হ্যালো লোকাল গাইডস! আশা করছি সবাই বেশ ভালো আছেন। নানাবিদ ব্যস্ততার কারণে গুগল ম্যাপসে এবং কানেক্ট ফোরামে আর তেমন একটা বিচরণ করতে পারি না। অনেকদিন পর আজ আবার আমার একটা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লেখা এবং ছবি নিয়ে হাজির হয়েছি। সম্প্রতি অফিসিয়াল কাজে বেশ কয়েকবার কুষ্টিয়া যাওয়া হয়েছে, অফিসিয়াল ভ্রমণ হলেও #গুগল লোকাল গাইডরা সব সময় সব জায়গায় নতুন কিছু অন্বেষণ করে বেড়ায়। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। কাজের ফাকে ফাকে ঘুরেছি বেশ কিছু জায়গায়, দেখেছি নানা কিছু। তারই কিছু সংক্ষেপ বিবরণ এবং ছবি আজকে তুলে ধরবো।
কুষ্টিয়ার বিচিত্র শহর ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে তার অবারিত আকর্ষণ এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সাথে। এ শহরটি শিল্প ও শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পরিচিত, কুষ্টিয়া বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে, যা কৌতূহলী পথিক কিংবা স্থানীয় গাইডের জন্য ইতিহাসের ভান্ডার। এই শহরে যে অগণিত আনন্দের উৎস রয়েছে তা উন্মোচন করার জন্য আমি চেষ্টা করেছি।
ঢাকা থেকে আমরা মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হয়ে রাজবাড়ি জেলার উপড় দিয়ে কুষ্টিয়া পৌছাই। ফেরী পারাপারের সময় পদ্মা নদীর সৌন্দর্য আমার দৃষ্টি আকর্ষন করে। বিস্তৃত এ নদী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি নদী। পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন জীবিকা, এবং বিস্তৃত নদীর অপার সৌন্দর্য্য আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।
কুষ্টিয়া এলজিইডি অফিস — পরিপাটি, সবুজ আর সুশৃঙ্খল অফিস
রাতে আমরা থেকেছি কুষ্টিয়া এলজিইডি রেষ্ট হাউজে, অনেক সুন্দর একটি স্থান, চারপাশে নির্জন আর গাছ গাছালিতে পূর্ণ চারপাশ। কুষ্টিয়া জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) অফিসটি কেবল একটি সরকারি দপ্তর নয়, বরং এটি পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা ও সবুজায়নের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত।
প্রবেশদ্বারেই চোখে পড়ে সুপরিসর ও নির্মল পরিবেশ। মসৃণ কালো পিচঢালা রাস্তাটি দুই পাশে সাজানো সারি সারি ফুল গাছ ও সামনে প্রসস্ত বাগান ও সবুজ গাছপালায় ভরপুর। এই সাজানো গোছানো পথ যেন অতিথিদের স্বাগত জানায় এক শুদ্ধ প্রশান্তিতে।
পুরো অফিস চত্বরের চারপাশে বড় বড় ছায়াদানকারী গাছগুলো শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং কর্মব্যস্ত একটি অফিসকে রাখে ঠান্ডা, ছায়াঘেরা ও পরিবেশবান্ধব। পাতা ঝরার শব্দ, হালকা বাতাস আর গাছের ছায়া মিলেমিশে এখানে তৈরি করে মনোরম আবহ। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন শীতকাল ছিলো তার পরেও সকালে হঠাৎ বৃষ্টি এসে এক অন্যরকম মহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
কুষ্টিয়া এলজিইডি দপ্তর শুধু উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার নিজস্ব প্রাঙ্গণেও সেই উন্নয়নের ছাপ দৃশ্যমান। এটি সকল সরকারি দপ্তরের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ।
স্বাদের ছোঁয়া, শিল্পের গন্ধে ভরপুর এক শান্ত ঘরোয়া ঠিকানা, পিপাসু রেস্টুরেন্ট
কুষ্টিয়া শহরের ব্যস্ততার ভেতর যদি একটু নিরিবিলি, আরামদায়ক ও চোখ জুড়ানো জায়গা খুঁজে থাকেন, তাহলে পিপাসু রেস্টুরেন্ট-আপনাকে আসতে হবে। একবার গেলেই আপনি বলবেন—"এই জায়গাটা তো কেবল খাওয়ার জন্য না, মন ভালো করার জন্যও!
প্রবেশপথে ঢুকতেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন একটি পরিবেশ—দেয়ালে ঝোলানো অসাধারণ সব শিল্পকর্ম, যার প্রতিটিতেই আছে রঙের খেলা, ভাবনার ছাপ, আর শিল্পীর ছোঁয়া। মাঝখানে দুই পাখির একটি জ্যামিতিক আর্ট আপনার নজর কাড়বেই। সূর্যাস্তের রঙে রাঙানো গাছপালা ও পাহাড়ের কল্পনাজগত—আর দেয়ালজুড়ে রঙিন ক্যানভাস। যেন খাবারের সাথে একটা ভিজ্যুয়াল ফিলও পেয়ে গেলেন!
সাধারণ কাঠের ফ্রেমিং আর সফট লাইটিং মিলে রেস্টুরেন্টটি তৈরি করেছে এক ধরণের ঘরোয়া উষ্ণতা, যেখানে আপনি আরাম করে বসে চা খেতে পারেন, কিংবা সন্ধ্যার নাস্তা কিংবা রাতের জম্পেশ খাবার উপভোগ করতে পারেন বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনদের সঙ্গে। পিপাসু রেস্টুরেন্ট শুধু সুন্দর নয়, খাবারের মানেও সমানভাবে যত্নবান। এখানকার মেনুগুলোতে স্থানীয় স্বাদ ও আধুনিক স্টাইলের সুন্দর সংমিশ্রণ আছে। প্রতিটি খাবারই পরিবেশিত হয় পরিপাটি ভাবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে। ছোটখাটো গেট টুগেদার হোক বা অফিসের কলিগদের সাথে লাঞ্চ—এই জায়গাটা যে কারো জন্য আদর্শ।
কুষ্টিয়ার সন্ধ্যা: চায়ের কাপ আর স্ট্রিট ফুডের জমজমাট আড্ডা
সন্ধ্যা নামলেই কুষ্টিয়া যেন জেগে ওঠে এক নতুন রূপে। দিনভর কর্মব্যস্ত শহরটা সন্ধ্যায় হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, প্রাণখোলা আড্ডার এক চেনা ঠিকানা। আর এই আড্ডার মাঝখানে যে বসে থাকে নির্ভরতার মতো, সে হচ্ছে এক কাপ গরম ধোঁয়া উঠা দুধ চা। শহরের মোড়, কলেজ রোড, নিউমার্কেট কিংবা কোর্টপাড়ার চায়ের দোকানগুলো সন্ধ্যায় হয়ে ওঠে যেন খোলা বাতাসের ক্যাফে। কিছু চেয়ারে বসে, কেউবা দাঁড়িয়ে—আড্ডার ঝাঁপি খুলে সবাই মিশে যায় রাজনীতি, ক্রিকেট, সিনেমা আর প্রেম-বিরহের কথায়। চায়ের কাপ এক হাতে, অন্য হাতে মোবাইল, কিন্তু মন পড়ে থাকে গল্পের স্রোতে।
অফিসিয়াল কাজে যাবার কারণে সময় অনেক কম ছিলো, তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আরো অনেক কিছুই দেখতে পারিনি, লালন শাহের মাজার, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, আরো অনেক কিছুই। আবার কোন একদিন আসার অভিপ্রায় নিয়ে বিদায় নিলাম কুষ্টিয়া থেকে।