরা এই বীচে বেশি ভির জমায়। ছোট ছোট বাচ্চা বেশি আনন্দ পায় এই বীচে। বীচের পাড় থেকে প্রায় ৩০০-৫০০ মিটার দূরে ওয়েভ কন্ট্রোল বাধ নির্মাণ থাকায় এই বীচে তেমন ডেউ নেই। এবং নির্দিষ্ট এরিয়াতে মার্ক করা আছে যেখানে বাচ্চারা সাতার কাটতে পারবে।
সেখান থেকে বের হয়ে চলে এলাম মিলেনিয়ার/বিলেনিয়ারদের প্রিয় নাইহার্ন বীচে। এখানে বাকি সকল এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি এক্সপেন্সিভ। কারন এখানে সেইসব শ্রেণীর মানুষরাই আসে এবং রাত্রীযাপন করে যারা মিলেনিয়ার/বিলেনিয়ার।
এই বীচে আবার ভিন্ন চিত্র, বিভিন্ন এডভ্যাঞ্চার এক্টিভিটির সাথে আরেকটা বিশেষ ব্যাপার সেটা হলো “প্রাইভেট বোট”। ফাইভ স্টার মানের বোট গুলো ভাড়া আসতে পারে সল্প সময়ের জন্য কয়েক হাজার ডলার। এক কথায় বলা চলে একটি ভাসমান কটেজ। বিলাশবহুল এই বোটের বিশাল বহর দেখা গেল এখানে। এই বীচের একপাশে পাহাড়, নারিকেল বাগান ও বীচের পাড়ে ঝাউ বাগান এবং নির্জন প্রকৃতি। হয়তো এই জন্যই এই বীচে এত বিলাশিতা।
নাইহার্ন বীচ ঘুরে এবার যাচ্ছি উইন্ডমিল ভিউ পয়েন্ট, যেটা ফুকেটের একদম শেষ প্রান্তে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্ত দেখার জন্য বিকেল থেকেই প্রচুর ভীড় জমে যায়। কারণ থাইল্যান্ডে সবচেয়ে সুন্দর সূর্যাস্ত পয়েন্টের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্থান।
পাহাড়ের উপর থেকে নিচের সমুদ্র এতটাই মনোমুগ্ধকর লাগছে যে, এখানে বসেই গোটা একটা দিন কাটানো সম্ভব। এর মধ্যে এখানে ঘটে আবহাওয়ার পরিবর্তনের খেলা। কখনও মেঘ, তারপর বৃষ্টি, আর বৃষ্টি শেষে রংধনুর সাত রঙে রাঙ্গিয়ে উকি মারে সূর্য। মুহুর্তেই এরূপ পরিবর্তন দেখা যায় প্রতিনিয়ত। প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখার জন্য এখানে ভিউ পর্যেন্টে সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেই সাথে রয়েছে প্যারাগ্লাইডিং, তবে আবহাওয়া কারনে বিশেষ কিছু কিছু সময়ে বন্ধ থাকে।
এই জায়গা গুলোতে সচরাচর পর্যটক তেমনভাবে যাওয়া আসা হয় না। যারা একান্তই প্রকৃতির সান্নিদ্ধে কাটাতে চায়, তারা এই স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন।
©KaziSharif
Google Maps Link : -
Link 1 : Google Maps
Link 2 : Google Maps
Link 3 : Google Maps
Link 4 : Google Maps