যখন ইতিহাস কথা বলে, তখন আমাদের মুগ্ধ হয়ে সেই কথা শুনা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকেনা। আজ আমি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের নিয়ে যাবো এমন দুটি স্থানে, যেখানে ইতিহাস কথা বলে।
সচরাচর কোনো টুরিস্ট বা ট্রাভেলার যদি কোনো জেলায় ঘুরতে যায় তাহলে তারা সেই শহর সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখে থাকেন, যার ফলে লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যায় ইতিহাসের অনেক কিছু। তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্ধু গ্রামে অবস্থিত বাংলার বারো ভূইয়াদের নেতা ঈসাখাঁর ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দূর্গ ও তার সংলগ্ন শাহ মাহমুদ মসজিদ ও বালাখানা।
ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দূর্গ
এগারসিন্ধুর দুর্গ নামটি কমবেশি সবাই শুনেছেন, এগারসিন্ধুর দুর্গ নাম না শুনলেও এই জায়গার নামের এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনের নামতো সবাই শুনেছেন।
এগারসিন্ধুর দূর্গ ছিল মধ্যযুগের বাংলার একটি দুর্গ। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার এবং গাজীপুরের টোক থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে এগারসিন্দুর গ্রামে অবস্থিত। বারো ভুঁইয়াদের নেতা ঈসা খান মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই দুর্গ ব্যবহার করেছিলেন।
বর্তমানে এই দুর্গটির কোনো অস্তিত্ব নেই, শুধু মাটির একটা ছোট টিলা ও তার প্রদদেশে একটা কবর সদৃশ একটা ইটের বস্তু ছাড়া। তবে এই টিলার মাঝের গর্তগুলোতে পুরাতন ইটের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
এই জায়গাটি সাদামাটা হলেও ঐতিহাসিকভাবে জায়গাটি খুবই মূল্যবান, কিন্তু আমি বেশ কয়েকবারের ভ্রমনে দেখেছি যে সকল দর্শনার্থীরা জায়গাটিতে ঘুরতে আসেন, তারা জায়গাটি ঘুরে দেখার পরে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা যেমন চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, ওয়ান টাইম প্লেট ইত্যাদি ফেলে জায়গাটি নোংরা করে রেখে যায়।
এমন ঐতিহাসিক স্থান হওয়া সত্বেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি!
শাহ মাহমুদ মসজিদ ও বালাখানা
সুবেদার শায়েস্তাখাঁর আমলে ১৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এগারসিন্দুরের তৎকালীন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী শাহ মাহমুদ কর্তৃক এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ টি নির্মাণ করা হয়। এর চারদিকে বেষ্টনী প্রাচীর ও সম্মুখ পাশে দুচালা বিশিষ্ট একটি ঘর রয়েছে, যার নাম বালাখানা।
মসজিদ টি দেখতে বর্গাকৃতির এবং কারুকার্যে সুলতানী স্থাপত্যশৈলী ব্যবহার করা হয়েছে। পোড়ামাটির বিভিন্ন কারুকার্য মসজিদটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছোট আকারের যেকোনো যানবাহন নিয়ে মসজিদের সামনে পর্যন্ত আসা যাবে!
হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরাও এই মসজিদ এ সহজে প্রবেশ করতে পারবেন।
পুরুষ মহিলা সবার জন্যই এই মসজিদটি উন্মুক্ত।
কিভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে চাইলেই সহজেই আসতে পারবেন ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দুর্গ ও শাহ মাহমুদ মসজিদ ও বালাখানাতে। দুটি অবস্থান পাশাপাশি, মাঝে ৩০০ মিটারের দূরত্ব।
ঢাকা থেকে আসার একমাত্র মাধ্যম হলো বাস। যেইজন্য আপনাকে প্রথমে ঢাকা - কিশোরগঞ্জ গামী বাসে ওঠতে হবে। অবশ্যই সেই সব বাসগুলোতে ওঠবেন যেগুলো গাজীপুর হয়ে আসে। তারপর নেমে পড়বেন গাজীপুরের টোক বাজারে, যেখান থেকে অটো রিকসায় করে চলে যেতে পারবেন এই দুটি ঐতিহাসিক জায়গায়। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। কেউ ঘুরতে আসলে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন টোক বাজারে অবস্থিত বেশ আলোচিত হোটেল নিরিবিলিতে। এখানে প্রায় ১০০ প্রকারের ভর্তা পাওয়া যায় বলে হোটেলটি বেশ বিখ্যাত। তাছাড়া অন্যান্য হোটেলগুলোতেও দেশীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।
তো যারা একদিনে জন্য কোথাও ঘুরতে যেতে চান, তারা ঘুরে যেতে পারেন এগারসিন্ধু গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক জায়গাগুলো।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য।
#bdlgwritingcontest #bdlg200 #200meetup