শিল্পের দেশ বাংলাদেশ। নানানরকম শিল্প সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই চলছে দেশ।
এর মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ন শিল্পের নাম মৃৎশিল্প।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হল মৃৎশিল্প।
মৃৎ শব্দের অর্থ মাটি, মাটির এই শিল্পকে মৃৎশিল্প বলে।
আমাদের উপমহাদেশে সর্বপ্রথম মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা সভ্যতায় এই শিল্পের নিদর্শন পাওয়া যায়।
মৃৎশিল্প প্রধানত একটি হিন্দুয়ানি কারুশিল্প।
এটা ওদের বংশগত পেশা নতুন করে অন্য পেশার মানুষকে এ পেশায় নামতে দেখা যায় না।
মৃৎশিল্পীদের কে কুমোর বা কুমার বলা হয়।
আদিকালে কুমোরেরা গাড়ির চাকার মতো চাকা বিশেষ কায়দায় বসিয়ে চাকা ঘুড়িয়ে মাটির আসবাবপত্র বানানো হতো কিন্ত বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়ায় সেগুলোর ব্যাবহারের উন্নতি হয়েছে তারা সেখানে বৈদ্যুতিক মোটরের ব্যাবহার করছে ।
মোটরচালিত চাকতি।
চাকতির মধ্যে সামান্য জায়গা থাকে যেখানে কাদা মাটির দলা বা তাল বসানো হয়, সেখানে বসানোর পরে চাকতি মোটরের সাহায্যে ঘোরানো হয় এবং কুমোরের নিপুণ হাত দিয়ে কাদার উপর ঢেউ খেলিয়ে তৈরি করে নানান রকম জিনিসপত্র।
যেমন :- মাটির পাতিল,কলসি, সানকি,মালশা,ছোট ছোট হাঁড়ি, কড়াই, কলস, পুতুল, ঘোড়া ইত্যাদি। নানা রঙে সজানো। ফুল ও নকশা আঁকা। পুজো কিংবা বৈশাখী মেলায় কুমোরদের তৈরি রংবেরঙের খেলনা পাওয়া যায়।
এছাড়াও আরো অনেক ধরনের নকশাকৃত সৌন্দর্যবর্ধক তৈজসপত্র তৈরি করা হয়।
মাটির তৈরি বাসন
মাটির তৈরি জালা
মাটির তৈরি পুতুল।
পূজার জন্য বানানো জিনিস।
প্রক্রিয়া :- কুমারেরা প্রথমে এটেল মাটি সংগ্রহ করে পাহাড়ের মত করে রেখে দেয়, অনেকদিন রেখে মাটির রস/পানি কিছুটা শুকানোর জন্য।
মাটির স্তুপ।
মাটি থেকে পানির মাত্রা কমে এলে সেখান থেকে কারিগরেরা প্রয়োজন মত মাটি নিয়ে প্রসেসিং করে নরম বানিয়ে চাকতীর উপর বসানো হয়।
চাকতির উপরে বসানো দন্ড।
চাকতির মধ্যে সামান্য জায়গা থাকে যেখানে কাদা মাটির দলা বা তাল বসানো হয়, সেখানে বসানোর পরে চাকতি মোটরের সাহায্যে ঘোরানো হয় এবং কুমোরের নিপুণ হাত দিয়ে কাদার উপর ঢেউ খেলিয়ে তৈরি করে নানান রকম জিনিসপত্র।
একজন কুমার মনোযোগ সহকারে তার কাজ করছেন।
যেমন :- মাটির হাড়ি, পাতিল,কলসি, সানকি,মালশা ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো অনেক ধরনের নকশাকৃত সৌন্দর্যবর্ধক তৈজসপত্র তৈরি করা হয়।
জিনিসপত্র তৈরি করার পরে এগুলোকে শক্ত করার জন্য রোদে শুকাতে হয় দুই থেকে তিন দিন। শুকানোর পরে এটার রং সাদা আকৃতির হয়ে যায়।
শুকাতে দেয়া জিনিসপত্রের পাশে বসে বাংলাদেশ লোকালগাইডসের সদস্য @KhanSayfullah
শুকিয়ে শক্ত হওয়ার পরে সেগুলোকে আগুনে পোড়ানোর জন্য বিশেষ আকৃতির বড় চুলার উপরে সাজানো হয়।
সেক্ষেত্রে একসাথে অনেকগুলো পাত্র সাজিয়ে পাঁচ ফুটের মত উচু এবং ছয় ফুটের মত চওড়া গোলাকার করে সাজানো হয়।
পোড়ানোর জন্য সাজানো হচ্ছে
সাজানোর পরে সেগুলোর উপর দিয়ে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়,সম্পুর্ণরুপে ঢেকে দেয়ার পরে তার উপর দিয়ে মোটা করে কাদার প্রলেপ দেয়া হয়।
পোড়ানো হচ্ছে।
এরপর স্তুপের নিচের গুহার মত চুলায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত আগুনে পোড়ানো হতে থাকে জিনিসগুলো।
পরিপূর্ণ পোড়ানো হলে সেগুলো লাল বর্ণ ধারণ করে।
পোড়ানো হয়ে যাওয়ার পরে।
নষ্ট হয়ে যাওয়া হাড়ি,বাটি।
এরপর সে গুলোকে চুলা থেকে বের করে বাজারজাতকরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
এরপর বিভিন্ন হাটে,মেলায় বা দোকানে সেগুলো বিক্রি করা হয় এমনকি নকশাকৃত জিনিসগুলো দেশের বাহিরের অনেকগুলো দেশে রপ্তানি করা হয়।
এগুলো স্ব চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল গত জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প কেন্দ্রে।
প্লাস্টিক এবং স্টিলের জিনিস গুলো বর্তমানে খুবসুরত এবং টেকসই অপরদিকে মাটির তৈরি জিনিস গুলো সামান্য আঘাতে ভেঙ্গে যায় যার কারণে এগুলোর ব্যবহার দিনাদিন অনেক কমে যাচ্ছে ।
সেই সাথে তাদের জীবিকার উপর বিরাট প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমাদের সকলের উচিত এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা।
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
পোস্ট পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পোস্ট পড়ে কেমন লাগলো মন্তব্যে জানিয়ে দিন।
#Bdlg #bdlg #banladeshlocalguides #art #9yearsofbangladeshlocalguides #localguidesconnect