নমস্কার বিশ্বের সমস্ত লোকাল গাইডদের, কলকাতার পক্ষ থেকে।
এইটা বাংলাতে আমার প্রথম পোস্ট।
আমি একজন ভ্রমণপিপাসু এবং খাদ্যপ্রেমী মানুষ। গল্পের খোঁজে পথে নামি, আর স্বাদের খোঁজে থেমে যাই। সম্প্রতি এমনই এক অভিজ্ঞতা হলো, যেখানে খাবার শুধু পেট ভরাল না, মনও ভরিয়ে দিল। আমি বলছি কস্তুরি রেস্তোরাঁর কথা — কলকাতার বুকে লুকিয়ে থাকা এক স্বাদভরা কোষাগার, যেখানে বাংলাদেশ এখনো বাস করে প্রতিটি থালার মধ্যে।
১৯৯০-এর দশকে কিছু বাংলাদেশি অভিবাসীর হাত ধরে কস্তুরির সূচনা। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—বাংলাদেশের মাটির, নদীর, আর রান্নাঘরের গন্ধকে কলকাতায় পৌঁছে দেওয়া। আজ এই রেস্তোরাঁর অনেকগুলো শাখা ছড়িয়ে পড়েছে শহরের নানা প্রান্তে, কিন্তু যদি আপনি আসল স্বাদ পেতে চান, তাহলে চলে যান ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (Free English School Street)-এর সেই প্রথম ও মূল শাখায়।
ছোট্ট, সাধারণ, কিছুটা সাদামাটা এই জায়গাটি পার্ক স্ট্রিটের কাছাকাছি অবস্থিত। আপনি চাইলে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন থেকে হেঁটে বা রিকশা করে চলে যেতে পারেন। এখানে কোনও চাকচিক্য নেই, তবে আছে একেবারে আদি বাংলাদেশের ঘরোয়া রান্নার স্বাদ।
মেনু যেন বাংলাদেশের মানচিত্র—
ঢাকাই ঘরানার রান্না
কক্সবাজারের থালি – সাগরের গন্ধমাখা সামুদ্রিক খাবার
চট্টগ্রামের থালা – ঝাল, মশলাদার, প্রাণবন্ত স্বাদ
কুমিল্লার নিরামিষ থালা – নিরামিষ খাবারে অনবদ্য কারুকাজ
আমি যেটুকু খেয়েছিলাম, তা বললে জিভে জল আসবে এখনো:
রুই সর্ষে
– সর্ষের তেলে তৈরি রুই মাছের ঝোল, এতটাই ঝাঁঝালো আর টক-মিষ্টি ব্যালান্সড, মনে হচ্ছিল আমি হয়তো ঢাকার কোনও বাসায় বসে আছি।
কচুপাতা দিয়ে চিংড়ি
– চিংড়ি মাছ, কচুপাতায় মোড়ানো, ধীরে ধীরে রান্না করা — একেবারে গলে যাওয়ার মতো নরম আর সুস্বাদু।
ভেটকি পাতুরি
– কলাপাতায় মোড়ানো ভেটকি, সর্ষে মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করে স্টিম করা। প্রতিটি কামড়ে একটা ধোঁয়াটে, টক, ঝাল আর স্নিগ্ধ স্বাদের বিস্ফোরণ।
প্রতিটা পদ যেন একেকটা চিঠি — কখনও ঢাকার, কখনও চট্টগ্রামের, আবার কখনও কক্সবাজারের। শুধু স্বাদ নয়, এখানে স্মৃতির স্বাদও পাওয়া যায়। যেন আপনি বাংলাদেশেরই কোনও রান্নাঘরে বসে খাচ্ছেন — সেখানে রান্নার রেসিপি মুখে মুখে চলে, বইয়ে নয়।
আরেকবার মনে করিয়ে দিই—কলকাতায় কস্তুরির একাধিক শাখা থাকলেও, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মূল শাখাটির জবাব নেই। এখানেই পাবেন সেই আদিম ঘরোয়া ছোঁয়া, সেই মাতৃভাষার মতো স্বাদ, যা শুধু খাবার নয়, এক টুকরো আবেগ।
Check my review of this business place - https://maps.app.goo.gl/Qm5qDmEYRQ17Nbcw8
বাংলাদেশের স্বাদ যদি চেখে দেখতে চান, পাসপোর্ট ছাড়াই এই কস্তুরিই আপনাকে সেই ভ্রমণের সুযোগ দেবে।
প্রবেশে সুবিধা (Accessibility for Disabled Persons):
কস্তুরি রেস্তোরাঁর মূল শাখা, যা ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে অবস্থিত, একটি পুরনো গড়নের বিল্ডিংয়ে অবস্থিত। রেস্তোরাঁটি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং ভেতরে বসার জায়গা কিছুটা সংকীর্ণ। প্রবেশপথে কয়েকটি সিঁড়ি রয়েছে, এবং বর্তমানে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য র্যাম্প বা বিশেষ প্রবেশব্যবস্থা নেই। ভেতরের টেবিল-চেয়ারগুলো ঘনভাবে বসানো, ফলে চলাচলও কিছুটা সীমিত হতে পারে।
পরামর্শ: হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য শহরের অন্য কোনো শাখা (যেমন নিউ মার্কেট বা সল্ট লেক-এর বড় শাখা) হয়তো তুলনামূলকভাবে বেশি উপযুক্ত হতে পারে।