বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার নাইতং মৌজায় অবস্থিত বগা লেক বা বগাকাইন হ্রদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির একটি হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,২৪৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদটি কেওকারাডং পর্বতের গা ঘেঁষে অবস্থিত। এটি একটি চোঙা আকৃতির হ্রদ, যা দেখতে অনেকটা মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, এটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা উল্কাপিণ্ড পতনের ফলে সৃষ্ট হতে পারে। হ্রদের পানির অম্লধর্মী প্রকৃতির কারণে পূর্বে মনে করা হতো এতে জলজ প্রাণী টিকে থাকতে পারে না, তবে বর্তমানে প্রচুর শ্যাওলা, শাপলা ও মাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
রহস্যময় সৃষ্টি ও পৌরাণিক কাহিনী
বগা লেক নিয়ে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের নানা পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। বম, ম্রো, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, অনেক আগে পাহাড়ের একটি গুহায় এক ড্রাগন বাস করতো। ড্রাগন দেবতাকে তুষ্ট করতে গবাদি পশু উৎসর্গ করা হতো। একবার ড্রাগনটি হত্যার পর পাহাড়টি ধসে জলমগ্ন হয়ে যায় এবং গ্রামগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। অন্য একটি উপকথায় বলা হয়েছে, এখানে এক বিশাল সাপ বাস করতো, যা গ্রামবাসীদের খেয়ে ফেলতো। এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে সাপটি মারা হলে পুরো গ্রামটি ধসে জলমগ্ন হয়ে বগা লেকের সৃষ্টি হয়।
ভূতাত্ত্বিক গঠন ও আকৃতি
বগা লেক তিন দিক থেকে সুউচ্চ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত এবং ৪৬ মিটার উঁচু বাঁশঝাড়ে ঢাকা। এই হ্রদের গভীরতা প্রায় ৩৮ মিটার (১২৫ ফুট)। এটি একটি আবদ্ধ হ্রদ, যার কোনো দৃশ্যমান পানির উৎস নেই এবং পানি বের হওয়ারও পথ নেই। তবে এর নিচে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যা থেকে পানি প্রবাহিত হলে পানির রঙ বদলে ঘোলাটে হয়ে যায়।
বগা লেক ভ্রমণ বান্দরবান পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ। রুমা বাজার থেকে গাইড নিয়ে দীর্ঘ ট্রেকিং করেই এখানে পৌঁছানো যায়। বর্তমানে ট্রেকিং করার প্রয়োজন নেই, চাঁন্দের গাড়ি নিয়েই যাওয়া যায়। চারপাশের সবুজ পাহাড়, নির্জন প্রকৃতি এবং রহস্যময় পরিবেশ এটিকে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়াও, স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা পর্যটকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়।