তীব্র গরম, রমজান ও বিভিন্ন কারনে বহুদিন দুরে কোথাও সাইকেলে ভ্রমণ হয়নি। একদিনের প্ল্যান অনুযায়ী অনেকদিন ধরেই চাঁদপুর যাবো করেও যাওয়া হচ্ছিলো না। তাই এইবারের গন্তব্য ইলিশের শহর চাঁদপুর ।
Route: Sonargaon- Motlob- Chandpur- Gazaria- Sonargaon.
Travelling Date: 10/06/2021
Total Cycling on this day: 111 KM.
Total Launch journey: 38 km.
Elevation gain: 356 meter.
Srava route link from Sonargaon to Chandpur
Strava route link from Gazaria to Sonargaon
ফজর পড়ে রওনা দিয়ে হাইওয়ে তে শুরু করলাম। মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজ নামার সময় সবসময়ই পাহাড়ের ডাউনহিল এর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। দাউদকান্দি পার হয়ে ডানে মতলব এর রাস্তায় ঢুকলাম। এই রাস্তায় সিএনজি আর অটো চলে মুলত বেশী।
অনেক আগে এই রাস্তায় সিএনজি করে ফরহাদ তার গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ নিয়ে গিয়েছিল, তাই রাস্তা কিছুটা চেনা। প্রথম ব্রেক নেই গোয়ালমারী বাজারে । নাস্তা খেয়ে হেলে দুলে আগাতে থাকি তিনজন। মুলত এই বাজারের পরেই প্রকৃতির আসল রুপ শুরু হয়।
ধনাগোদা নদীর পাশ ঘেষে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। সেই বাধের উপর মাখনের মতো রাস্তা। একপাশে নদী তো অন্য পাশে সবুজ প্রান্তর, বা কোথাও ভুট্টার দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেত। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে স্তুপ করে রাখা ভুট্টা। ধান ভাংগানোর মেশিন সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, কিন্তু ভুট্টা ভাংগার মেশিন দেখলাম এই প্রথম।
এইবার ভুট্টার ফলন ভালো হয়নি অনাবৃষ্টিতে।
মেরিন ড্রাইভের পরে আমার দেখা সবচেয়ে স্মুথ রাস্তা এই মতলবের বেড়িবাঁধ এর রাস্তা। একটা স্পীড ব্রেকার ও নাই, একটা ব্রীজ ও নাই। রাস্তায় এক চাচা থেকে তার গাছের এক কেজি আম নিলাম, আরেক চাচা থেকে অতি অল্প দামে কলা। এইসব খাচ্ছি আর এগিয়ে চলছি হেলে দুলে।
বাবুর হাট বাজারে গিয়ে একজন এর জন্য অপেক্ষা করতে দাড়ালাম একটা ওয়ার্কশপ এর সামনে। মুরব্বি করে এক লোক ডেকে ভিতরে ফ্যানের নিচে বসতে বলল। উনি এস আর এর চাকরি করেছেন শুধুমাত্র ৬৪ জেলা ঘুরার জন্য। শেষ ও করেছেন বহু আগে।
একদিন হিরো সাইকেল চালিয়ে চাঁদপুর থেকে দাউদকান্দি হয়ে ঢাকা গিয়েছেন শখের বশে। তাতে অবশ্য তার সারাদিন লেগে গিয়েছিল, আস্তে আস্তে চালিয়েছিলেন। ওই সময় ছবি তুলে রাখার মত হাতে হাতে ফোন ছিল না, কিন্তু এমন মুরুব্বিদের রোমাঞ্চকর গল্প প্রায়ই শুনি। আসলে ভ্রমণ পাগল মানুষ সেই আদিম যুগ থেকেই আছে। বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
১১ টার মধ্যেই চাঁদপুর পৌঁছে যাই। সারাদিন রৌদ্র ছায়ার খেলা থাকলেও শহরে পৌঁছানোর সাথে সাথেই ঝুম বৃষ্টি নামে। আধা ঘন্টা যাবত প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট পানিতে থৈথৈ করছিল। দেখা করলাম সাফা ভাই এর সাথে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসায় ফিরব লঞ্চে করে। খবর নিয়ে দেখলাম নারায়ণগঞ্জ এর লঞ্চ এক ঘন্টা পর পর ছাড়ে। শেষ লঞ্চ ৪ টায়।
মুলহেড বড় স্টেশন, তিন নদীর মোহনায় গিয়ে শরীর শীতল করা বাতাস দিয়ে শীতল হলাম। সাথে আছে ট্রাভেলার ও সাইক্লিস্ট safa ভাই। আমার এই জায়গায় দ্বিতীয়বার এর মত আসা, কেমন যেন একটা ভালোলাগা কাজ করে এখানে এলেই। যোহরের নামাজের পর সাফা ভাই আমাদের ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করলেন The Hilsha kitchen
পরিকল্পনা অনুযায়ী লঞ্চ ঘাটে যাওয়ার সময় Sabuj ভাইয়ের সাইকেল এ মারাত্মক প্রবলেম দেখা দেয়।
তাও কোনমতে ঘাটে গিয়ে দেখি লঞ্চ ছেড়ে দিসে ৩টার টা। তারপর প্রবলেম হওয়া চাকা নিয়ে গিয়ে ঠিক করে আনি, যার কারনে ওয়ান মিনিটের আইসক্রিম টা এবার মিস হয়ে গেলো। যাই হোক ঠিক করে এসে উঠা মাত্রই ৪ টার শেষ লঞ্চ ছেড়ে দিলো।
এইবার আরেকটা অন্যরকম ভ্রমণ এর শুরু। ঢাকার লঞ্চটা মূল নদীর মাঝ দিয়ে যায়। আর এই ছোট লঞ্চ যায় একদম পাড় ঘেষে, তাই নদী পাড়ের জীবন জীবিকা উপভোগ করা যায় প্রান ভরে। চর ভরা গরুর পাল, নদীতে শুশুক এর লাফ, শিশুদের জলকেলি দেখতে দেখতে লঞ্চ এগিয়ে চলছে ধীর গতিতে।
একটু পর পর বেশকিছু ঘাট ধরে। ছাদে বসে বসে অনেক জিনিস খেয়ে ফেলসি এর মধ্যে ছিলো চা, চিপস, আর আচার। হকার রা এই ঘাটে উঠে তো ওই ঘাটে নেমে যায়। ট্রেন আর লঞ্চের এই জিনিসটা বেশ ভালো লাগে আমার। নীরবে উপভোগ করি। দেখতে দেখতে মাগরিব এর সময় নামলাম গজারিয়া ঘাটে। নামাজ পড়ে একটানে সোনারগাঁও এই প্ল্যান নিয়েই নেমেছি।
বিপত্তি পিছু ছাড়েনি, সাইকেল ঠিক করার পরে হাব এর লক করার শ্যাফট টা নষ্ট হয়ে গেলো। পরে তার দিয়ে ফ্রেমের সাথে বেধে, ওইটা আমি চালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। চালানো অবস্থায় পেছনের চাকা যেকোনো সময় খুলে যেতে পারে এই ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছি। পেছনে Akash ভাইকে রাখলাম যেন উনার পুরো খেয়াল আমার পেছনের চাকায় রাখে।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সুন্দর একটা ভ্রমণ, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাথে শেষ করিয়েছেন।
সাথে যা নিয়েছিঃ
১. হ্যালমেট
২. পানি
৩. হ্যান্ড স্লীভস
৪. প্যাচকিট, পাম্পার, এক্সট্রা টিউব
নোটঃ ভ্রমণে গিয়ে পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ করবো না।
ভ্রমণে গিয়ে নামাজ বাদ দিবো না ইনশাআল্লাহ।