কাপ্তাই লেক বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কর্ণফুলি নদীর উপর ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৫৪.৭ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৬২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাঁধের কারণে প্রায় ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি এবং ২৯ বর্গমাইল সংরক্ষিত বনাঞ্চল ডুবে যায়। এতে প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের এক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। বাঁধের ফলে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যা বর্তমানে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন।
কাপ্তাই লেক ইংরেজি “এইচ” আকৃতির, যা দুটি বাহুতে বিভক্ত। এর দুটি বাহু সুভলংয়ের কাছে একটি সংকীর্ণ গিরিসঙ্কট দ্বারা সংযুক্ত। ডান বাহুটি মাইনি ও কাসালং নদী দ্বারা এবং পাশ দিয়ে কর্ণফুলি নদী দ্বারা পুষ্ট, অন্যদিকে বাম বাহুটি চেঙ্গী ও রাইনখিয়াং নদী দ্বারা পুষ্ট। কর্ণফুলি নদীর তিনটি প্রধান শাখার মধ্যে রাঙামাটি ও ধুলিয়াছড়ি শাখা বর্তমানে কাপ্তাই বাঁধের নিচে নিমজ্জিত। এই হ্রদের গড় গভীরতা ৯ মিটার এবং সর্বাধিক গভীরতা ৩২ মিটার।
কাপ্তাই লেক দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শুভলং ঝর্ণা, বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার এবং নতুন চাকমা রাজবাড়ি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। লেকের আশপাশের পাহাড়ি সৌন্দর্য ও নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। এছাড়া, হ্রদে নৌকা ভ্রমণ ও ট্রলার সেবার মাধ্যমে পর্যটকরা সহজেই প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
এই হ্রদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও কৃষি, মৎস্যচাষ ও স্থানীয় পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হ্রদের পানির উচ্চতার পরিবর্তনের ফলে তীরবর্তী ভূমি সেচ সুবিধা পেয়ে চাষের জন্য উর্বর হয়ে ওঠে। বছরে প্রায় ৭,০০০ টন মাছ উৎপাদিত হয়, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।