(আন্দুম পাড়া - তে আমি)
বাংলাদেশের বান্দরবান পার্বত্য জেলার সবচেয়ে গহীন ও রহস্যময় অঞ্চল হলো রিজার্ভ ফরেস্ট। এই গভীর অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত একটি আদিম ও অনগ্রসর পাড়া হলো “আন্দুম পাড়া”। পাড়াটি এতটাই প্রত্যন্ত যে, এখানে সভ্যতার ছোঁয়া খুব কম পৌঁছেছে। পুরো পাড়ায় মাত্র ৭টি ঘর রয়েছে, যেখানে বসবাস করে প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষ। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দারই বয়স ১৮ বছরের নিচে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা হলেও, এখানে বছরে মাত্র ৩০-৪০ জন পর্যটক ট্রেকিং করতে আসেন।
(মাঙছাই পাড়া - তে আমি)
“মাঙছাই পাড়া” থেকে সকালে হালকা নাস্তা করে আমরা হাঁটা শুরু করি। আমাদের এবারের গন্তব্য ছিল “রুই ডাকাতিয়া পাড়া”। প্রায় দুই ঘণ্টা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছাই এই "আন্দুম পাড়া"তে। এটি সত্যিই একটি আদিম গ্রাম, যেখানে আধুনিক জীবনের সুবিধা বলতে প্রায় কিছুই নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কেবল দুই-একটি ঘরে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানকার জীবনযাত্রা এখনও প্রকৃতির সাথে একীভূত।
(পাহাড়ি গহীন বনের মধ্য দিয়ে আমাদের ছুটে চলা)
এ পাড়ার নারীরা এখনো তাদের ঐতিহ্যগত পোশাক পরিধান করেন। তারা নিজেদের হাতে তৈরি কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকেন, তবে শরীরের উপরের অংশে তারা কোনো পোশাক পরেন না। নারীরা সাধারণত পিতল ও রুপার অলংকার পরিধান করেন। সময়ের সাথে কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিশেষত, ১২-১৮ বছর বয়সী নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিছুটা আধুনিক পোশাক পরার চেষ্টা করছে। তবে শহর থেকে দূরবর্তী হওয়ায় আধুনিক পোশাক খুব একটা ব্যবহার করা হয় না। তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকই এখানকার প্রধান পরিধেয়।
আন্দুম পাড়ার মানুষের জীবনযাত্রা সহজ-সরল এবং প্রকৃতি নির্ভর। এখানকার বাসিন্দারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন না, তাই তাদের ছবি তুলে আনা সম্ভব হয়নি। তাদের সরল জীবনধারা, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অভাবনীয়। এই পাড়াটি এখনো আধুনিক সভ্যতা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, যা এক অনন্য অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়।
পাড়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় আমরা একটি গ্রুপ ছবি তুলেছিলাম।