বাদাম টানা/Peanut Bar, গুড়ের তৈরি।
টাংগাইল জেলার চাপড়ী গ্রামে আমার জন্ম। এক সময় চাপড়ী বাজারের খুব নাম-ডাক ছিল। গ্রামের মানুষের লাগে এমন প্রায় সকল জিনিসই এই বাজারে পাওয়া যেত। সোমবার ও শুক্রবার সপ্তায় দুই দিন হাট বসে এখানে। সোমবারের হাট অনেক বড় হতো। আশেপাশের কয়েক ইউনিয়নের মানুষ এই হাটে আসত সাপ্তাহিক বাজার করতে। চাপড়ী বাজার থেকে আমাদের বাড়ী প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোমবারে হাটে মানুষের এত সমাগম হত যে হাটের গমগম শব্দ আমাদের বাড়ী থেকে শুনা যেত। আর আমরা ছোটরা হাটের শব্দ শুনে বলতাম হাটে মানুষের সাথে জিন ও এসেছে তাই এত শব্দ হচ্ছে। সন্ধ্যার সাথে সাথে হাটের শব্দ কমতে থাকত আর বাড়তে থাকত আমাদের অপেক্ষার। কখন আমাদের কাজের লোকটি হাট থেকে সদাই নিয়ে ফিরবে। সপ্তাহের দুই দিন আমরা অধীর অপেক্ষায় থাকতাম কারণ সদাইয়ের সাথে সাথে আমাদের জন্য হাট থেকে কিছু খাবারও কিনতেন বাবা যেগুলো তখন শুধু হাট বারেই পাওয়া যেত। সময়ের সাথে চলতে গিয়ে চাপড়ী বাজার থেকে এখন অনেক দূরে চলে এসেছি কিন্ত সেই সকল খাবারের কথা বা স্বাদ সবই এখনো খুব মনে আছে। এখানে সেখানে সেই খাবারগুলো দেখলেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। খাবারগুলো বাংলাদেশের/ পশ্চিমবংগের (ভারত) প্রায় সকল লোকাল গাইডরাই চিনবেন আশা করি তবে নাম হয়ত আলাদা হবে কিন্ত স্বাদ, গন্ধ, প্রস্তুত প্রনালী এক রকমই হবে। এই পোস্টে উল্লেখ করা সব গুলো খাবারই মিষ্টি জাতীয় এবং একটা ছাড়া সবগুলোতে গুড় ব্যবহার করা হয়েছে।
[ I have created a photo album where you can upload the photo of your childhood snacks]
বাদাম টানা/Peanut Bar:
ছেলেবেলার খাবারগুলোর মধ্যে বাদাম টানাই একমাত্র খাবার যেটা এখনো আমি প্রচুর খাই। শুধু আমি না আমাদের বাসার সবাই খুব পছন্দ করে। বাড়ীতে গেলে এখনো চাপড়ী বাজার থেকে অনেক বাদাম দেওয়া বাদাম টানা কিনে আনি। বাদাম টানা গুড় এবং চিনি দুধরনের হলেও গুড়েরটাই আমার বেশি পছন্দের।
জিলাপি/Jalebi:
[ Jalebi ]
জিলাপি জিনিসটা এখনকার মত সবসময় পাওয়া যেত না। মূলত বর্ষাকালেই খাওয়ার সৌভাগ্য হতো আমাদের। তখন গুড়ের জিলাপি বেশি হতো। চিনির জিলাপির দাম বেশি ছিল। জিলাপি দিয়ে দুধভাতের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে যেন।
রস গজা/ Juicy Goja:
[ Juicy Goja ]
জিলাপির মত রস গজাও অনেকটা সময় ভিত্তিক ছিল। বিশেষত ধান কাটার সময় এবং পরে বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত বেশি পাওয়া যেত। খুজলে অন্য সময়ও পাওয়া যেত। এটা মূলত চিনি দিয়েই বেশি বানানো হয়। গুড়ের খুব কম দেখেছি বা দেখি নাই। রস গজা দিয়ে দুধ ভাত বা মুড়ি খেতে এখনো বেশ ভালো লাগে আমার।
মুরালি/Murali:
[ মুরালি/Murali: ]
রস গজার মত মুরালিও বৈশাখি খাবার ছিল। তবে এটা প্রায়ই পাওয়া যেত। মুরালিও গুড় এবং চিনি দুভাবেই বানানো যায়। হাতে মুরালির বাটি নিয়ে অলস সময় খুব সহজেই পার করা যেত। যে লোক গজা বানাত সেই মুরালি বানাত। কাজেই একজনের কাছেই দুটো পাওয়া যেত।
তিল টানা/ Sesame Bar:
[ তিল টানা/ Sesame Bar: ]
বাদাম টানার মত তিল টানাও খুব পছন্দের একটা খাবার ছিল তখন। বাবা যদি এক হাটে বাদাম টানা আনত তাহলে অন্য হাটে হয়ত তিল টানা আনত আমাদের রুচি পরিবর্তনের জন্য। তিল টানা শুধু গুড় দিয়েই হয়। চিনির তিল টানা আমি কখনো খাই নাই।
তিলের মোয়া/Sesame ball:
[ তিলের মোয়া/Sesame ball: ]
তিলের মোয়া খুব বেশি খাওয়া হতো না তবে মজার কোন ঘাটতি ছিল না। যেদিন তিলের মোয়া আনত সেদিন আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা হত। অবশ্য শেষে গুনেগুনে সবাই সমান নিয়ে ঝামেলা মেটাতাম। গাড়ীতে বসে টপাটপ কয়েকটা তিলের মোয়া মুখে দিতে এখনো অনেক ভালো লাগে।
মুড়ির মোয়া/ Puffed rice ball:
[ মুড়ির মোয়া/ Puffed rice ball: ]
মুড়ির মোয়া বাজার থেকে খুব একটা কেনা হত না। কারণ আমরা বাজারেরে মুড়ির মোয়ার চেয়ে বাড়ীতে বানানো মুড়ির মোয়া বেশি পছন্দ করতাম। এখনো আমাদের বাসায় প্রায় মুড়ির মোয়া বানানো হয়। মুড়ির মোয়া সাধারণত গুড় দিয়ে বানানো হয়। চিনির মুড়ির মোয়া খুব একটা খাই নাই। তবে আছে।
চালের মোয়া/ Rice ball:
[ চালের মোয়া/ Rice ball: ]
চালের মোয়া হাট থেকে কেনা হতো না। তবে কখনো বাবা হাট থেকে আমাদের জন্য ভুলে কোন খাবার না কিনে পাঠালে মা আমাদেরকে সান্তনা দেওয়ার জন্য চালের মোয়া বানাত। চালের মোয়ার মজাও কিন্ত খারাপ না। খুব মচমচে আর মিষ্টি। তবে আপনার দাঁতে সমস্যা থাকলে না খাওয়াই উত্তম, দাঁত পড়ে যেতে পারে, বেশ শক্ত এটা। তবে আমাদের সময় বাজারে চিড়ার মোয়া ছিল না, আমাদের চাপড়ী বাজারে ছিল না।
মিষ্টি ভুট্টার খৈ/ Sweet Popcorn:
[ মিষ্টি ভুট্টার খৈ/ Sweet Popcorn: ]
এই জিনিসটা খেতে আমরা খুব একটা পছন্দ করতাম না কারণ এটা খেলে আমাদের মুখের তালুর চামড়া ছিড়ে যেত আর তরকারি খেলে তখন খুব ঝাল লাগত। তারপরেও বাবা মাঝে মাঝে মিষ্টি ভুট্টার খৈ আমাদের জন্য কিনে পাঠাত। এখনো বাসায় পপকর্ণ কিনে এটা বানানো হয় মাঝে মাঝে।
[ I have created a photo album where you can upload the photo of your childhood snacks]
গ্রামে থাকার কারণে এই খাবারগুলো যারা বানাতো তাদেরকে খুব কাছে থেকে দেখেছি আমি। কাজেই আপনার যদি মনে হয় এখানকার কোন খাবারটা কীভাবে বানায় তাহলে আমি উপায়টা বলে দিতে পারব। তবে সেটা কোন রেসিপি না। উপকরনের পরিমাণগুলো আপনাকেই ঠিক করতে হবে। ধন্যবাদ।