দক্ষিনের পথে ১ম দিন।
অফিস শেষে বাসায় এসে গোসল খাওয়া আর টুকটাক কাজ শেষ করে যখন ঘড়িতে তাকালাম তখন ঘন্টার কাটা ৪ টা ছুই ছুই। কথা ছিলো সময় নিয়ে বের হবো, লঞ্চে জায়গা দখল করার প্রতিযোগিতায় প্রথম না হতে পারি। অন্তত শেষ যেন না হই।
আমার দেখা দেশের সবচেয়ে হাই প্রেশার আর নিয়ম না মেনে উল্টা যানবাহন চলার পথ চিটাগাং রোড থেকে ঢাকা অব্দি যেহেতু রওনা হয়েছি, সেহেতু নিজেদের প্রেশার যতোই বাড়াই কাজ হচ্ছে না।
ট্যুরের আগে ব্যাগের ওজন যতো কম রাখা যায় পার্টনার, বলা আমি নিজেই নিজের ব্যাগের ওজন বাড়িয়ে ফেললাম। অবশেষে দুই ভবঘুরে দক্ষিনের পথে পা বাড়ানোর জন্য যখন সদরঘাট গেলাম ততক্ষনে আমাদের ও বারোটা বাজেনি, আর ঘড়িতেও সন্ধ্যে সাতটা মাত্র।
লঞ্চে উঠে অন্য সবার মতো চাদর, কাঁথা নেই দেখে প্রথমে আফসোস লাগলেও সাথে সাথেই হ্যামক বিছিয়ে দিয়ে সেই দুঃখ গুছিয়ে নিয়েছি। এখন সবার নজর আমাদের দিকে, লাল হ্যামকের উপর আসন গেড়ে বসায় সবাই গতিবিধি লক্ষ্য করছে। লঞ্চ ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে রাতের খাবার সেরে নিলাম। কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর আপাতত ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, না হলে কাল লং রুটে চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
লঞ্চ ভিড়ে গেলো ভোর ৪ টার মধ্যেই, ঢিলেমি করেও আধাঘন্টার বেশী দেরী করতে পারিনি। সব গুছিয়ে রওনা দিলাম দক্ষিন পশ্চিমের পথে। যেসব জেলায় কখনো যাইনি, দেখিনি কেমন তার জনপদ, কেমন তার জীবনধারা সেসব দেখবো আজ।
ফজরের আগে স্বভাবতই রাস্তা ফাকা, আর স্মুথ রাস্তা পেয়ে স্যাডেলে বসে প্যাডেল মারার আগেই মনে হলো ঝালকাঠি চলে আসছি। পেট্রোল পাম্পে থেমে তেল নেওয়ার প্রয়োজন না থাকায় শুধু ফজর নামাজ পড়ে আবার রওনা দিতেই ঝালকাঠি লঞ্চ ঘাট। সেখানেই আজকের সূর্যোদয় দেখে কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
স্থাপত্যশৈলী দেখে মনে হলো বেশ বড় আর সুন্দর ছিলো তাদের জমিদারি। দুনিয়ার সকল ক্ষমতা ক্ষনস্থায়ী, এইসব দেখে তাই আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। আবার সেই ফিরতি পথে সুপারি, আমড়া, আর পেয়ারার বাগান দেখতে দেখতে পিরোজপুরের পথে আগানো শুরু করলাম। বেকুটিয়া ঘাট পার হয়েই পিরোজপুর।
আমার এই ট্যুরের প্ল্যান ছিলো চালাবো কম ল্যাটাবো বেশী। কিন্তু সকালে বেশ এগিয়ে যাওয়ায় একমাত্র সঙ্গী আকাশ ভাই বলল, ষাট গুম্বজ মসজিদ এতো কাছে এসে না দেখে গেলে আফসোস থেকে যাবে। আমি আগে একবার ঘুরে যাওয়াতে আগ্রহ দেখাচ্ছিলাম না। তার উপর ৬০ কিলো বেশী চালানো আমার প্ল্যানে ছিলো না।
পরে রাজি হলাম এবং বাগেরহাটের পথে চলতে থাকলাম। রাস্তার কার্পেটিং এর কাজ অল্প কয়দিন আগেই করেছে তাই রাস্তা যথেষ্ট স্মুথ। দুইপাশে সবুজের সমারোহ। অবশেষে বাগেরহাটের ষাট গুম্বজ মসজিদ দেখে দুপুরে খেয়ে রওনা দেওয়ার পর ডান হাটুতে আস্তে আস্তে পেইন অনুভব করা শুরু করলাম।
সারাদিন সেই পেইন নিয়েই চালালাম, তারপর এশার একটু পরে মঠবাড়িয়া পৌঁছে গেলাম। এক অপরিচিত ভাই তার বাড়িতে থাকার ও রাতে খাওয়ার ব্যাবস্থা করে রেখেছিলেন আগে থেকেই। আলহামদুলিল্লাহ সবই আল্লাহর ইচ্ছে। এমন অপরিচিত জায়গায় এমন আপ্যায়ন আল্লাহর অশেষ রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওই ভাইয়ের সাইকেল এর কিছু সমস্যা সমাধান করে ঘুমাতে গেলাম।
এক ঘুমে ফজরের আজান। মসজিদ, মাদ্রাসা ছাড়া এমন শান্তির ঘুম আমি কোথাও পাইনি আজ অব্দি।
ওইদিনের মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব ১৭০ কিলো
১৭ নভেম্বর ২০২১ || পিরোজপুর
গল্প চলমান…
নিচে ভ্রমনের কিছু চলমান চিত্রের লিংক দেওয়া হলো।
#ConnectdayBangladesh #localguidesbd #meetup190








