শুভেচ্ছা প্রিয় লোকাল গাইডস,
আশা করছি, আপনারা সবাই দারুণ আছেন এবং সুস্থতার সাথে সময় কাটাচ্ছেন। ২০২২ সালে নিজ জেলা জামালপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় অন্বেষণ করেছিলাম এবং এর মধ্যে উনবিংশ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ অন্যতম। আজ আমরা স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন এই মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং গৌরবের প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর স্থাপত্যশৈলী, হৃদয়কাড়া নান্দনিক কারুকাজ এবং ঐতিহাসিক পটভূমি আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির নিদর্শন বহন করে। সেই ঐতিহ্যকে হৃদয়ে লালন করে, আজ আমরা জামালপুর জেলার ‘উনবিংশ শতাব্দীর স্থাপত্যের মুকুটমণি: রসপাল জামে মসজিদ’ সম্পর্কে জানবো।
জেলা হিসেবে জামালপুর পুরনো না হলেও জনপদ ও জনবসতির দিক থেকে বেশ পুরনো। প্রাচীন জনপদরুপে এ জেলায় রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। আর এ জেলার সরিষাবাড়ী থানা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে পিংনা ইউনিয়নের রসপাল গ্রামে অবস্থিত মোগল আমলে নির্মিত রসপাল পিংনা বড় জামে মসজিদ। মসজিদটি ১৮০৩ সালে নির্মিত এবং ২০১৩ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী, মসজিদটি প্রায় ২২০ বছরের বেশি পুরনো।
ধারণা করা হয়, উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত ৫ গম্বুজ বিশিষ্ট কারুকার্যময় মসজিদটি এ জেলার প্রথম ইট নির্মিত ইমারত। এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলের ইসলামের প্রচার ও প্রসার লাভ করে। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৯৩ ফুট ও প্রস্থে ছিল ৪২ ফুট। মুসল্লিদের অজু ও গোসলের জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশে বিশালাকৃতির একটি পুকুর এবং অজুখনা নির্মাণ করা হয়। সরিষাবাড়ী-পিংনা সড়কের এক পাশে একটি মসজিদ এবং অন্য পাশে রসপাল পিংনা বড় মসজিদের কবরস্থান অবস্থিত।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম মহাকবি কায়কোবাদ (তাঁর প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী) পিংনা ইউনিয়নে পোস্ট মাস্টার থাকাকালীন সময়ে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। তিনি এ মসজিদের সুমধুর আজানের ধ্বনি শুনেই বিখ্যাত আজান কবিতা রচনা করেন।
‘কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি’
(মহাকবি কায়কোবাদের ‘আজান’ কবিতার একাংশ)
মহাকবি কায়কোবাদ ছাড়াও এ মসজিদে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাও (শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী) এসেছিলেন।
বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করে গড়া হয়েছে নতুন মসজিদ। এতে করে হারিয়ে গেছে শত বছরের স্মৃতি বিজড়িত উনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের রসপাল জামে মসজিদ। পুরনো মসজিদের একটি ছবি বর্তমানে মসজিদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সযত্নে সংরক্ষিত আছে।
Google Maps: https://maps.app.goo.gl/kHhCtjQN28MgicZFA
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরিষাবাড়ী (জেলা: জামালপুর) যাতায়াতের জন্য সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের সুবিধা রয়েছে। যেকোনো পথে সরিষাবাড়ী উপজেলায় এসে সিএনজি বা অথবা অটোরিক্সা করে পিংনা বাজারে আসলে রসপাল জামে মসজিদে খুব সহজেই যাওয়া যায়। রেলপথে আসার সময় সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে না নেমে তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশনে নেমে নিলে যাত্রা আরও সহজ করা যাবে।




