অনেকেই হয়ত চিনেন না, আসলে এটা কি??
ফলের নামঃ- মাকনা বা মাখনা,
বৈজ্ঞানিক নামঃ- Euryale ferox
পরিবারঃ - Nymphaeaceae.
একটি জলজ ফল। পুরোন ঢাকার অনেকের কাছে খুব প্রিয়। এটি পাকা মাখনা। যখন কচি থাকে তখনও এটি খাওয়া যায়।
মাখনা ফল
এই ফলের বাইরের অংশ কাঁটাযুক্ত। ভিতের ফল ছোলার দানার মত। স্বাদও কাঁচা ছোলার স্বাদের।
ফুলের পাপড়ি ঝরে গেলে রয়ে যায় কাপ আকৃতির ফল। এর ভেতরে ছোট ছোট বিচি ; খোসা ছাড়িয়ে মিষ্টি স্বাদের এই মাখনা।
সবার প্রিয় ফুচকাতে মাখনা ব্যবহার হয়, ফুচকা ভাল ফুলে ও মচমচে হয়।
পানিতে জন্মে, বাংলাদেশে এমন ফুলগুলোর সৌন্দর্য ডাঙ্গার ফুলগুলো থেকে একটু অন্যরকম। বিভিন্ন রকমের শাপলা, শালুক, পদ্ম, কিম্বা চাঁদমালা ফুলগুলো দেখলেই সেটা স্পষ্টতই বোঝা যায়। এগুলো শহরে দূর্লভ হলেও গ্রামে গেলে পুকুর, খাল, বিলে এখনো দেখতে পাওয়া যায়। খালে, বিলেও কম দেখতে পাওয়া যায় এমন একটি ফুলের নাম মাখনা।
মাখনাকে কাটাঁপদ্ম, মাকানা, কাটাঁমাখনা নামেও ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Euryale ferox.
মাকনা ফুল
কাটাঁযুক্ত শালুকের মত উদ্ভিদ যার শিকড় ও কন্দ পানির নিচে মাটিতে সন্নিবিষ্ট থাকে। পাতা প্রায় গোলাকার, পানির উপরে ভেসে থাকে। কাটাঁযুক্ত পাতার উপরের রং সবুজ। কাটাঁ আছে ডাটার সাথেও। ফুলগুলো ১-২ ইঞ্চি লম্বা, ভিতের উজ্জ্বল লাল রং, বাইরের দিকে সবুজ ও উজ্জ্বল বেগুনি রংয়ের। ফল গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির। প্রতিটি ফলে ২০ টি পর্যন্ত বীজ থাকে। বীজ দেখতে মটরের মত।
মাখনা বীজ
মাখনা আমাদের দেশে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ এর বিল, ঝিলে পাওয়া যায়। পাওয়া যায় মৌলভিবাজার ও নওগার কিছু এলাকায়ও। ভারত, বার্মা, চীন, জাপান, কোরিয়ায় জন্মে এ জলজ উদ্ভিদ।
আমাদের দেশি গাছ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে এর তেমন কদর নেই। চীন, জাপান, বার্মা,কোরিয়া ভারতেও জন্মে এ জলজ উদ্ভিদ, চাষ ও করা হয় মাখনা । চীনে ৩০০০ বছর যাবৎ মাখনা চাষের রেকর্ড আছে।
মুলত বীজ খাওয়া হয়। বীজে প্রচুর পরিমান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, মিনারেল আছে। বীজের ক্যালোরিক ভ্যালু বেশি (৩.৬২ কিলোক্যালোরি/গ্রাম)।
সুস্বাদু খেতে মাখনার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফসফরাস।
মাখনার বীজ ডায়রিয়া, ব্যাথা, কিডনির সমস্যা, লিউকোরিয়া সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কার্ডিওপ্রটেকটিভ এ্যাকটিভিটি বৈঙ্গানিকভাবে প্রমাণিত।
মাখনার ফুল ফোটে মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যে।
মাখনা ফল ও বীজ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। আমাজন লিলির পর এটির পাতা দ্বিতীয় বৃহৎ ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই মাখনা গাছ বা উদ্ভিদ নির্বিচারে নিধন করার দরুন এটা এখন দূর্লভ হয়ে গেছে !
মাখনা এক প্রকারের জলজ ওষুধি উদ্ভিদ। ওষুধি গুণসম্পন্ন এই উদ্ভিদের বীজ শারীরিক বলবর্ধক এবং কামোত্তেজক। পাতা বাত রোগের জন্য উপকারী।
খাবার কৌশল হল, কাঁটাযুক্ত ওপরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরে বাদামের মতো কোয়া অংশগুলোকে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। ফলটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ফ্যাট, প্রোটিন এবং খনিজ লবণ রয়েছে।
পুরান ঢাকার বাবু বাজার, নয়া বাজার,
রায় সাহেব বাজার, বংশাল, ইসলামপুর, নবাব কাটারা, বড়কাটরা, ছোটকাটরার বিভিন্ন স্থানে প্রতি পিস মাখনা ফল আকারভেদে ১০/২০/৩০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে।