একদিনে সুন্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে

।সুন্দরবন নামটাই একটা মাধুর্যতা নিয়ে আসে সুন্দরে আবহমান এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, বাংলাদেশের গৌরব, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এই অসাধারণ স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করে। সুন্দরবন ভ্রমণ মানে হলো প্রকৃতির কোলে বিচরণ, বিরল প্রাণীদের দেখা, এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার সঞ্চয়।

আমারা চার জনের একটা টিম নিয়ে রওনা দেই ঢাকা টু খুলনার মংলা সমুদ্র বন্দর সেখানে থেকে একটা ট্রলারে করে যাত্রা শুরু সুন্দরবনের উদ্দেশ্য। পশুর নদী দিয়ে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে প্যারানোমিক ভিউ দেখেরা মাধ্যমেই যাত্রা চলছে গন্তব্য সুন্দরবনের করমজল। ট্রলারে থেকে নামার সময় সুন্দর বনের বানরগুলো একে একে আমাদের স্বাগত জানিয়ে সাদরেই গ্রহণ করে নিলো । এরপর টিকিট সংগ্রহ করে ম্যাপরুট ব্যবহার করে বনের ভেতরে প্রবেশ শুরু করলাম কুমির প্রজনন কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার, হরিণ দেখার পরেই সুন্দরবনের প্রবেশের ট্রেই দিয়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে যাত্রা শুরু করলাম ভেতরের দিকে যদিও বনবিভাগের কিছু নির্দেশনা রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য সেই সকল নিয়ম মেনে চলতে শুরু করলাম। প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার রাস্তা পারি দিয়ে আমরা চলে আসি মোটামুটি গভীর বনের সন্ধানে ।

সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।। সুন্দরবনের প্রধান গাছপালার মধ্যে অন্যতম সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু, লতা সুন্দরী, কেওড়া, ধুন্দুল, আমুর, ছৈলা, ওড়া, কাঁকরা, সিংরা, ঝানা, খলশি ইত্যাদি। কিন্তু সুন্দরবনের নামের সমার্থক হিসেবে যে তরুটি জড়িয়ে আছে, সেটি সুন্দরীগাছ। সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান। সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত। যদি ভাগ্য সঙ্গে থাকে, তাহলে আপনি বাঘকে দেখার সুযোগ পেতে পারেন। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। সুন্দরবনে নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জলে রয়েছে কুমির, হাঙর প্রভৃতি। স্থলে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, সজারু, শেয়াল, নানা ধরনের পাখি, মৌমাছি, বন মোরগ ইত্যাদি।

আমরা চার জন ট্রেইল থেকে নেমে শ্বাসমূলের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম আশেপাশে ছোট ছোট মাছ গুইসাপ, অজগরের বাচ্চা ও অন্যান্য সাপের সাথে সাক্ষাৎ চলছেই। ভেতরে চলাচল করার সময় লাল কাঁকড়ার ও অন্যান্য কাঁকড়া দেখতে পেলাম । ক্রমেই ভেতরের দিকে চলার সময় বিভিন্ন গাছের সাথে নিজেদের পরিচয় করতে থাকলাম। চলাচল করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হয় যদি না কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে না হয় । সুন্দরবনের বনবাসীদের জীবনযাত্রা দেখে আপনি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। জেলেদের মাছ ধরা, মৌয়ালদের মধু সংগ্রহ করা, গাছের পাতা সংগ্রহ করা ইত্যাদি এভাবেই দিন কেটে যায় এখানকার মানুষের এই সবকিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জনতে হলে আপনাকে অবশ্যই সুন্দরবনে আসতে হবে। সুন্দরবনে আসার উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতের সময় এসময় বনের ভেতর পানি তুলনামূলক কম থাকে ডাঙ্গার দৃশ্য ভালো ভাবে দেতে পারা যায়। এই সকল দৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের ফেরার সময় চলে আসে যেহেতু আমরা একদিনের জন্য সুন্দরবনের দৃশ্য উপভোগের জন্য গিয়েছিলাম। আমাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে জানাত ভুলবেন না ধন্যবাদ।

11 Likes