02-24-2018 03:43 PM - edited 02-24-2018 03:49 PM
ভ্রমণের কথা মাথায় এলেই চোখে ভেসে উঠে ঝর্ণা, সাগর, পাহাড়, হাওড় কিংবা গহীন অরণ্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এ চিত্তাকর্ষক দৃশ্যের সঙ্গে যদি যোগ হয় ঐতিহাসিক কোনো ব্যক্তির নাম, তার শৈশব কাটানো পথঘাট, বসতবাড়ি ও তার কর্ম জীবনের নিদর্শন, তবে তো কথাই নেই। ভ্রমনটা হয়ে উঠে আরও চিত্তাকর্ষক। যা মনকে করে প্রফুল্ল আর জ্ঞানের জগতকে করে প্রসারিত। মনের খোরাক আর জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তাই ভ্রমণটা তাই হতে পারে যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি গ্রাম। যে গ্রামের নাম লেখা হয়েছে বইয়ের পাতায়। যে স্থানে জন্মেছিলেন বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত।। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী ছিল ২৫ জানুয়ারি। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মেছিলেন কবি। তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারী উদ্যোগে বাড়ি সংরক্ষণ করা হয়েছে, নাম দেয়া হয়েছে মধুপল্লী। যশোর শহর থেকে কবিবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।
নানান প্রাচীন স্থাপনা আর কবির স্মৃতিতে সমৃদ্ধ মাইকেল মধুসূদ দত্তের বাড়ি। কুটিরের আদলে তৈরি প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করতে হয় মধুপল্লীতে। সামনেই কবির আবক্ষ মূর্তি। ভেতরে কবির বসতবাড়ি এখন জাদুঘর। ১৯৬৫ সালে ২৬ অক্টোবর সরকার বাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
মধুসূদনের পরিবারের ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র আর নানান স্মৃতিচিহৃ নিয়ে এ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মধুসূদন জাদুঘর। চারপাশ প্রাচীরে ঘেরা, ভেতরে বাড়ির পশ্চিম পাশে আছে দিঘি। দিঘির ঘাটে কবি স্নান করতেন, যা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
১৮৩০ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর চলে যান মধুসূদন। কলকাতায় থাকলেও কবির মন পড়ে থাকতো সাগড়দাঁড়িতে। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে একবার কবি স্ত্রী-পুত্র কন্যাকে নিয়ে নদী পথে বজরায় করে বেড়াতে আসেন সাগরদাঁড়িতে। ১৮৬২ সালে কবি যখন সপরিবারে সাগরদাঁড়ীতে এসেছিলেন তখন ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে জ্ঞাতিরা তাঁকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি। তিনি কপোতাক্ষ নদের তীরে একটি কাঠবাদাম গাছের তলায় তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন অবস্থান করেন। বিফল মনে কপোতাক্ষের তীর ধরে হেঁটে বিদায়ঘাট হতে কলকাতার উদ্দেশে বজরায় উঠেছিলেন। এর পর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
কপোতাক্ষ নদের তীরে কবির স্মৃতি বিজড়িত কাঠবাদাম গাছের গোড়া সান বাধানো। বয়সের ভারে মৃতপ্রায় বাদাম গাছ ও বিদায় ঘাট পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কপোতাক্ষ নদের সৌন্দর্য।
সাগরদাঁড়ি গ্রামের উত্তর পাশে শেখপুরা গ্রামে আছে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শেখপুরা জামে মসজিদ। আঠারো দশকে নির্মিত এ মসজিদের ততকালীন ইমাম মখমল আহম্মেদের কাছে ফারসি ভাষা শিখতেন বালক বয়সের কবি। মসজিদের সামনে এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ পীর রিয়াজ তুল্লা’র সমাধি আছে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যাওয়া যায় যশোর। ঢাকার গাবতলী,কল্যাণপুর ও কলাবাগান থেকে গ্রিনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি-ননএসি বাস যশোর কেশবপুর যায়। সেখান থেকে ব্যাটারী চালিত রিক্সায় অথবা ভাড়া মটোর বাইকে যেতে হবে সাগরদাঁড়ি।
যশোর শহর থেকে কেশবপুর হয়ে সাগরদাঁড়ি যাওয়ার পিচঢালা সরু পথ, দুই পাশে খেজুরগাছের সারি, গাছের ফাঁক দিয়ে ডানে-বামে তাকালে দেখা যাবে খোলা মাঠ। যা মৌসুমের শুরুতে প্রস্তুত করা হচ্ছে আবাদের জন্য। অথবা মৌসুমের শেষ পর্যায়ে চলছে ফসল কাটার ধূম। শীত মৌসুমে দেখা যাবে সরষে ফুলে মৌমাছিদের আনাগোনা। তার মাঝে হঠাৎ চোখে পড়তে পারে দূরের কোনো বড় আইল দিয়ে দুষ্টু ছেলেদের সাইকেল রেস। অনাবিল এই প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে কখন কবির বাড়ি গিয়ে পৌঁছবেন সেটা বুঝে উঠতেও পারবেন না। সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারের উঠোনে দাঁড়িয়ে যখন ভাববেন, এখানেই ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক। তখনই মনে বইতে থাকবে আনন্দের হিল্লোড়। মুহূর্তেই শরীরে সৃষ্টি হবে এক ধরণের শিহরণ।কারণ এই জমিদারবাড়িতে কাটে কবি মধুসূদনের শৈশব। বর্তমানে বাড়িটির চার পাশে রয়েছে অসংখ্য আম-কাঁঠাল গাছসহ নানাবিধ বনোজ বৃক্ষ। বৃক্ষের আবরণ ভেদ করে সূর্যের আলো এখানে নামতে পারে না। একান্ত নিরিবিলি ছায়াময় এ পরিবেশে হরেক রকমের পাখির কলতানে মন কখন যে হারিয়ে যাবে বুঝে ওটাও কঠিন হতে পারে। এছাড়া শানবাঁধা পুকুরের পাড় ঘেষে বিভিন্ন গুল্ম ও পাতাবাহারী ফুলের দৃশ্য বিমোহিত করতে পারে পর্যটকদের। কবির কাচারী ঘর ও এর আশপাশের পাতাবাহারী ফুল গাছের সমাহার পরিবেশকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। যেখানে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই কাটতে পারে দারুণ সময়। ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে কবির দাঁড়িয়ে থাকা ইতিহাসের সাক্ষী স্মৃতির চিহ্নগুলো। তবে প্রতিবছর জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে যে মধুমেলা অয়োজন করা হয়। সে মেলা উপলক্ষ্যে সাগরদাঁড়িতে লোকসমাগম হয় অনেক বেশি। দর্শনার্থীর ভিড়ে কবির স্মৃতিবিজড়িত সব এলাকা ঘুরে দেখা সব সময় সম্ভব নাও হয়ে উঠতে পারে। তখন ভ্রমণটাও অসম্পূর্ণ বা অতৃপ্ত হতে পারে। তাই একটু বেশি ঘুরতে বা দেখতে ভ্রমণটা অর্থপূর্ণ করতে মেলা ছাড়া বছরের অন্য সময়ে ভ্রমনটা হতে পারে সঠিক সিদ্ধান্ত।
বিঃদ্রঃ উক্ত পোষ্টের দেয়া তথ্য বিভিন্ন সাইট থেকে নিয়ে সাজিয়ে লেখা ও পিকচার গুলো আমার। সংযুক্ত লিঙ্ক গুলো WIKIPEDIA থেকে নেয়া হয়েছে।
02-24-2018 04:00 PM
@Polash0001 its a very helpful post for visiting modhu polli. thank you. i also visit modhupolli.
02-24-2018 11:48 PM
@rasel8080picture and feelings share korben please.
07-01-2018 06:44 AM
Hi @Polash0001!
It's fantastic post . Full of informations and photographs.
I don't know who is that person taking selfie.
Being a historical reportage , had those pictures could be avoided it would been a complete and mote attractive travelogue.
Mondrito
07-01-2018 11:21 AM
Dear @MONDRITO this was me. there you can also capture picture cause it is aloud for everyone. so it is not problem .
07-01-2018 11:27 AM
@Polash0001ধন্যবাদ ভাই সুন্দর করে আমাদের ইতিহাস কে তুলে ধরার জন্য