মহিষের দই ভোলা জেলায় ব্যাপকভাবে লালিত একটি ঐতিহ্যবাহী দুগ্ধজাত পণ্য। স্থানীয়ভাবে এটি ‘বৈষা দদি’ নামে পরিচিত। উৎসব-পার্বণে এর চাহিদা বাড়ে। এই অঞ্চলটি, তার কৃষি ও দুগ্ধ চাষ পদ্ধতির জন্য পরিচিত, উচ্চ মানের মহিষের দই উৎপন্ন করে যা তার সমৃদ্ধ গঠনের জন্য বিখ্যাত।
উৎপাদন প্রক্রিয়া:
প্রক্রিয়াটি শুরু হয় তাজা মহিষের দুধ সংগ্রহের মাধ্যমে। প্রতিদিন ভোরে দুধেল মহিষগুলোর দুধ দোহন করেন রাখাল। তখনই চরে হাজির হন দুধের ব্যাপারী। ওই ব্যাপারীদের বলা হয় ঘোষ। ঘোষ আবার দুধ বিক্রি করে দই বিক্রেতাদের কাছে। ভোলায় মহিষগুলি সাধারণত একটি মুক্ত পরিসরের পরিবেশে লালন-পালন করা হয়, যাতে তারা চর্বি এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ দুধ উত্পাদন করে।
কাঁচা দই যে পাত্রে বসানো হয়, তাকে বলে টালি। এই টালিতে মহিষের কাঁচা দুধ ঢেলে একটু শুকনো স্থানে যত্নে বসিয়ে রাখলে ১৪-১৫ ঘণ্টা পর দই জমে। শীতে জমতে সময় বেশি নেয়। তবে শীতের দই খুবই সুস্বাদু। ওপরে পুরু স্তরের মাখন পড়ে।
মাটির পাত্রগুলিকে পছন্দ করা হয় কারণ তারা অতিরিক্ত জল শোষণ করে এবং প্রাকৃতিক শীতলতার মাধ্যমে দইয়ের স্বাদ বাড়ায়। মহিষের দুধ ঘন। পানির আধিক্য কম। মাটির পাতিলে দই পাতলে সে পানিটুকুও শুষে নেয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের পরে দইয়ের ওপর ঘন মাখন জমে। ভোলাবাসী চিনি বা গুড় মিশিয়ে কিংবা অনেকে লবণ মিশিয়ে খান। এটা বহনযোগ্য।
ঐতিহ্যবাহী কাঁচা দইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চর, মহিষ আর রাখফাল। জনবিচ্ছিন্ন চরগুলোতে রয়েছে বাথান। ধু ধু প্রান্তর। রাখওয়াল থেকে রাখাল বা রাখফাল। রাখালেরা থাকে কাদাজলের ওপর উঁচু মাচান করা টংঘরে আর মহিষ কেল্লায়। মহিষের দই উৎপাদন ও বিক্রি ভোলার অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে।
ভোলা জেলার মহিষের দই শুধু একটি দুগ্ধজাত পণ্য নয়; এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ কৃষি ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক।
#bhola #buffalo