“এরাবিয়ান ফুড” শব্দটা যদি কেউ আমার সামনে উচ্চারণ করে, তাহলে সেদিন না হোক, পরের দিন ঠিকই সেটা খেতে হবে! ছোটবেলা থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বড় হওয়ার সুবাদে নানা রকম এরাবিয়ান খাবারের প্রতি আমার অগাধ ভালোবাসা জন্মেছে। শাওয়ারমা, চিকেন মানদি/কাবসা, ল্যাম্ব মানদি/কাবসা, এরাবিয়ান ও তুর্কি সালাদ, কাবাব, হামুস- সহ আরও কত ধরনের খাবার যে আমার প্রিয়!
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এরাবিয়ান ও তুর্কি রেস্তোরাঁর অভাব নেই। Tarbush, Ya Hala, Al-Amar, Hadramawt Kitchen , Al-Halabi—এমন বহু রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে আমি একেক সময় একেকটিতে খেতে যাই। কিছুদিন আগেই গিয়েছিলাম Tarbush Gourmet Restaurant-এ। এটার অনেকগুলো শাখা আছে, কিন্তু আমরা গিয়েছিলাম JW Marriott-এর Tarbush Restaurant, যা তাদের UG ফ্লোরে অবস্থিত।
সেই বিশেষ দিনের গল্প
আমার স্কুলের এক বন্ধু একদিন বলল,
— “দোস্ত, চলো এরাবিয়ান ফুড খেতে যাই। পাভেল ভাই, জারজিস ভাই সবাই সহ। কোন রেস্টুরেন্টে যাব, সেটা পাভেল ভাই ঠিক করবে। কারণ,@PavelSarwar একজন ভোজনরসিক মানুষ!”
যেই কথা, সেই কাজ! সবার পাভেল ভাই বেছে নিলেন Tarbush Restaurant। সেদিন ছিল শনিবার, মানে সবার ছুটির দিন। আমরা চারজন গেলাম সেখানে, আর গিয়ে জমিয়ে খেলাম!
আমাদের মেনু
যেসব দাম মনে আছে সেগুলো লিখে দিলাম।
ল্যাম্ব মানদি (১ প্লেট – ১০২ রিঙ্গিত, ২ জনের জন্য যথেষ্ট)
চিকেন মানদি (১ প্লেট – ৯৮ রিঙ্গিত, ২ জনের জন্য যথেষ্ট)
শাওয়ারমা চিকেন প্লেট (৬০ রিঙ্গিত, ২-৩ জনের জন্য যথেষ্ট)
চিকেন টিক্কা কাবাব (৬০ রিঙ্গিত, ৩-৪ জন ভাগ করে খেতে পারে)
পমফ্রেট ফিশ ফ্রাই (১টা মাছ – ৯৮ রিঙ্গিত, ৩-৪ জনের জন্য যথেষ্ট)
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
এরাবিয়ান স্পেশাল সালাদ (১ বোল – ৩০ রিঙ্গিত)
তরমুজের জুস (৩০ রিঙ্গিত, একদম ফ্রেশ, আমি বরাবরই No Sugar, No Ice বলে দেই)
কোক (প্রতি ক্যান ১২ রিঙ্গিত)
আদানি চা (এক পাত্রে ছোট ছোট কাপ, ৭-৮ কাপ হয়)
কেন আমি Tarbush পছন্দ করি?
এই রেস্তোরাঁর খাবার সত্যিই অসাধারণ! মানদি হোক ল্যাম্ব বা চিকেন—এটার গোশত এত নরম যে মুখে দিলেই গলে যায়। হামুস আর রুটি একসাথে খাওয়া এক অন্যরকম স্বাদ এনে দেয়। এরাবিয়ান খাবার তো খাওয়া হলো, সঙ্গে জমে উঠল গল্পও! ছবি তোলা, গুগল ম্যাপে রিভিউ লেখা, ছবি আপলোড করা—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম আনন্দময় সময় কাটালাম সবাই।
Tarbush-এর পরিবেশও দারুণ! রেস্টুরেন্টটি একদম এরাবিয়ান স্টাইলে সাজানো। এখানে দুটি অংশ—একটি Non-Hookah Zone, যেখানে আমরা বসেছিলাম, আরেকটি Hookah-Friendly Zone। এখানকার ডেজার্ট আইটেমগুলোও দুর্দান্ত, কিন্তু এত খাবার খেয়ে পেটে আর জায়গা ছিল না! তবে মালয়েশিয়ার রেস্টুরেন্টগুলোতে Take Away এর সুবিধা থাকায়, খাবার শেষ করতে না পারলে সুন্দরভাবে প্যাক করে দিয়ে দেয়। খাবার নষ্ট করা আমার ভালো লাগে না, তাই প্রায়ই Take Away নিয়ে আসি।
Tarbush – একটু দামি, কিন্তু দারুণ!
Tarbush-এর খাবার সত্যিই সুস্বাদু, তবে একটু এক্সপেন্সিভ। সম্প্রতি ওরা TRX Tower-এ নতুন একটি শাখা খুলেছে, সেখানেও একদিন খেতে গিয়েছিলাম।
তবে JW Marriott-এর এই Tarbush আমাদের কাছে স্পেশাল, কারণ এটি Pavilion Bukit Bintang-এর কাছেই, এবং গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে- প্রায় রাত ২টা পর্যন্ত, তবে খাবারের অর্ডার দেওয়ার শেষ সময় রাত ১১টার মধ্যে। তাই যখনই আমাদের কোনো বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের কেউ কুয়ালালামপুরে ঘুরতে আসে, সারাদিন ঘুরে বেড়ানো-শপিং করার পর রাত ১০-১১টার দিকে এখানে চলে আসি। এরপর জমে ওঠে এরাবিয়ান খাবার, এরাবিয়ান আলো, এরাবিয়ান মিউজিক আর গভীর রাত পর্যন্ত গল্প-আড্ডা!
Bukit Bintang থেকে হেঁটেই Tarbush-এ যাওয়া যায়, লোকেশন একদম সহজ এবং Accessibility-Friendly। তাই যদি কখনো মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসেন, এরাবিয়ান খাবারের স্বাদ নিতে Tarbush-এ একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন!