bdmafuz's post
cancel
Showing results for 
Search instead for 
Did you mean: 
Level 8

সুসং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা ভ্রমন গাইড

যারা ঢাকার দূরে গিয়ে ঘোরার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য মূলত এই পোস্ট। নেত্রকোনা আমাদের দেশের এক ঐতিহ্যবাহী জেলা। এখানে আপনি দেখতে পাবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (গারো, হাজং) দের জীবনধারা, উপজাতি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চীনা মাটির পাহাড়, ২ টি খ্রিস্টান মিশনারি, রানীখং, ওপাশ থেকে ইন্ডিয়ার মেঘালয় দেখা যায়। আপনারা যারা চীনামাটির পাহাড়, গারো পাহাড়, নীল পানির লেক বা সোমেশ্বরী নদী বলতে বিরিশিরি বোঝেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বিরিশিরি দুর্গাপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এবং একটি ইউনিয়ন।।

 

ঢাকা থেকে সুসং দুর্গাপুর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা মহাখালী থেকে নেত্রকোনা বাস যায় অনেক। তবে ভুলেও দুরগাপুরের বাস এ উঠবেন না। ওখানের রাস্তা অনেক খারাপ আর জেতে দেরিও হবে। সব গুলা বাসই লোকাল যায়। তবে একমাত্র "শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ" বাস টা লোকাল না। এরা আপনাকে নেত্রকোনা বাস স্ট্যান্ড এ নামায়ে দিবে। ভারা জনপ্রতি ৩০০ টাকা। রাস্তা ভাল থাকলে জেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে। ওখান থেকে বাইকে করে সারাদিন বিরিশিরি র দর্শনীয় জায়গা রিজার্ভ করে ঘুরা যায়। আমরা ২ জন ১০০০ টাকায় সারাদিন ঘুরসি। আপ্নারা চাইলে ৮০০-১০০০ টাকায় ঠিক করতে পারবেন। ফিরতি জার্নিও একই রকম ভাবে ।

 

সুসং দুর্গাপুরের দর্শনীয় স্থান সমুহঃ
গারো পাহাড়ঃ গারো পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতমালার একটি অংশ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশের নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ৮০০০ বর্গ কিলোমিটার। সুসং দুর্গাপুর এর উত্তর সিমান্তে নলুয়াপাড়া, ফারংপাড়া, বাড়মারি, ডাহাপাড়া, ভবানিপুর , বিজয়পুর ও রানিখং সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এর বিস্তার। এই পাহাড়ে প্রচুর পরিমানে মুল্যবান শাল গাছ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এই পাহাড় গুলো প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্যের আধার।প্রকৃতি প্রায় ঝুলি উজাড় করে দিয়েছে এ গারো পাহাড়কে সাজাতে। বিচিত্র স্বাদের প্রকৃতির অলংকার যেন মানায় এই ভূস্বর্গকেই। পাহাড়-পর্বত, ছোট ছোট নদী, পাহাড়ী ঝরণা, শাল-গজারীসহ নানা প্রজাতির গাছ, সৌন্দর্য-মেশা উঁচুনীচু পথ দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। সবুজে সবুজে উদ্ভাসিত এই গারো পাহাড়। পাহাড়ের অসমতল উঁচুনীচু টিলার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে ঝরণা। যার স্বচ্ছ জলরাশিতে ভেসে ওঠে আগন্তুকের প্রতিচ্ছবি। দু’পাহাড়ের মাঝে মাঝে সমতল ভূমি। সমতল ভূমিতে সবুজ শস্য ক্ষেত। পাহাড়ে পায়ে চলার দুর্গম পথে চলাচল করে পাহাড়ী মানুষ। কোথাও কোথাও টিলার ওপর দেখা যাবে ছোট ছোট কুড়ে ঘর। সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশ। সব মিলিয়ে আল্লাহর সৃষ্টিতে ভরপুর এই পাহাড়। যা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ঝিনাইগাতীর এই পাহাড়ী এলাকায় বসবাস করে বিভিন্ন শ্রেণীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। তার মধ্যে গারো, হাজং, কোচ, মুরং উল্লেখযোগ্য। এ সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা যুগ যুগ ধরে নিজ নিজ কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা লালন করে সৌন্দর্য ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে।কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্যে সর্বক্ষেত্রে এ এলাকাটি পশ্চাদপদ। অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। কৃষি অর্থনীতি মূলত পাহাড়ের ঢালে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি এবং নদী ও পাহাড়ী ঝরণা অববাহিকায় ধান চাষ হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে নদী থেকে উত্তোলিত বালির ও কয়লার ব্যবসা, চীনামাটি ও পাথরের ব্যবসা প্রধান। এলাকার দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ প্রতিদিন সকালে কোদাল-সাবল, বাঁশের খাঁচা নিয়ে নদীতে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে কয়লা তুলে কয়লা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে অথবা দিনমজুরী হিসেবে শ্রম বিক্রি করে দিনাতিপাত করে। উপজাতিরা পাহাড়ে লাকড়ি কেটে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। বালু উত্তোলনের ফলে দরিদ্র শ্রেণীর শ্রমিকদের উপকার হলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু তোলাতে পরিবেশের ভারসাম্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী। বর্তমানে গারো পাহাড়ের পতিত জমিতে, বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ফলের বাগান করা হচ্ছে। তাতে আম, কাঁঠাল, আনারস ও লেবু প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া মসলা জাতীয় ফসল যেমন হলুদ, আদাও প্রচুর হচ্ছে। সরকারিভাবে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা যেতো। ভারতের সীমান্তঘেঁষা গহীন অরণ্য, মনোরম আবহাওয়া এবং বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, উপজাতীয়দের সংগীতে মুখর। সব মিলিয়ে এলাকাটি আপনাকে দেবে অনাবিল আনন্দ। ছবির মতো সুন্দর এই গারো পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে বসে দেখা যায় গভীর জঙ্গল। উত্তর দিকে চোখ দিলে দেখা যাবে ভারতের বেশ কিছু অংশ। যারা পাহাড়ে ভ্রমণ করতে চায় তাদেরকে গারো পাহাড় নিশ্চিত আনন্দ দিবে উজার করে।
 
সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়িঃ এক সময় দুর্গাপুর ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী। ৩ হাজার ৩শ’ ৫৯ বর্গমাইল এলাকা ও প্রায় সাড়ে ৯শ’ গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সুসং রাজ্যের রাজধানী ছিল দুর্গাপুর। বর্তমানে এটি নেত্রকোনার একটি উপজেলা। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে তাঁর পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর শাসন করেন এ রাজ্য। কিন্তু রাজকৃষ্ণ নামে এক রাজার শাসনামল থেকে সুসং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজপরিবারে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ফলে এক সময় গোটা রাজ্য চারটি হিস্যায় ভাগ হয়ে যায় এবং চারটি পৃথক রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িগুলো ‘বড় বাড়ি’, ‘মধ্যম বাড়ি’, ‘আবু বাড়ি’ (ছোট অর্থে) ও ‘দু’আনি বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। ‘৪৭-এর দেশ বিভাগ এবং পরবর্তীতে ‘৫৪ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন পাস হবার পর রাজবংশের সদস্যরা ভারতে চলে যান। আর এর মধ্য দিয়েই অবসান ঘটে অনেক শৌর্য-বীর্যখ্যাত সুসং রাজ্যের।সুসং রাজবাড়ি দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। পরিখাবেষ্টিত রাজবাড়ির অভ্যন্তরে ছিল সৈনিকদের আবাস, বিচারালয়, কারাগৃহ, অস্ত্রাগার, চিড়িয়াখানা, হাতিশালা, রাজপরিবারের সদস্যদের প্রাসাদ, শয়নকক্ষ, কাছারি, বৈঠকখানা ইত্যাদি। ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সুসং রাজ্যের রাজা জগতকৃষ্ণ সিংহ প্রাচীর চাপা পড়ে নিহত হন এবং রাজবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে যে নিদর্শনগুলো টিকে আছে তার অধিকাংশই জগতকৃষ্ণের পরবর্তী বংশধরদের নির্মিত।সুসং রাজাদের ‘বড় বাড়ি’র সামনে তিনতলা একটি বড় ঘরকে ‘রংমহল’ বলা হতো। দেশ বিভাগের পরও ঘরটি ছিল। ১৯৭০ সালে সেখানে সুসং ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ রংমহলের ভগ্নপ্রায় ঘরটি বিক্রি করে দেয়। একটি পানির ইঁদারা ও সীমানা প্রাচীর ছাড়া বড় বাড়ির কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই এখন। ‘মধ্যম বাড়ি’র বাইরের পূর্ব দিকের একটি ঘর এখন দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ বাড়ির একটি কাছারি ঘর ব্যবহৃত হচ্ছে দুর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে। ১৯৬৯ সালে মধ্যম বাড়ির অভ্যন্তরের কয়েকটি ঘর নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্গাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এর মধ্যে দক্ষিণ পাশের একটি ঘর (রাজাদের বাসগৃহ) প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়, উত্তর দিকের ঘরটি (রাজাদের বাসগৃহ) বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ঘরটি এখনও শিক্ষক-শিক্ষিকার মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ বাড়িতে আর আছে একটি পুকুর যা এখনও ‘রাজবাড়ির বড় পুকুর’ নামে পরিচিত। ‘আবু বাড়ি’তে স্বাধীনতার চার-পাঁচ বছর আগেও অমরেন্দ্র সিংহ শর্মা নামে সুসঙ্গ রাজবংশের এক সদস্য বসবাস করতেন। এলাকায় তিনি ‘মিনি বাহাদুর’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দেশত্যাগের পর ওই বাড়ির কয়েকটি ঘর বিভিন্ন সময় সরকারী কর্মকর্তাদের বাসাবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই ঘরটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত। এর ভেতর বাড়ির পেছনের ঘরটিতে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন’ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এদিকে, দু’আনি বাড়ির অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখনও অক্ষত আছে। বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন গোপাল দাস নামে এক ব্যক্তি। তিনি রাজবাড়ির সাবেক কর্মচারী সাধুচরণ দাসের পৌত্র। এ বাড়ির সামনের ঘর (যেখানে রাজারা বসবাস করতেন), পুজোমন্ডপ ও পানির ইঁদারা আজও রাজবংশের স্মৃতি বহন করে চলেছে। পুজোমন্ডপটি ‘নিত্যপূজামন্ডপ’ হিসেবে পরিচিত। সেখানে আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজো ছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন ধর্মীয় পুজো-পার্বণ হয়। কাঠের তৈরি এ ঘরগুলোর নির্মাণশৈলীও বেশ নান্দনিক। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।এছাড়াও দুর্গাপুরের সুসঙ্গ রাজাদের স্মৃতিচিহ্নকে আজও ধরে রেখেছে ১৯১৮ সালে স্থাপিত মহারাজা কুমুদচন্দ্র মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, দশভুজা মন্দির (যেখানে সোমেশ্বর পাঠক প্রথম ধর্মীয় উপসনালয় স্থাপন করেছিলেন) ও রাজবাড়ির এক ম্যানেজারের বাসভবন। মহারাজা কুমুদচন্দ্র মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়টি দুর্গাপুরের প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ সরকারী। দশভুজা মন্দিরটি পরিচালিত হয় একটি কমিটির মাধ্যমে। এটি স্থানীয় হিন্দু সমপ্রদায়ের অন্যতম উপাসনালয়।
 
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমীঃ দুর্গাপুরের বাসস্ট্যান্ড বিরিশিরি এর পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী । এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। সুসং দুর্গাপুর ও এর আশপাশের উপজেলা কলমাকান্দা, পূর্বধলা, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়ায় রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের জীবনধারা যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি বৈচিত্র্যময় এদের সংস্কৃতিও। তাদের এসব ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং চর্চার জন্যই ১৯৭৭ সালে সুসং দুর্গাপুরে তৎকালীন রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর সময়কালে সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী । এখানে প্রায় সারা বছরই নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
 
টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধঃ ১৯৩৭-৫০ সালে তখনকার জমিদার বাড়ির ভাগ্নে কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে জমিদারদেরই বিরুদ্ধে শুরু হয় টঙ্ক আন্দোলন।টংক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। সুসং দুর্গাপুর এর এম.কে.সি.এম হাই স্কুলের পাশে গেলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। মরহুম রাজনীতিবিদ জালাল উদ্দিন তালুকদারের দানকৃত জমিতে এ স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণিসিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী মণিসিংহ মেলা নামে লোকজ মেলা বসে।
 
সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীঃ সুসং দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় যেতে হয় রানিখং গ্রামে। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানিখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।
 
হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধঃ দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণি এই স্মৃতিসৌধ।সীমান্তবর্তী, গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বগাঝরা’ নামক গ্রামটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী গ্রামগুলোর মধ্যে একটি।রাশিমণি সেই গ্রামেরই একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন।ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান এবং হয়ে ওঠেন টংক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। টংক আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে কৃষক আন্দোলন। টংক মানে ধান কড়ারি খাজনা। টংক প্রথার শর্তানুসারে জমিতে ফসল হোক-বা না-হোক চুক্তি অনুযায়ী টংকের ধান জমির মালিককে দিতেই হত। ফলে কোন বছর যদি জমিতে ফসল না হয় বা খরা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্য নষ্ট হয়ে যায় তবুও কৃষককে তার নির্ধারিত খাজনা পরিশোধ করতেই হত। এতে হাজংসহ অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায় এবং ওই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকসমাজ অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় পড়ে। টংকের ধান সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলেই কৃষকদের ওপর নেমে আসত অত্যাচার-নিপীড়ন। টংকপ্রথা কৃষকদের জন্য ছিল একটি অভিশাপ। সে জন্য তারা টংকের হাত থেকে মুক্তির জন্য সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ বা আন্দোলন গড়ে তোলেন। রাশিমণির নেতৃত্বে হাজংরা প্রথমে টংকের কুফল বিষয়ে সচেতনায়নে গ্রামে গ্রামে বৈঠক করেন। পরে ঐকমত্য সৃষ্টি হলে কৃষকরা একপর্যায়ে জমিদারদের টংক ধান দেয়া বন্ধ ঘোষণা করেন। তৎক্ষণাৎ এর ফল হিসেবে টংক চাষিদের ভাগ্যে নেমে আসে দুর্ভোগ। মূলত হাজং কৃষকরা প্রথমে টংক প্রথা উচ্ছেদের জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে তারা জমিদার গোষ্ঠীর সঙ্গে অতঃপর ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। হাজংদের এ টংক ও জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসেন কমরেড মণিসিংহ। ১৯৩৭ সাল থেকে টংক আন্দোলন শুরু হয় কিন্তু তার বহু পূর্ব থেকেই হাজংরা এ আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন; কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে আন্দোলন যখন তুঙ্গে, দুর্গাপুরে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এসব বাহিনী বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে বিদ্রোহী হাজং কৃষকসহ অন্য কৃষকদের খুঁজতে শুরু করে। সে লক্ষ্যেই ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস বাহিনী দুর্গাপুর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে বহেরাতলী গ্রামে তল্লাশি চালায়। কিন্তু এদিনে সে গ্রামের বিদ্রোহী কৃষক নর-নারীরা প্রতিবেশীদের টংকবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অবশেষে বহেরাতলী গ্রামে কাউকে না পেয়ে ক্ষিপ্ত বাহিনী লংকেশ্বর হাজংয়ের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী ও আন্দোলনকর্মী কুমুদিনী হাজংকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পের দিকে রওনা হয়। কুমুদিনী হাজং তখন মাত্র ১৭ বছরের নারী। হাজং গ্রামগুলোতে কুমুদিনীকে ধরার সংবাদটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে রাশিমণি তার হাজং নারী-পুরুষ দল নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পথরোধ করেন। এ সময় বিপ্লবী রাশিমণি হাজং কুমুদিনী হাজংকে বাঁচাতে সেই সশস্ত্র বাহিনীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই বলে, ‘ময় তিমাদ, তিমাদ হুয়ে আরেগ তিমাদলা মান ময় বাঁচাব, মরিবা লাগে মুরিব।’ অর্থ: ‘আমি নারী, নারী হয়ে আরেক নারীর সম্ভ্রম রক্ষা আমিই করব, মরতে হয় মরব।’ সশস্ত্র বাহিনীও নৃশংসভাবে তাদের ওপর গুলি চালায়। ফলে এক সময় পেছন থেকে আসা গুলিতে রাশিমণি হাজং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পেছনে পুরুষ দলের নেতা সুরেন্দ্র হাজং রাশিমণিকে ধরতে গেলে তাকেও নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাকি আদিবাসীরা পুলিশদের মেরে ঘায়েল করা শুরু করলে অবশেষে তারা কুমুদিনীকে রেখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এভাবেই শহীদ হন আদিবাসী নেত্রী রাশিমণি হাজং। অধিকার প্রতিষ্ঠা ও একজন নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে তার এ আত্মত্যাগ আজও তাকে অমর করে রেখেছে। একজন নারী হয়ে নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে জীবন বিসর্জন দিয়ে রাশিমণি এখন ‘হাজংমাতা’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৪ সালের ৩১ জানুয়ারি বহেরাতলী গ্রামের তার মৃত্যুসংলগ্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে ‘হাজংমাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ’। প্রখ্যাত কবি রফিক আজাদ রাশিমণিকে নিয়ে তার ‘মাতা রাশিমণি’ কবিতায় লিখেছেন, ‘রাশিমণি একটি নাম, জীবন-সমান দীর্ঘ নাম।
 
সাদা মাটির পাহাড়ঃ দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের শসার পাড় এবং বহেরাতলী গ্রামে সাদা মাটি অবস্থিত। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধার গুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার।বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতির সম্পদ হিসেবে সাদা মাটির অন্যতম বৃহৎ খনিজ অঞ্চল এটি। ছোট বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৭ সালে এই অঞ্চলে সাদামাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, যা বাংলাদেশের ৩ শত বৎসরের চাহিদা পুরণ করতে পারে।চিনা মাটির প্রাচীন ইতিহাস না জানা গেলেও ১৯৫৭ সাল থেকে এ মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম কোহিনুর এলুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করে। পরে ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি সাদামাটি উত্তোলনে যোগ দেয়। বর্তমানে ৯টি কোম্পানী এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ করছে। প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক এই মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িত। বিভিন্ন রংয়ের মাটি, পানি ও প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মনকে বিমোহিত করে। সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নীলাভ সহ বিভিন্ন রংয়ের মাটির পাহাড় চোখকে জুড়িয়ে দেয়। সাদামাটি এলাকার আশপাশ জুড়ে বেশ কয়েকটি আদিবাসী বসতি রয়েছে তবে তারা সংখ্যায় অনেক কম। অধিবাসীদের অধিকাংশই বাঙালি মুসলমান।
 
সোমেশ্বরী নদীঃ সোমেশ্বরী নদী স্বচ্ছ পানি আর ধুধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবাহিত একটি নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। । ৬৮৬ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ অত্র অঞ্চলকে বাইশা গারো নামের এক অত্যাচারী গারো শাসক এর হাত থেকে মুক্ত করে নেয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজার (পূর্ব নাম বঙ বাজার) হয়ে বাংলাদেশের রাণীখং পাহাড়ের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাণীখং পাহাড়ের পাশ বেয়ে দক্ষিণ দিক বরাবর শিবগঞ্জ বাজারের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী নদী বরাবর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। সেই পথে কুমুদগঞ্জ বাজার হয়ে কোনাপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল তালুকদার সাহেবের বাড়ির সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাকলজোড়া, সিধলি, কলমাকান্দা, মধ্যনগর হয়ে ধনু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে সোমেশ্বরী। সোমেশ্বরীর মূলধারা তার উৎসস্থলে প্রায় বিলুপ্ত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকে না। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়ীয়া ঢলে সোমেশ্বরী বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে নতুন গতিপথের সৃষ্টি করেছে। যা স্থানীয় ভাবে শিবগঞ্জ ঢালা নামে খ্যাত। বর্তমানে এ ধারাটি সোমেশ্বরীর মূল স্রোতধারা। এ স্রোতধারাটি চৈতালি হাওর হয়ে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে কংশ নদী সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পাহাড়ীয়া ঢলে আত্রাখালি নদী নামে সোমেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদীটির সৃষ্টি হয়। সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে আতরাখালী। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
 
কংশ নদীঃ কংশ নদী ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগের তুরার কাছে গারো পাহাড়ে এই নদীটির উৎপত্তি। উৎস থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলা সদরের প্রায় ১৬ কি.মি. উত্তর দিয়ে কংস বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীতে মিশেছে। কংস ও সোমেশ্বরী মিলিত স্রোত বাউলাই নদী নামে পরিচিত। প্রবাহ পথে নদীটি ফুলপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, পূর্বধলা, র্দুর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
 
আত্রাখালি নদীঃ আত্রাখালি নদী সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আত্রাখালি নদী এখন বেশ খরস্রোতা। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আত্রাখালি থেকে নয়া গাঙ নামের আর একটি স্রোত ধারা উত্তর দিকে সৃষ্টি হয়েছে।
 

বি দ্রঃ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। পরিবেশ রক্ষা করুন। আর হ্যাঁ, পারলে এই বর্ষায় ২ টা গাছ লাগাবেন। ধন্যবাদ। 

সবুজের মায়াসবুজের মায়াবিরিশিরিবিরিশিরিচীনা মাটির পাহাড়চীনা মাটির পাহাড়সোমেশ্বরী নদীসোমেশ্বরী নদীখ্রিস্টান মিশনারিখ্রিস্টান মিশনারিসুসাংসুসাংসোমেশ্বরী নদীসোমেশ্বরী নদীপাতলা বনপাতলা বন

Netrokona, Bangladesh
5 comments
Former Google Contributor

Re: সুসং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা ভ্রমন গাইড

That's awesome! Thanks for sharing this, @bdmafuz. I loved the photos too.

Due to the volume of private messages Googlers receive, I do not read or respond to private messages. Please post publicly so others may benefit from your discussion. If you require urgent assistance, please tag a Google Moderator. Thank you!
Level 8

Re: সুসং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা ভ্রমন গাইড

Hi @NadyaPN thanks and you are most welcome to Banglades.      

Level 8

Re: সুসং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা ভ্রমন গাইড

লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। বেশ তথ্যবহুল। আপনার লেখাটা পড়ে মনে হল একবার যাওয়া উচিত অন্তত। ইনশাআল্লাহ্‌ একবার যাব। তখন আপনার সাথে যোগাযোগ করবো আরও কিছু তথ্যের জন্য। ভালো থাকবেন। 🙂

Level 8

Re: সুসং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা ভ্রমন গাইড

Hi @LyricMitra are you from Bangladesh? If yes please tell us where you from BD. HERE

Level 8

Re: সুসং দুর্গাপুর, নেত্রকোনা ভ্রমন গাইড

Yes @bdmafuz, I have been tagged there. Most probably you have tagged me. 🙂