একজন লোকাল গাইড হিসেবে ঘোরাঘুরি করাটা আমার নেশা বলা যায়। সেই নেশা থেকেই গুগল ম্যাপের সাহায্যে কিছুদিন আগে রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও বাংলাদেশের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে আসলাম। রাঙ্গামাটি আমার প্রথম ভ্রমণ ছিল তাই গুগল ম্যাপ আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।
আজকে আমি রাঙ্গামাটি ভ্রমণ নিয়ে লিখবঃ
আমাদের পৃথিবীটা যে কত সুন্দর তা আপনি বাইরে বের না হলে বুঝতে পারবেন না। দেশকে জানতে হলে, বুঝতে হলে আগে দেশের মধ্যে ঘুরতে হবে। বাংলাদেশের মধ্যে সুন্দর যতগুলো জায়গা তার মধ্যে রাঙ্গামাটি অন্যতম একটি জায়গা। রাঙামাটিতে অনেকগুলো পর্যটন এলাকা রয়েছে। তারমধ্যে আমি কাপ্তাই লেক, রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ ভ্রমণ করেছি। আজকের পোষ্টে আমার ভ্রমণ কাহিনী আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আমাদের এলাকা থেকে বাসে করে এটি আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। তাদের সাথেই আমি রাঙ্গামাটি ভ্রমনে গিয়েছিলাম।
আমি সকালে গিয়ে রাঙ্গামাটি পৌঁছাই। রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে উঁচু নিচু রাস্তা আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সকালের মিষ্টি সূর্যের আলো পড়েছিল, ব্যাপারটা অনেক উপভোগ করেছিলাম। বাসে করে যাওয়ার সময় পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম।।
রাঙ্গামাটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এর পাশের জায়গাটা খুবই অসাধারণ ছিল। সেখান থেকে কাপ্তাই লেকের খুবই অসাধারণ একটা ভিউ ছিল। দূরে পাহাড়, নীল আকাশের নিচে কাপ্তাই লেকের নীল পানি অসাধারণ ছিলো।। সত্যি জায়গা দেখে অন্তরটা জুড়িয়ে গিয়েছে।
এরপর কাপ্তাই লেকে আমরা গোসল করি। লেকের পানি গুলো অনেক স্বচ্ছ ছিল। গরমের মধ্যে কাপ্তাই লেকে গোসল করার পরে শরীরে একটা প্রশান্তি বয়ে আসে। এরপরে আমরা দুপুরে
খেয়ে করে ট্রলারে করে কাপ্তাই লেক ভ্রমণে বের হই। লেকের পাড়ে বাঁশ দিয়ে পানিতে বানানো বাড়িঘর গুলো দেখতে খুবই অসাধারণ লাগছিল। বলতে গেলে আমার কাছে মনে হয়েছিল আমি ইতালির ভেনিস শহরে আছি।
আমরা সবাই অনেক ছবি তুলি এবং আমাদের সবার গ্রুপ ছবি তুলি।
কাপ্তাই লেক ভ্রমণ করে আমরা রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ ভ্রমণে যাই। কারন রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান আকর্ষন হলো ঝুলন্ত সেতু। ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে হলে আপনাকে ২০টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে।
সাধারণত রাঙামাটি গিয়ে এই ঝুলন্ত সেতুটি না দেখে কেউ ফেরত আসেন না। রাঙামাটি শহরের শেষপ্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় জায়গা। এ সেতুকে বলা হয় ‘Symbol of Rangamati’
সেতুটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি আপনাকে এনে দেবে ভিন্ন এটি আনন্দ। এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন। কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
এর পাশেই দেশকে ভালোবেসে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের একটি লেখা আপনার চোখের নজরে আসবে। যেখানে লেখা "সবার উপরে দেশ, আমার দেশ আমার অহংকার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ "
ঝুলন্ত ব্রিজ পার হয়ে আদিবাসী গ্রাম রয়েছে, যেখানে আমরা আনারস খেয়েছিলাম আনারসের দাম ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। তীব্র গরমে হালকা ঝাল দিয়ে আনারস খেতে খুবই ভাল লেগেছিল।
এরপর আর একটু এগিয়ে আমরা বিভিন্ন দোকান দেখতে পাই আদিবাসীদের। এখানে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিল। তবে জায়গাটা অনেক উঁচু থাকায় কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য আপনার দৃষ্টি কেড়ে নেবে।। অনেক বাতাস আর সাথে সবুজ গাছপালা ও নীল আকাশের নিচে লেকের নীর পানি খুবই অসাধারণ একটি পরিবেশ। আপনি বাংলাদেশে থেকে যদি রাঙ্গামাটি ভ্রমণ না করেন তাহলে আপনার জীবনে অনেক কিছুই মিস করে ফেলেছেন।
বিশেষ কিছু কথাঃ
** রাঙ্গামাটিতে আসার জন্য ঢাকা থেকে বা চট্টগ্রাম থেকে বাস সরাসরি বাস পাওয়া যায়,
** রাঙ্গামাটিতে এক স্পট থেকে অন্য স্পটে যাওয়ার জন্য আপনি সিএনজি গাড়ি পাবেন।
** এখানে খাবার জন্য হোটেল রয়েছে ও থাকার জন্য বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে।
** কাপ্তাই লেক ঘোরার জন্য আপনার ট্রলার ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে ট্রলার চালকরা আপনাকে বেশ কয়েকটি স্পট ঘুরাতে পারবে।
দেশকে ভালবাসুন, দেশের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখুন আর অবশ্যই পর্যটন স্থানগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
(পরবর্তী পোস্টে আমি কক্সবাজার সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিয়ে লিখবো)
ছবির এলবামঃ
This Is My Photo album. You Can see my travel photo for better view.