প্রিয় লোকাল গাইডস, ঈদ মুবারক!
পুরনো স্থাপনা বিশেষ করে মসজিদ, রাজবাড়ি, জমিদারবাড়ি, এবং অন্যান্য হেরিটেজ সাইট ঘুরে দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর বলতে গেলে আমি তো, “অদেখা এবং প্রাচীনকে খুঁজে বেড়াই”। আর এবার ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম ফরিদপুর জেলায়।
মাসখানেক আগে এই জেলার মধুখালী উপজেলায় তিনটি ঐতিহাসিক মসজিদের তথ্য পাই এবং ঈদের পরের দিন বেরিয়ে যাই সেই পুরনো মসজিদগুলো দেখতে। আর রাতে খেতে যাই রাজবাড়ী জেলার সাহা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে মিষ্টির স্বাদ নিতে। এখন আমি ঈদ আর ভ্রমণের আনন্দের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যাচ্ছি-
- বনমালিদিয়া মাজার জামে মসজিদ
- নদীয়া বাজারকান্দী শাহী জামে মসজিদ
- পশ্চিম গাড়াখোলা শাহী জামে মসজিদ
- সাহা মিষ্টান্ন ভান্ডার
এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি হিজরি ১২৪৯, অর্থাৎ ১৮৩৩ সালে নির্মিত হয়। শাহ হাবীব মর্দানে খোদা জামে মসজিদ বা বনমালিদিয়া জামে মসজিদ বা আলী আফজাল মসজিদ নামেও পরিচিত। এর নির্মাণকাজ মূলত চুন-সুরকি দিয়ে করা হয়েছিল। মসজিদের তিনটি দরজা রয়েছে, মাঝখানে মূল দরজা এবং দুই পাশে আরও দুটি দরজা।
মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর গম্বুজভিত্তিক স্থাপত্য, যা এর আবহাওয়া গরমকালে কিছুটা শীতল এবং শীতকালে আরামদায়ক পরিবেশ বজায় থাকে। প্রায় ২০০ বছর আগে যারা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তারা অনেক চিন্তা ভাবনা করেই যে নির্মাণকৌশল ব্যবহার করেছিলেন তা সত্যিই আশ্চর্যজনক।
মসজিদটির উত্তর পাশে একটি পুকুর রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, এটি মসজিদের নির্মাণের সময়ই খনন করা হয়েছিল এবং তখন থেকে এটি মসজিদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই পুকুরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার কথাও প্রচলিত রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের কাছেই রয়েছে মাজার শরীফ (হজরত শাহ্ সুফি সৈয়দ হাবিবুল্লাহ মার্দানে খোদা), কাচারি বাড়ি যা খুব সম্ভবত সৈয়দ সেরাজুল আলমের (চাঁদ মিঞা) এবং কবরস্থান।
নদীয়া বাজারকান্দী শাহী জামে মসজিদ
মসজিদটি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার নদীয়া বাজারকান্দী গ্রামে অবস্থিত। এটি বনমালিদিয়া মাজার জামে মসজিদের প্রায় ১.৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং মধুখালী রেল স্টেশনের প্রায় ১.৭ কিলোমিটার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো। নামাজের স্থানের সামনে মাঝবরাবর দেয়ালে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ এবং উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালের মাঝখানে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য খিলানযুক্ত জানালাও রয়েছে। মসজিদের মিহরাবটি টাইলস দিয়ে সংস্কার করা। মসজিদের পুরোনো অংশের সাথে সংযুক্ত রেখে এটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, যাতে আরও মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
পশ্চিম গাড়াখোলা শাহী জামে মসজিদ
এই মসজিদ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তেমন কোনো ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসীদের মতে, মসজিদটি প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো। পুরো মসজিদটি সাদা ও নীল টাইলস দিয়ে ব্যাপকভাবে সংস্কার করায় এর মূল স্থাপত্যশৈলীর প্রায় সব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেছে। তবে মসজিদের অভ্যন্তরে গেলে পুরোনো ঐতিহ্যের ছাপ কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
মসজিদের পূর্বদিকে শাহ্ জাকি (রঃ)-এর মাজার শরীফ রয়েছে। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না, তবে ধারণা করা হয় যে তিনিই এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
পুরোনো আর ঐতিহাসিক তিনটি মসজিদ দেখার পর রাতে চলে যাই রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামের সাহা মিষ্টান্ন ভান্ডারে। প্রায় ৮০ বা ৮৫ বছরের পুরোনো এই মিষ্টির দোকানের সিগনেচার আইটেম হল সন্দেশ, মালাই কারী ইত্যাদি।
দেশ-বিদেশের বহু লোক এখান থেকে মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। তাদের সিলেক্টেড কাস্টমার রয়েছে, তাই তারা বেশি মিষ্টি তৈরি করেন না। আমি সন্দেশ, মালাই কারী, দই খেয়েছিলাম। সবগুলো আইটেমই চমৎকার ছিল। দামে এবং মানে ভালো, এই মিষ্টির দোকান সত্যিই তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
বলা যায়, এবারের ঈদ আনন্দের পাশাপাশি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য মিশ্রণ হয়ে থাকলো আমার জন্য। ফরিদপুরের এই ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখা সত্যিই একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল।
#EidMubarak #HappyTraveling #HappyGuiding