এক পলকে মনে হবে, লাল শাপলার কোনো চাদর।চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত “লাল স্বর্গ”। পুরো বিলজুড়ে বিছানো শাপলা। তাই গ্রামটির নামই হয়ে গেছে ‘শাপলা বিল’। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রুপসী বাংলার এই রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে। বিলের দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা পাতায় ভরা বিলে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিলটির আকার প্রায় ২০০ একর। বিলে তিন ধরনের শাপলা জন্মে—লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের। তবে লাল শাপলাই বেশি। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলে শাপলা ফোটে। বিলের যতো ভেতরে এগুতে যাবেন ততোই লালের আধিক্য। এক পর্যায়ে মনে হবে শাপলার রাজ্যে বন্দি হয়ে আছেন আপনি।ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন।শাপলার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফারদের কাছে সাতলা একটি আদর্শ জায়গা।এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন চিত্র। ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’।আর শিগগিরই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারনা।
তাছাড়া শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্য্য নয় , সবজি হিসেবে ও এখন বেশ জনপ্রিয়। ভিন্ন স্বাদের এই খাবার সবজি বাঙালী খাবার হিসেবে জুড়ি নেই। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই এলাকার কয়েক শ’ পরিবার। এখানে ডিসেম্বর মাসে শুরুর দিকে শীতের মৌসুমে যখন পানি কমে যায় তখন সব শাপলা মরে যায়। ওই সময় কৃষকরা এখানে ধান চাষ করেন। তবে একই সাথে ধান ও শাপলার এই সহাবস্থান আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ
সাধারণত আগস্টের থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ৩ মাস এখানে শাপলা ফুটে। বছরের এই মাসগুলোতে শাপলা গ্রাম সাতলা গেলে হাজারো শাপলা দেখতে পাবেন। আর শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে কারণ বেলা গড়ানোর সাথে সাথে শাপলা ফুল বুজে যায় কিংবা শাপলা ফুল ব্যবসাহীরা ফুল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় এক রাত গ্রামে থেকে ভোরে শাপলা বিলে চলে গেলে।
বরিশাল থেকে বাসে শিকারপুর এসে অটো ভাড়া করে সাতলা যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বাসে বরিশাল যাওয়ার সময় উজিরপুরের নুতনহাট বাস থেকে নেমে সেখান থেকেও সরাসরি অটো করে সাতলা শাপলা বিল দেখতে যেতে পারবেন। কিংবা বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিসে ২ ঘন্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। এছাড়াও বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে চড়েও ঘুরে আসতে পারবেন শাপলা গ্রাম সাতলা হতে।