ক্যাপশন: বরিশাল শহরে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের চারটি ফটোর একটি Collage
প্রিয় লোকাল গাইড বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন।
আমি আজকে বরিশাল শহরের কিছু দর্শনীয় স্থান এবং খাবার নিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আর আপনারা যখন ভবিষ্যতে বরিশাল ভ্রমণে আসবেন তখন এই তথ্যগুলো আপনাদের খুব সহায়ক হবে বলে আমি আশা করছি।
ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বরিশাল বিভাগের অবস্থান। বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র বরিশালই হচ্ছে নদীমাতৃক বিভাগ যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা-খাল-বিল।
কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে বরিশাল শহরের অবস্থান।
বরিশাল জেলার অন্তর্গত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতায় মধ্যে এবং বরিশালে সিটি কর্পোরেশনের আওতার বাইরে রয়েছে অনেক দৃষ্টিনন্দন এবং প্রাচীন স্থাপত্য।
আমি এই পোস্টটি দুইটি ভাগে ভাগ করব, প্রথমে ভাগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন আওতার মধ্যে যে টুরিস্ট ডেস্টিনেশন রয়েছে সেগুলো আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এবং দ্বিতীয়ভাগে আমি আপনাদেরকে শেয়ার করব বরিশাল জেলার অন্তর্গত আশেপাশের কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য।
বরিশাল সিটি আওতাধীন দর্শনীয় স্থানগুলো নিচে শেয়ার করা হলো:
ক্যাপশন: শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য এবং নিচে লেখা রয়েছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান
বরিশাল শহর কেন্দ্রিক দর্শনীয় স্থানের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই যে স্থানটির কথা আসে সেটা হল বঙ্গবন্ধু উদ্যান/বেলস পার্ক।
বরিশালের সুন্দরতম স্থান গুলির মধ্যে একটি। সুবিশাল একটি খেলার মাঠ, হাঁটার পথ, হেলিপ্যাড, এই উদ্যানটির চারপাশ জুড়ে রয়েছে প্রচুর গাছপালা, দর্শনার্থীদের জন্য মাঠের চারপাশ জুড়ে রয়েছে ছোট ছোট বেঞ্চ এবং পশ্চিম পুকুর রয়েছে ওই পুকুরটি বঙ্গবন্ধু উদ্যান এর সৌন্দর্য আরো অনেক অংশে বৃদ্ধি করে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেলাধুলা আয়োজন, বিভিন্ন ধরনের মেলা এবং কনসার্ট এই মাঠে আয়োজন করা হয়।
এখানে প্রবেশ করতে কোন টিকিট এর প্রয়োজন হয় না।
ক্যাপশন: বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দক্ষিণ কর্নার থেকে ক্যাপচার করা সম্পূর্ন মাঠের একটি দৃশ্য
বেলস পার্কে আসবেন কিভাবে:
আপনি যদি লঞ্চে আসেন তাহলে লঞ্চে থেকে নেমে হেঁটে বেলস পার্কে আসতে পারবে, অন্যথায় আপনি একটি রিকশায় চড়েও মাত্র 20 টাকা ভাড়া দিয়ে খুব সহজে বেলস পার্কে পৌছাতে পারবেন। আর যদি আপনি বাসে আসেন তাহলে নতুল্লাবাদ থেকে আপনাকে একটি রিকশায় চড়ে 50 থেকে 60 টাকা ভাড়া দিয়ে বেলস পার্কে আসতে হবে।
কীর্তনখোলা নদীর তীরে এর অবস্থান।
এটি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে সুন্দরত্ম একটি স্থান।
30 গোডাউন একটি রিভার ভিউ পার্ক বলা যায় এবং এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ সৃতি স্তম্ভ রয়েছে।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে আনন্দ ও সৌন্দর্য নিতে এখানে আসেন বিকাল বেলা। প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে বিভিন্ন বয়সের মানুষজন এখানে আসেন।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতে শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গাগুলির মধ্যে 30 গোডাউন একটি।
এখানে প্রবেশ করতে কোন টিকিট এর প্রয়োজন হয় না।
30 গোডাউন আসবেন কিভাবে:
লঞ্চঘাট থেকে ত্রিশ গোডাউন পর্যন্ত রিকশা ভাড়া 30 থেকে 40 টাকা আর নতুল্লাবাদ থেকে 70 থেকে 80 টাকা রিকশা ভাড়া।
ক্যাপশন: কীর্তনখোলা নদীর মাঝ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পার্কের একটি দৃশ্য
মুক্তিযুদ্ধ পার্ক বরিশাল এর ভিতরে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে এখানে মানুষের সমাগম ঘটে সকালে বিশেষ করে মানুষজন হাঁটতে আসে এবং বিকালে মানুষজন এখানে অবসর সময় কাটাতে এবং পরিবার পরিজনদের সাথে কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত কাটানোর জন্য এখানে আসেন।
এখানে প্রবেশ করতে কোন টিকিট এর প্রয়োজন হয় না।
ক্যাপশন: মুক্তিযুদ্ধ পার্কের একটি দৃশ্য যেখানে নদী, কিছু গাছ, বসার স্থান এবং ওয়াক ওয়ে দৃশ্যমান
মুক্তিযুদ্ধ পার্কে কিভাবে আসবেন:
আপনি যদি লঞ্চে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে লঞ্চঘাট থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা।
আপনি যদি গাড়িতে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে আপনাকে নথুল্লাবাদ নামতে হবে এবং সেখান থেকে রিকশায় চড়ে মুক্তিযুদ্ধ পার্ক আসতে হবে ভাড়া পরবে 40 থেকে 50 টাকা।
ক্যাপশন: বিবির পুকুর এর ভিন্ন স্থান থেকে ক্যাপচার করা চারটি ফটোর একটি GIF
বরিশালের মধ্যে বিবির পুকুর পুরাতন পুকুরের মধ্যে একটি এই পুকুরের আশপাশ জুড়ে সারাদিনই মানুষের সমাগম ঘটে এবং একদম সিটি সেন্টার বলা যায় সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায়।
এখানে প্রবেশ করতে কোন টিকিট এর প্রয়োজন হয় না।
বিবির পুকুর নিয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বিবির পুকুর পাড়ে কিভাবে আসবেন:
আপনি যদি লঞ্চে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে লঞ্চঘাট থেকে বিবির পুকুর পাড় পর্যন্ত 20 টাকা রিকশা ভাড়া এবং আপনি যদি বাসে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে আপনাকে নথুল্লাবাদ নামতে হবে, নথুল্লাবাদ থেকে 40 থেকে 50 টাকার মতো রিকশা ভাড়া পড়বে।
ক্যাপশন: হিরন স্কয়ারের প্রধান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ স্থানটির একটি ফটো
আপনারা যখন বিবির পুকুর পাড় ভ্রমণ করতে আসবেন তখন অবশ্যই হিরন স্কয়ার ভিজিট করতে ভুলবেন না এখানে খুব সুন্দর ছিমছাম সাজানো গাছপালা এবং কিছু বসার স্থান রয়েছে এবং একটি ফোয়ারা রয়েছে যেটি রাতের বেলা চালু করা হয়।
ক্যাপশন: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এখন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয় বর্তমানে টুরিস্ট ডেস্টিনেশন রূপান্তরিত হয়েছে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বিকালবেলা মানুষজন ঘুরতে আসেন ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচার এবং ভবনের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। শরৎকালের কাশফুল হওয়ার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
এখানে প্রবেশ করতে কোন টিকিট এর প্রয়োজন হয় না।
ক্যাপশন: শরতের সময় কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীদের ভিড়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে আসবেন:
আপনি যদি লঞ্চে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে চড়ে আপনাকে রুপাতলি আসতে হবে 15 টাকা ভাড়া এবং রুপাতলি থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে চড়ে আবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যেতে পারবেন 20 টাকা ভাড়া নিবে।
আপনি যদি বাসে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে আপনাকে নতুল্লাবাদ নামতে হবে এবং নথুল্লাহবাদ থেকে রুপাতলি যেতে হবে মাহিন্দ্রাতে চড়ে 15 টাকা ভাড়া নিবে, রুপাতলী থেকে ব্যাটারিচালিত অটো করে আপনাকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যেতে হবে 20 টাকা ভাড়া নিবে।
ক্যাপশন: আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর একটি অংশ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার পথে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু একসাথে ঘুরেতে পারবেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হলে আপনাকে এই সেতুর উপর দিয়ে যেতে হবে, স্থানীয়দের কাছে এই চোখ দপদপিয়া ব্রিজ নামে পরিচিত। এখানে প্রতিনিয়তই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসে এই সেতুটি একনজর দেখার জন্য।
ক্যাপশন: প্লানেট ওয়াল্ড পার্কে প্রবেশ দ্বারের ফটো
শিশু এবং কিশোর বয়সী বাচ্চাদের জন্য প্লানেট পার্ক বরিশাল এর মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয়। তাই এখানে শুক্রবার, পাবলিক হলিডে এবং যেকোন ফেস্টিভেলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে এখানে আসেন।
এখানে প্রবেশ করতে এর টিকিট প্রয়োজন যার মূল্য 20 টাকা।
এবং ভিতরে আলাদা প্রতিটি রাইডের জন্য টিকিট ক্রয় করতে হয়।
প্লানেট ওয়ার্ল্ড পার্কে কিভাবে যাবেন:
আপনি যদি লঞ্চে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে লঞ্চঘাট থেকে প্লানেট পার্ক পর্যন্ত 20 টাকা রিকশা ভাড়া এবং আপনি যদি বাসে চড়ে বরিশাল আসেন তাহলে আপনাকে নথুল্লাবাদ নামতে হবে, নথুল্লাবাদ থেকে 40 থেকে 50 টাকার মতো রিকশা ভাড়া পড়বে প্লানেট পার্ক পর্যন্ত।
শিশুদের জন্য বরিশাল শহরে আরো দুইটি পার্ক রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ফ্রিতে ভ্রমণ করা যায়। একটি হল গ্রীন সিটি পার্ক আরেকটি হলো শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু পার্ক এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড।
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে কিছু কথা:
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী খাবার বিক্রি করে এরকম দোকান এখন নাই বললেই চলে কিন্তু এগুলো হয়েছে আধুনিকতার কারণে এই আধুনিক যুগে মানুষজন আধুনিক খাবারের দিকেই ঝুঁকছে। বরিশালের যে ঐতিহ্যবাহী খাবার বিস্কি এবং মলিদা বিক্রি এমন দোকান পুরো বরিশাল খুজলে কোথাও পাওয়া যাবে না।
তবে ঐতিহ্যবাহী খাবার না পাওয়া গেলেও কিছু খাবার পাওয়া যায় যেগুলো টেস্ট করার জন্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসেন।
বরিশাল শহরে খাবারের দোকানের মধ্যে এই দোকানটি সবচাইতে পুরান এবং প্রায় 90 বছর যাবত তারা এখানে দই চিড়া মুড়ি বিক্রি করে আসছেন। আপনি এই দোকানে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন এটি অনেক পুরানো তারা এখনো প্রাচীনকালের বিভিন্ন পিতলের বাটি এবং চামচ ব্যবহার করে কাস্টমার সার্ভিস দিয়ে থাকেন।
এই দোকানটির অবস্থান বিবির পুকুর এর উত্তর পূর্ব কর্নারে তাই আপনি বিবির পুকুর পাড় আসলে খুব সহজেই দোকানে পৌঁছাতে পারবেন
ক্যাপশন: হক মিষ্টান্ন ভান্ডার এর বিভিন্ন মিষ্টির একটি Collage
হক মিষ্টান্ন ভান্ডার তাদের দুই পুরুষ এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং কয়েক যুগ ধরেই বরিশালে তারা আধিপত্য বিস্তার করেছে। বরিশালের আশেপাশে যে কোনো অনুষ্ঠান হোক না কেন হকের মিষ্টি ছাড়া চলে না বললেই চলে।
তাই আমি সাজেস্ট করবো আপনারা যখন বরিশাল আসবেন তখন অবশ্যই হককের মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।
ক্যাপশন: ওয়ান টাইম কাপের মধ্যে দুই রাখা
হক মিষ্টান্ন ভান্ডার কিইভাবে আসবেন:
নতুল্লাবাদ থেকে হক মিষ্টান্ন ভান্ডার পর্যন্ত রিকশা ভাড়া নিবে 50 থেকে 60 টাকা এবং লঞ্চঘাট থেকে 30 টাকার মত রিকশা ভাড়া।
ক্যাপশন: 2 বাটি চটপটি এর একটি ফটো
দুলালের চটপটি এই নামটি বরিশাল শহরে কারো কাছে এখনো অপরিচিত না। তার চটপটি খুবই ভালো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন তার চটপটি এবং ফুচকার স্বাদ নেওয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে দাম কম এবং মানে ভালো।
আমি যতবারই তার দোকানে গিয়েছি অনেক ভিড় এবং 5/10 মিনিটের সিরিয়ালে থেকে চটপটি অথবা ফুচকা সংগ্রহ করতে হয় আর আপনি যদি পার্সেল নিয়ে যান তাহলে তুলনামূলকভাবে পরিমাণে অনেক বেশি পাবেন।
দুলাল চটপটি হাউসে কিভাবে যাবেন:
দুলাল চটপটি হাউজের অবস্থান নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে। আপনির নতুল্লাবাদ থেকে রিকশায় চড়ে আসতে মাত্র 30 টাকা ভাড়া লাগবে এবং লঞ্চঘাট থেকে দুলাল চটপটি হাউজের সামনে আসতে রিকশা ভাড়া লাগবে মাত্র চল্লিশ টাকা।
#bdlg200 #200meetup #Localguideconnet #Bangladeshlocalguides