আমর লেখা টাইটেল দেখে আপনার অবাক লাগছে তাইনা?
অবাক লাগলেও এটা সত্য যে কলাপাতা ও কচুরিপানা পাতা দিয়েও শিল্পকর্ম তৈরি করা যায়।
বিভিন্ন শিল্প সংস্কৃতির দেশ- বাংলাদেশে। এমন একটা অবহেলিত জিনিসও যে শিল্পকর্মের অংশ হবে তা অনেকেরই ধারনার বাইরে।
আসুন এই শিল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই।
এটা কলাপাতা দিয়ে তৈরি কড়াই আকৃতির একটি জিনিস।
পাতা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরির আগে সর্বপ্রথম পাতাগুলো প্রসেস করতে হয়। সেক্ষেত্রে কলা ও কচুরিপানা গাছের রিষ্টপুষ্ট পাতাগুলো বাছাই করে গাছ থেকে কেটে নিয়ে রোদে শুকানো হয়।
শুকাতে দেয়ার আগে কলাপাতাকে পর্যাপ্ত আকার অনুযায়ী কেটে নিতে হয়। এর মধ্যে আবার বিশেষ কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয় যাতে পাতাগুলো ভেঙে বা নষ্ট হয়ে না যায়।
কচুরিপানা পাতার ক্ষেত্রেও ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
দুটিরই পার অংশ কেটে ফেলা হয় এবং পাতার কান্ড প্রসেস করা হয়
শুকাতে দেয়া কচুরিপানা পাতা।
প্রয়োজনমত শুকানোর পরে মেশিনের মাধ্যমে এক টুকরার সাথে অন্য টুকরা জোড়া লাগানো হয় এবং সুতার আকৃতিতে পেচানো হয়।
দড়ির আকৃতি বানানো।
এবং এই সুতা ৩০-৪০ ফুটের মতো লম্বা করে বানানো হয়। এর বেশি লম্বা বানালে পেচিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই বেশি লম্বা বানায় না।
পেচানো দড়ি সোজা করা হচ্ছে।
এই সুতা তারা গুদামজাত করে রাখে যাতে সংকট না পরে।
এভাবে রেখে দেয়া হয়।
এরপর দক্ষ কারিগরদের মাধ্যমে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সৌখিন ব্যাবহার্য জিনিসপত্র যেমন:- ঝুড়ি, টুপড়ি, টব, পাপোশ ইত্যাদি।
একনজরে কলাপাতা দিয়ে তৈরিকৃত জিনিসপত্র।
আর এগুলো সব তৈরি হয় সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করার মাধ্যমে।
মাঝারি আকারের একটি টিনের ঘর, ঘরের মধ্যে কয়েকটি বিশেষ সেলাই মেশিন আর কয়েকজন দক্ষ কারিগর।
একজন কারিগর তার কাজে ব্যাস্ত
সেলাই বোঝানোর উদ্দেশ্যে এই ছবিটি দেওয়া হলো।
এই ঘরেই কাজ চলে প্রতিনিয়ত। সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয় জিনিস তৈরির কার্যক্রম চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
প্রক্রিয়া :-
প্রথমে কলাপাতার সুতা একটু জড়ো করে সেলাই করে নেয় সেই কেন্দ্রীক পয়েন্ট থেকে পেচিয়ে পেচিয়ে সেলাই শুরু করে, একটু সেলাই করার পরে পরেই ফিতা দিয়ে মেপে দেখে যে আয়তন ঠিক আছে কিনা। ঠিক থাকলে আবার সেলানো শুরু করে।
কোন জিনিসটা বানাবে সে অনুযায়ী আকৃতি দিতে থাকে।
ধীরে ধীরে সাবধানতার সাথেই করতে থাকে এই কাজ।
এরপরই আস্তে আস্তে তৈরি করে ফেলে তাদের কাঙ্ক্ষিত জিনিস।
এভাবে তারা দিনভর জিনিস তৈরির কাজ চলমান রাখে।
এভাবে ১-২ সপ্তাহ ধরে তৈরি করতে থাকা জিনিসগুলো একসাথে জমা করে। এরপরে সেগুলোর মধ্যে কোন ত্রুটিহীন পন্যগুলো বাছাই করা হয়।
বাছাই করে সেগুলো বড় বড় কার্টুনের মধ্যে খুব যত্ন করে রপ্তানির উপযোগী করে মোড়কজাত করে যাতে নাড়াচাড়ায় কোন ক্ষতি না হয়।
এর পরে সেগুলো বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। ( এখানকার কোনো পন্য বাংলাদেশে খুচরা/ পাইকারি বিক্রি করা হয়না )
সবগুলো সরাসরি বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা হয়।
এর মাধ্যমে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয় সেই সাথে দেশের শিল্পকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরা সম্ভব হয়।
দেশে এমন আরো কয়েকটি কারখানা থাকলে রপ্তানি ক্ষেত্রে এগুলো আরো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমি মনে করি এখানকার কারিগরদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো কারিগর বৃদ্ধি করা উচিৎ এবং আমাদের দেশেও এগুলোর ব্যাবহারের প্রচলন করা উচিৎ।
এগুলো সহযে পচনশীল ও বেশ পরিবেশবান্ধব পণ্য।
প্লাস্টিকের ব্যাবহার কমিয়ে এগুলো ব্যাবহার করা পরিবেশের জন্য খুব ভালো।