বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান মুজিবনগর:
মুজিবনগর এর পূর্বনাম বৈদনাথতলা। বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায় অবস্তিত একটি ঐতিহাসিক স্থান ।
১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়।
মেহেরপুর জেলার বর্তমান মুজিবনগর থানার ভবেরপাড়ার ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে অস্থায়ী সরকার হিসাবে সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
মুজিবনগর সরকারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স।
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের পর এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল বাংলাদেশের মানচিত্র। আমাদের যুদ্ধকালিন অবস্থার রূপক। কোথায়, কোন এলাকায় যুদ্ধ হয়েছে, শরণার্থীরা কীভাবে সে সময় ভারত গিয়েছিলেন বা দেশ ছাড়েন।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে ভাগ করে দেখানো হয়েছে মানচিত্রে।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত
সিরামিকের ইট দিয়ে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের লাল মঞ্চ নামে পরিচিত।
এখানে ২৩ টি ত্রিভূজ দেয়াল বৃত্তাকার সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে এবং এটিই হলো স্মৃতিসৌধ । ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে এগুলো স্থাপিত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। তারপর থেকে প্রতিটি দেয়াল দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে।
স্মৃতিসৌধটিতে সামনে একটু উচুতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলিকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া স্মৃতিসৌধের ভূমি থেকে ৩ ফুট উচুতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ স্থানটি ভালোভাবে দেখার জন্য তৈরী করা হয়েছে উচু টাওয়ার।
যাতায়াত:
মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে মুজিবনগরে এর দূরত্ব ১৮ কি: মি:। বাস, স্থানীয় যান টেম্পু/লছিমন/করিমন এর সাহায্যে ৩০ মি: সময়ে পৌছানো যায়। গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মেহেরপুর জেলায় ভ্রমণের জন্য সরাসরি বাস পাওয়া যায়। এছাড়া রাজশাহী থেকে মেহেরপুর জেলার সরাসরি বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু আছে মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে আসে।
মেহেরপুর জেলায় কোন রেলপথ নাই। তবে পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা বা কুষ্টিয়া জেলা পর্যন্ত রেলপথে এসে তারপর স্থানীয় যানবহনের সাহায্যে আসা যায়।
থাকবেন কোথায় :
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পর্যটন করপোর্রেশনের হোটেলে আবাসনের সুব্যবস্থা আছে। মুজিবনগরে আছে মেহেরপুর জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ‘সূর্যোদয়’। কক্ষ খালি থাকলে এখানে থাকা যায়। মেহেরপুর জেলা সদরেও সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে।
বাস স্ট্যান্ড এর কাছে আছে ফিন টাওয়ার হোটেল, নাইট বিলাস হোটেল এবং শাহজাদী আবাসিক হোটেল। বড় বাজারের কাছে আছে হোটেল মিতা, হোটেল অবকাশ, হোটেল অনাবিল ইত্যাদি।