02-21-2018 02:26 PM
এই গল্পটি একইসাথে একজন ডাক্তার এবং প্রোগ্রামারের, যার হাত ধরে 'অভ্র' নামের ফোনেটিক কীবোর্ড সফটওয়্যারটির জন্ম হয়েছিলো।
যে অভ্রের কল্যাণে আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা সহজে বাংলা টাইপ করতে পারেন,
অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন জগতেও ঘটেছে বাংলার বিপুল প্রসার,
এই গল্পটি সেই অভ্রের গর্বিত জনকের.... মেহদী নামের উনিশ বছরের ছেলেটি নটরডেম থেকে সদ্যই বেরিয়ে যোগ দিয়েছিলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ডাক্তারি পড়তে এলেও ভেতরে ভেতরে তার প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি প্রবল ঝোঁক। এ অনেকটা একই দেহে দুই আত্নার বাসের মতো।
ক্লাস টেন থেকেই মেহদী প্রোগ্রামিং এর খুঁটিনাটি নিয়ে ঘাটাঘাঁটি করতো। বইপত্র জোগাড় করে কিছু পড়াশোনাও চালিয়েছিলো। নটরডেমের মিশনারি কড়াকড়িও সেই ঘাঁটাঘাটিতে বাঁধা হতে পারেনি!
তবে মেহদীর লাইফে সবচে বড় টার্ণিং পয়েন্ট আসে ২০০৩ এ। তখনকার একুশে বইমেলায় BITOS (Bangla Innovation Through Open Source) নামে একটি বাঙালি সংগঠন লিনাক্সের জন্য বাংলা লিনাক্স নামে একটি ভার্সন নিয়ে আসেন। শুধু বাংলা টাইপিংয়ের না, পুরো অপারেটিং সিস্টেমটাই বাংলাতে চলতো এই ভার্সনে। ফাইল, ফোল্ডাস, মেনু সব বাংলায়। এর জন্য 'ইউনিবাংলা' ফন্ট ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা।
মেহদীর জীবনেএই ঘটনা অনেক বড় টার্ণিং পয়েন্ট হয়ে আসে।
তিনি ইউনিবাংলা ডাউনলোড করে তাকে উইন্ডোজ ভার্সনের জন্য উপযুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যান!
যদিও শুরুতে সমস্যা ছিলো প্রচুর পরিমাণে।
অনলাইন অফলাইন কোথাও বাংলা কীবোর্ডের ব্যাপারে উপযুক্ত ইনফরমেশন বা নির্দেশনা ছিলোনা একদমই।
এ যেনো অজানাকে না জেনেই জানার চেষ্টা!
মেডিকেলের প্রেসার মাথায় নিয়ে প্রায় এগারো মাসের সাধনার পর মেহদী 'অভ্র' কীবোর্ড তৈরিতে সক্ষম হন। তবে পুরোপুরি নয়।
প্রচুর 'বাগ' ছিলো প্রথম চেষ্টায়। যা রিপ্রোগ্রামিং বা রিকোডিং অর্থাৎ সম্পূর্ণ ফ্রেমওয়ার্ক চেন্জ করে সারানো হয়। .
অভ্র হলো ফোনেটিক।
অর্থাৎ সরাসরি বাংলা লেখার দরকার নেই। কীবোর্ডে ইংরেজি টাইপ করলেই তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বাংলায় রূপান্তরিত হবে।
এতে করে ইংরেজি জানা যেকোনো লোকও চাইলে বাংলায় লিখতে পারবেন।
জাফর ইকবাল স্যারের ভক্ত ছিলেন মেহদী হাসান।
তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাস 'ওমিক্রনিক রূপান্তর' থেকেই অভ্রের প্রথম ওয়েবসাইটের নামকরণ করা হয় 'ওমিক্রণ ল্যাব'।
একে একে আরো অনেকে যুক্ত হন অভ্রের সাথে। যাদেঁর নিয়ে তৈরি হয় 'অভ্র' টিম। ডিকশনারিতে শব্দ সংযোজন, নতুন ফন্ট তৈরি, ম্যাক ভার্সন তৈরিসহ একাধিক আপগ্রেডে ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা সবাই।
আছেন রিফাত-উন-নবী, সুমাইয়া নাজমুন, শাবাব মুস্তফা, তানবিন ইসলাম সিয়াম প্রমুখ।
জন্মের পরপরই জনপ্রিয় হওয়া অভ্র এখন সকলের জন্য উন্মুক্ত।
তাও বিনেপয়সাতেই।
আজ যে ফেসবুক সহ নানা জায়গায় বাংলা ভাষার ছড়াছড়ি,
তার জন্য ষোল কোটি ধন্যবাদও কম হবে মেহদী হাসান খানের জন্য!
মেডিকেলের মারাত্নক প্রেসার, তার পাশাপাশি শিক্ষকদের তাচ্ছিল্য উড়িয়ে ঠিকই ডাক্তার হয়েই বেরিয়েছেন তিনি। যদিও পেশা তাঁর এখন প্রোগ্রামিং ই।
বিজয় বনাম অভ্র লড়াই কিংবা মানুষটি কেনো একুশে পদক পাবেননা তা আলোচনা এই লেখাটির মুখ্য নয়।
ওসব ভারী কথা হয়তো পরের জন্য তোলা থাক।
আপাতত ভাষার মাসে সর্বস্তরে বাংলা ছড়িয়ে পড়ুক এটাই আমাদের চাওয়া। যাঁর অবদান ছাড়া অনলাইন জগতে বাংলার বিচরণ কেবলমাত্র একটা মরীচিকা থেকে যেতো...
অভ্র নামের বাঙালি কীবোর্ডের জনক সেই মেহদী হাসান খানকে উৎসর্গ করে'বহির্বিশ্বে দেশের নাম উজ্জ্বল করা সেরা দশ বাঙালি'-র সিরিজটি চলমান থাকলো....
02-22-2018 12:42 AM
জানানর জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।