আকাশ ও নদীপথে বাংলার ভেনিস খ্যাত বরিশাল জেলায় একদিন

প্রিয় লোকাল গাইডস,

আশা করছি, সবাই অনেক অনেক ভালো এবং সুস্থ আছেন। বাংলার ভেনিস খ্যাত বরিশাল জেলায় একদিনের সফর নিয়ে এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে।

ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। এই জেলাটি কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর পূর্ব নাম ছিল চন্দ্রদ্বীপ। একে বাংলার ‘ভেনিস’ও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরও রয়েছে এই বরিশালে। ঢাকা থেকে সড়ক, নদী ও আকাশপথে বরিশাল যাওয়া যায়। আকাশ ও নদীপথে একদিনের বরিশাল ভ্রমণের পুরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আজকের আমার এই পোস্ট।

বছরের শুরুতে (২০২২ সালে) ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়ার সময় আকাশপথে (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) এবং বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার সময় নদীপথে (মানামী লঞ্চ) আমার এই একদিনের ভ্রমণ সম্পন্ন হয়। এই ভ্রমণে ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন আমার মা। এই ভ্রমণে যেসকল লোকেশনগুলো এক্সপ্লোর করেছি-

  • গুঠিয়া মসজিদ
  • দুর্গাসাগর দিঘী
  • মিয়া বাড়ী জামে মসজিদ
  • বিবির পুকুর
  • বরিশাল বধ্যভূমি
  • বরিশাল নদী বন্দর ইত্যাদি

গুঠিয়া মসজিদ

বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলো আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। নানান ঐতিহ্যের মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর স্থাপত্য শৈলী, হৃদয়কাড়া নান্দনিক কারুকাজ এবং ঐতিহাসিক পটভূমি আমাদের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধি পরিচায়ক। সেই ঐতিহ্যকে হৃদয়ে লালন করে আজকে আমরা বরিশাল জেলার “গুঠিয়া মসজিদ” খ্যাত বায়তুল আমান জামে মসজিদ কমপ্লেক্স সম্পর্কে জানবো।

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় গুঠিয়া নামক স্থানে এই মসজিদ অবস্থিত। বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১৭ কিমি দূরে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রাম। সেখানেই বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স বা অবস্থিত। ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ ২০০৩ সালে ১৬ই ডিসেম্বর মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২ লাখ ১০ হাজার শ্রমিকের চেষ্টায় ২০০৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৪ একর জমিতে নির্মিত মসজিদ এবং ঈদগা কমপ্লেক্স কমপ্লেক্স মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই ডান পাশে একটা পুকুর আর পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদটি অবস্থিত।

মসজিদের নির্মাণশৈলীতে ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যের নামকরা মসজিদের ছাপ লক্ষ করা যায়। মসজিদটিতে উন্নমানের কাঁচ, ফ্রেম, এবং বোস স্পিকার ব্যবহার করা হয়েছে। এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদটিতে মহিলাদের পৃথক নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদ জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় ৯ টি গম্বুজ, আর মূল মসজিদের দক্ষিণ দিকে প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার একটি মিনার রয়েছে। মসজিদ ও ঈদগা কমপ্লেক্স ঘিরেও রয়েছে বাহারি আলোকসজ্জা। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে বিশাল লেক, বাগান, কবরস্থান, মাদ্রাসা, এবং একটি এতিমখানাও রয়েছে। রয়েছে গাড়ি পার্কিং এর সু-ব্যবস্থা। বরিশালের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের একটি এই কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়।

দুর্গাসাগর দিঘী

নদীবেষ্টিত বিভাগীয় জেলা বরিশাল দেশের দক্ষিনাঞ্চলের সর্বাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ। আর বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় একটি দিঘি হল দূর্গা সাগর দিঘি।

দূর্গা সাগর দিঘিটি হল দক্ষিনবঙ্গের সবচেয়ে বড় দিঘি যা স্থানীয়দের কাছে মাধবপাশা দিঘি নামে পরিচিত। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ন ১৭৮০ সালে তাঁর স্ত্রী দুর্গারানীর প্রতি অগাধ ভালবাসা প্রমাণের জন্য এবং পানিসংকট নিরসনের জন্য জন্য মাধবপাশায় এ দিঘিটি খনন করেন। আর তাঁর স্ত্রীর নামানুসারে দিঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাসাগর। মোট জমির আয়তন ৪৫.৫৫ একর এবং দিঘীটির আকার ২৭.৩৮ একর।

মিয়া বাড়ী জামে মসজিদ

বাংলার ঐতিহ্যমন্ডিত জেলা বরিশাল। আর এ জেলার ইসলামি স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন “মিয়াবাড়ি মসজিদ”। কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদ মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলির মধ্যে একটি। মসজিদটি বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের উত্তর কড়াপুর গ্রামে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, আঠারো শতকে হায়াত মাহমুদ মসজিদটি নির্মাণ করেন। চমৎকার নকশা, অসাধারণ কারুকার্যের জন্য মসজিদটিকে “মুঘল আমলের রত্ন” হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

আয়তাকার এ মসজিদটির ওপরে তিনটি ছোট গম্বুজ আছে, যার মধ্যে মাঝখানের গম্বুজটি একটু বড়। আর এই গম্বুজটির ভেতরের অংশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য। মূল মসজিদের রয়েছে তিনটি দরজা। রয়েছে আটটি বড় মিনার। বড় মিনারগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোট আরও ১২টি মিনার। মসজিদের বাইরের কাঠামোতেও রয়েছে কারুকার্য। এছাড়াও মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটি দিঘি রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে।

মূল মসজিদটি দোতলায় আর দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে আলীশান সিঁড়ি। সিঁড়ির গোড়ায় হেলান দিয়ে বসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সিঁড়ির নিচে রয়েছে দুটি কবর। এর মধ্যে একটি ছোট। কিন্তু কবর দুটি কাদের, তা জানা যায়নি। মসজিদের নিচতলার জায়গাটি শিক্ষার্থীদের আরবি পড়াতে ব্যবহার করা হয়।

বিবির পুকুর

বিবির পুকুর বাংলাদেশের বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি শতবর্ষের পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী কৃত্রিম জলাশয়। এটি বরিশাল নগরীর অন্যতম সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য বলে বিবেচিত। বিবির পুকুর বর্তমানে একটি নাগরিক বিনোদনের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বরিশাল বধ্যভূমি

১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের এখনো সাক্ষী হয়ে আছে বরিশাল নগরীর ওয়াপদা কলোনিতে অবস্থিত এই বধ্যভূমি।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছিলো এখানে। বাঙালিদের ওপর নির্যাতন, গুলি করে হত্যা করাসহ তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রমের জন্য তারা এই বধ্যভূমিটি ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা এখান থেকে চলে গেলে বরিশাল স্বাধীনতা লাভ করে।

সকাল এবং দুপুরের খাবার বরিশালের স্থানীয় হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খেয়েছি, তবে রাতের খাবারের জন্য লঞ্চে (মানামী লঞ্চ) অর্ডার করি। আর এই খাবারের মান, স্বাদ অতুলনীয় ছিল। খাবারের দামও ছিল যুক্তিসঙ্গত।

ধৈর্য ধরে পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

Author: Shah Md Sultan

Shah Md Sultan is a digital marketer from Dhaka, Bangladesh, and his small business name is Sultan’s Digital. Sultan’s Digital strives for excellence in digital marketing. Apart from being a digital marketer, he enjoys exploring new and unknown places. Furthermore, he has a passion for photography, creating vlogs, and enjoying delicious local foods. In his free time, he would love to contribute to Google Maps so that others can benefit from it.

21 Likes

@ShahMdSultan

Ein gut gestalteter Beitrag und Video und Aufnahmen sind sehr schön :+1:

1 Like

Hi @Annaelisa , Thank you for such worthy comments.

2 Likes