সবাইকে বিশ্ব ঐতিহ্য সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
দুর্গাপূজা বাঙ্গালী হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রাচীনকাল থেকেই মাতৃবন্দনার, অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির বিজয় উদযাপন করে আসছে এ জনপদের মানুষ। তবে এবার এই উৎসবের উৎসাহ উদ্দীপনা ব্যাপক। কারণ দুর্গাপূজাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে "UNITED NATIONS EDUCATIONAL, SCIENTIFIC AND CULTURAL ORGANIZATION" বা UNESCO.
এ যেন বাঙালির মুকুটে নতুন পালক, আমাদের একান্ত আপন দুর্গাপূজা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে গতবছর ডিসেম্বরেই তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অফ ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের তালিকায় স্থান দিয়েছে বাংলা ভাষাভাষীদের সবচেয়ে বড় উৎসবকে।
ইউনেস্কো কর্তা এরিকের কথায়, ‘‘দুর্গাপূজা হলো একুশ শতকের আদর্শ উৎসব। এর আসল জোর সামাজিক বন্ধন ও সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টায়।’’ এরিকের ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্বে সবাইকে সমান ভাবে নিয়ে চলার চেষ্টায় ইউনেস্কোর নির্দিষ্ট করা উন্নয়নের সুস্থায়ী লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল্স) সঙ্গে দুর্গাপূজা তাল মিলিয়ে চলছে।’’
“দুর্গাপূজা” কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, এটি আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই পূজার রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বিশাল ইম্প্যাক্ট। পূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সেজে ওঠে অভিনবরূপে।
এটি বাঙালীর প্রাণের উৎসব, দুর্গোৎসব। পূজা উপলক্ষেই বাঙালী বহু আকাঙ্ক্ষিত ছুটি পায়। হয় পারিবারিক বা বন্ধুত্বের মিলনমেলা। দেখা যায় অনেক না দেখা মুখ। প্রকাশিত হয় পূজাবার্ষিকী, রিলিজ হয় নতুন সিনেমা। গ্রামেগঞ্জে মেলা বসে। পূজার প্যান্ডেল দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় পুরো এলাকা। পুজোকে কেন্দ্র করে যেই অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের আয়োজন হয় সেটার সাথে সংযুক্ত একদম অজ পাড়াগাঁয়ের মানুষ থেকে শহুরে এলিট শ্রেণী, রুট লেভেল থেকে আপার লেভেলের সবাই।
বাংলার মৃৎশিল্পী, চিত্রশিল্পী, ঢাকি থেকে শুরু করে পুজোসংখ্যায় লেখা ছাপা হওয়া সদ্য নবীন লেখক সবারই কর্মসংস্থান হয় পুজোতে।
ডেকোরেশনের বাঁশ বা অঞ্জলির ফুল… সাজ সজ্জার জোগানে ঘর চলে অনেকের, পুজোর কটা দিনে অনেকে বেলুন বেচে, খাবার বেচে, খেলনা বেচে, ফুল বেচে, মেলায় বাহারী পণ্যের পসরা সাজিয়ে নিজের সংসার চালায়। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে মিষ্টির দোকানী, বাস/কার থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা সবার আয়ের অবারিত উন্মুক্ত দ্বার দুর্গাপূজা। আর এই বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলিম সকলেই এই আনন্দ আয়োজনের সুফল ভোগ করে।
দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক গুরুত্ব লিখতে গেলে বিশাল প্রবন্ধ লিখতে হবে। তাইতো দুর্গাপূজাকে বলা হয় সর্বজনীন দুর্গোৎসব!
বরাবরের মতোই এবারও দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ লোকাল গাইড আয়োজন করে “Durgapuja Photo-walk 2022”
শারদীয় দুর্গাপূজা পুরান ঢাকায় বেশ জাঁকজমকভাবে উদযাপিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার বাংলাদেশ লোকাল গাইড আয়োজিত ফটোওয়াকে বৃষ্টির কারণে পুরনো লোকাল গাইডরা আসতে না পারলেও ছিলেন বেশ কিছু নতুন মুখ। আপকামিং লোকাল গাইড।
তাদের নিয়ে ঘুরে দেখলাম এলাকার পূজামণ্ডপ গুলো, ঘুরে দেখলাম পূজা উপলক্ষে বসা মেলা। ছিল হালকা খাওয়া দাওয়া। বিশেষত লাড্ডু। লাড্ডু হচ্ছে দুর্গাপূজার ট্রেডমার্ক সুইট।
বিজয়া দশমীর দিনে শেষ হয় চারদিন ধরে চলা শারদীয় দুর্গাপূজা। এদিন সবাই মিলে একসাথে হওয়া, সকল দ্বন্দ্ব বৈরিতা ভুলে সকলে আলিঙ্গন করা, বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা হয়।
তারপর দেবী প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
শুরু হয় আগামী বছরের জন্য প্রতীক্ষা।
দুর্গাপূজার উদযাপন আয়োজন এক নজরে দেখতে দেখতে পারেন নিম্নোক্ত ভিডিও টি