শুভেচ্ছা সবাইকে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য মালয়েশিয়া সরকার ০৭ সেপ্টেম্বার থেকে ২৩টি দেশের নাগরিকদের ( যাদের দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা আছে ) তাদের মালয়েশিয়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। আমি গত ০৬ সেপ্টেম্বের মালয়েশিয়া এসেছি বাংলাদেশ থেকে। তাই অনেকই আমার কাছে আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জানতে চেয়ছেন ও জানতে চাচ্ছেন। তাই আমার এই লেখায় আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। হয়ত ভবিষ্যতে যারা আসবেন তাদের এই অভিজ্ঞতাটি কাজে লাগতে পারে।
তো প্রথম থেকেই শুরু করা যাক। আমি বেশ কয়েকমাস আগে বাংলাদেশে যাই একটি ব্যাক্তিগত কাজে খুব অল্প সময়ের জন্য। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার কারনে ও মালয়েশিয়াতে নিয়মের বাধ্যবাধকতার জন্য মালয়েশিয়া ফেরত আসা বারবার পিছাচ্ছিল। যখন মালয়েশিয়া ঘোষণা দিল যে আমরা মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে Travel Authorization নিয়ে ফেরত আসত পারব। Travel Authorization এর জন্য আবেদন করতে কনফার্ম এয়ারটিকেট লাগব। যেহেতু আমার রিটার্ন টিকেট US Bangla Airline এ ছিল তাই সেই টিকেট আর কাজে লাগে নাই, কারন তখনও তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি হয় নাই। বাধ্য হয়ে Malindo Air এ খুবই চড়াদামে টিকেট কেটে Travel Authorization এর জন্য আপ্লাই করলাম। বলা ছিল ২১ কার্যদিবস লাগবে, কিন্তু লেগে গেল ২৮ কার্যদিবস। আমি Travel Authorization পেলাম ১৩ আগষ্ট বিকালে কিন্তু আমার ভিসার মেয়াদ শেষ ১৬ আগষ্ট।
এর মধ্যে নতুন নিয়ম মালয়েশিয়া হাইকমিশন ঢাকা থেকে Travel Notice নিতে হবে, সময় লাগবে ৩ কার্যদিবস। আমি ইমেইল করলাম, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেল, কিন্তু ইমেইলের কোন রিপ্লাই নাই। ২য় দফা আবার টিকেট পরিবর্তন করলাম ২ সেপ্টেম্বার। হাইকমিশনের হটলাইনে কল দিলে ইমেইল করতে বলে শুধু। এরই মধ্যে আমাদের মালয়েশিয়াতে আমাদের প্রাবসী টেক কমিউনিটি কোড রেন্টের মাধ্যমে সিমিলার কেইজ একজনের সাথে পরিচয় হল। ওনার অভিজ্ঞতা ও গাইড লাইন আমার ব্যপক কাজে লাগল। আংকের পরামর্শ অনুযায়ী [ VERY EMERGENCY] ইমেইলের সাবজেক্ট দিয়ে অফিস আওয়ারে ইমেইল করলাম। রাতেই মধ্যেই রিপ্লাই চলে আসল Malaysia Visa One Stop Center এ যোগাযোগ করতে ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ইমেইল করলে। MVOSC কে ইমেইল করার পরের দিন কল দিয়ে জানাল ০১ সেপ্টম্বার পর্যন্ত হাইকমিশন বন্ধ তাই আমি যেন ২ সেপ্টেম্বার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সকাল ১০টার মধ্যে উপস্থিত হই।
এরই মধ্যে পায়ের অপারেশন করলাম ৩০ তারিখ। পায়ে প্লাস্টার ও ৬ টা সেলাই সহই ২ তারিখ গেলাম MVOSC এ। গিয়ে ভিসা আবেদন করলাম। তারা জানাল ১০ দিন লাগবে ভিসা হতে। বাসায় আসতে না আসতে নতুন নিউজ যে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বর্ডার ক্লোজ হচ্ছে আবার। বলে রাখা ভাল এরই মধ্যে মালয়েশিয়া হাইকমিশন ঢাকায় এক কর্মকর্তার সাথে ব্যাক্তিগত যোগাযোগ ছিল। ৩ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি ম্যাসেজ দিলেন আমার ভিসা হয়ে গেছে, বিকাল ৪.৩০ এর মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। করোনার জন্য ড্রাইবার ছুটি আমার পায়ে প্লাস্টার, ৩.৩০ দিকে ড্রাইবার কে নিয়ে রওনা দিলাম বারিধারা কল্যাণপুর থেকে। ভেজাল হল ৪ টার মধ্যে ব্যাংক ড্রাফ করতে হবে। ৩.৫৬ তে ট্রাস্ট ব্যংকে গেলাম। ট্রাষ্ট ব্যংকে আমার একাউন্ট না থাকায় বাধ্য হয়ে রেফারেন্স ব্যবহার করে ব্যাংক ড্রাফ করে বারিধারা গেলাম বিকাল ৪.৪০ এ। ধন্যবাদ MVOSC পরিচিত কর্মকর্তা থাকায় ভিসা নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
এবার দরকার Travel Notice. বাসায় এসে LOU তা পুরুন করে হাইকমিশনে ইমেইল করলাম। ভয় ছিল যদি রিপ্লাই না দেয়, তাই মনে মনে ভেবে রাখলাম, যদি এইবার মালয়েশিয়া যেতে না পারি তাহলে টিকেট কেটে USA চলে যাব। ভাগ্যে মালয়েশিয়া ছিল তাই ১০ মিনিটের মধ্যে Travel Notice চলে আসল। এইবার আবার টিকেট কাটলাম AirAsia তে ৬ সেপ্টেম্বর এর।
পায়ের প্লাষ্টার খোলার জন্য শনিবার সকালে গেলাম ডাক্তারের কাছে। ঘরের মানুষ হলে উপকার বেশি। রাতেই Medical Certificate রেডি করে সকালে OT তে গিয়ে প্লাষ্টার রিমোভ করে দ্রুত কিছু শপিং করে নিলাম। ধন্যবাদ Dr. @BahauddinS কে দ্রুত সেবা দেয়ার জন্য।
বাসায় আসার পর AirAsia এর পোর্টালে Flight Status Search দিয়ে দেখি Ops No Flight. তারাতারি করে AirAsia তে কল দিলাম। বলল যাত্রী তেমন নেই। কিন্তু আপনি রাত ৯.৩০ এর মধ্যে এয়ারপোর্ট চলে যাবেন। টিক সময়ের মধ্যে এয়ারপোর্ট গেলাম। আমাকে বিদায় জানতে @SumaiyaZafrin ও @JashiaNoshin এয়ারপোর্টে আসল। কিন্তু যাত্রী ছাড়া আর কাউকে এয়ারপোর্ট এর ভিতরে যেতে দিচ্ছিল না। তাই টেম্পারেচার মেপে আমি একাই ভিতরে গেলাম।
বোডিং পাস নিলাম, কিন্তু ঝামেলা শুরু হল COVID-19 Certificate নিয়ে। মালয়েশিয়া এর জন্য COVID-test not required থাকায় আমি আর টেস্ট করাই নাই। এই মধ্যে আমাকে করোনা সার্টিফিকেট না থাকায় ইনিগ্রেশনে যেতেই দিচ্ছে না। আসলাম সাস্থ মন্ত্রণালয়ের ডেক্সে, ওখানে যিনি বসে আছেন তিনি জানালেন ওনি আমার কাছ থেকেই প্রথম জেনেছেন যে মালয়েশিয়া যেতে করোনা টেষ্ট লাগে না। তাই তিনি কিছু করতে পারবেন না।
ভাগ্য ভাল আবার আমার স্ত্রী এর কাজিনের ডিউটি ছিল এয়ারপোর্টে। ওনি খুঁজে ডিজি হেলথের একজন ডাক্তারকে নিয়ে আসলেন। ডাক্তারকে Malaysia High Commission এর SOP দেখানো পর তিনি আমাকে ইমিগ্রেশনের গেইটে নিয়ে গেলেন। কিন্তু তাদের এককথা আমাদের কাছে এমন নির্দেশনা নাই। পরে ডাক্তার আমাকে ক্লিয়ারেন্স লিখে দেয়ার পর ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটে বসলাম। ইমিগ্রেশন অফিসার খুব মজার মানুষ ছিলে। এতোক্ষন এয়ারপোর্টে যে হেঁসেল গেলা তা ওনার ব্যবহারে ভুলে গেলাম। আর তারাহুরায় হুইল চেয়ারও নিতে ভুলে গেলাম। পায়ের এই অবস্থা নিয়েই বিমান পর্যন্ত গেলাম। যাত্রী আমরা ১৯ জন। ফ্লাইট খুব আরামদায়ক ছিল।
ভোর ৬.৩০ এ KLIA2 তে নামলাম। নামার সাথে সাথে MySejahtera App দিয়ে চেকইন করে COVID-test করতে গেলাম। চমৎকার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। টেস্টের ফি ২৫০ রিঙ্গিত। টেষ্ট শেষে হলকা নাস্তা দিল। তার পর ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শেষে হোটেলের উদ্যেশে রওনা দিল। KLIA2 থেকে হোটেল পর্যন্ত আসার মধ্যে বেশ কয়েকবার QR Code scan করে তথ্য দিতে হল।
হোটেল কে আই পি - আসার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চেক ইন করলাম। ১৪ দিনের জন্য ১৯৬০ রিঙ্গিত জমা দিলাম। পায়ের সমস্যার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তারকে অবহিত করলাম। খাবারের রেস্ট্রিকশান গুলো ইনফর্ম করলাম। রুমে এসে দিয়ে গেল। হোটেল সার্ভিস অনেক ভাল, শুধু রুমের বাইরে যাওয়া যাবে না, আর বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে পারবেন না। তিন বেলা খাবার দিয়ে যাচ্ছে, ৭ দিন এর জন্য পানি, বেড শীট, টয়লেট্রিস সব রুমে দেয়া আছে। নিয়মিত খুঁজখবর নিচ্ছে। ১৫ তারিখ পায়ের সেলাই খুলে দিবে। কোরেন্টাইন এর গল্প আরেকটা পোষ্টে লিখব।
ধন্যবাদ সবাইকে ধর্য্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য।।