বাকরখানি রুটির নামের পেছনে আছে এক করুণ ইতিহাস। জনশ্রুতি অনুসারে, জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকর খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে।
নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে আগা বাকের। প্রখর মেধার অধিকারী আগা বাকের যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। রাজধানী মুর্শিদাবাদের নর্তকী খনি বেগম এবং আগা বাকের পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিন্তু উজিরপুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান ছিল পথের কাঁটা, সে খনি বেগমকে প্রেম নিবেদন করলে তিনি জয়নাল খানকে প্রত্যাখান করেন। প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়নাল খনি বেগমের ক্ষতির চেষ্টা করে এবং খবর পেয়ে বাকের সেখানে যান ও তলোয়ারবাজিতে জয়নালকে হারিয়ে দেন। অন্যদিকে জয়নালের দুই বন্ধু উজিরকে
মিথ্যা খবর দেয় যে, বাকের জয়নালকে হত্যা করে লাশগুম করেছে। উজির ছেলের হত্যার বিচার চায়। নবাবমুর্শিদ কুলী খাঁ পুত্র বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করারনির্দেশ দেন। অবশেষে বাকেরের হাতে মারা যায় বাঘ।
ইতিমধ্যে জয়নালের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ফাঁস হয়ে গেছে ও সে জোর করে খনি বেগমকে ধরে নিয়ে গেছে দক্ষিণ বঙ্গে।উদ্ধার করতে যান বাকের খনি বেগমকে। পিছু নেন উজির জাহান্দার খান। ছেলে জয়নাল খান বাকেরকে হত্যার চেস্টা করলে উজির নিজের ছেলেকে হত্যা করেন তলোয়ারের আঘাতে। এই অবস্থাতে জয়নাল খনি বেগমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে। বাকেরগজ্ঞে
সমাধিস্থ করা হয় খনি বেগমকে। আর বাকের সবকিছু ত্যাগ করে রয়ে গেলেন প্রিয়তমার সমাধির কাছে – দক্ষিণ বঙ্গে। বাকের খাঁর নামানুসারেই বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ (পটুয়াখালী-বরিশাল) অঞ্চলের নাম হয় বাকেরগঞ্জ।ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি রুটির নামের পেছনেও রয়েছে বাকের-খনির প্রেমের ইতিহাস।
বাখরখানি মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী একটি রুটি। অতিসম্প্রতি পর্যন্ত ঢাকা শহরে এটি একটি বিচিত্র খাদ্য পণ্যছিল। মুগল আমলের খাদ্য পণ্যের মধ্য এটি বর্তমান সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের অন্যান্য শহরেও দেখা যায়। মানুষজন তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে কোর্মা, শিখ কাবাব এবং মিষ্টির সাথে বাখরখানি খায়।
বিস্কুটের উৎপত্তি আফগানিস্তান বা এর বাহিরে। আফগানিস্তানে এটি এখনও পরিলক্ষিত হয়।ঐতিহ্যগতভাবে নবাবী আমলের শেষের দিকে প্রভাবশালী জমিদার আগা বাখর খানের নামনুসারে বাখরখানি নামটির উৎপত্তি। এটি একটি গোলাকৃতির রুটি যা তৈরি করা হয়
প্রধানত গম, দুধ, লবণ, ডালডা, ঘি, পনির এবং খামির দিয়ে। রুটিটি তাওয়া বা তন্দুরে দেয়ার পূর্বে নানাউপকরণের সাহায্যে বেলন দিয়ে প্রসারিত করা হয়। বাখরখানি বিশেষত তীক্ষ্ণ স্বাদযুক্ত উপাদান, পনির, রোস্ট করা গরুর মাংস এবং মশলাযুক্ত পানীয় বিশেষ দ্বারা তৈরিকরা হয় যা এখনও ঢাকার পুরনো অংশে দেখা যায়।
রুটি /বাখরখানি ভাজার পুরাতন প্রক্রিয়া
রুটি /বাকরখানি বাজার নতুন প্রক্রিয়া
আগেরকার দিনে দুই ঈদ উৎসবে বাখরখানির চাহিদা ছিলখুব বেশি। চিনশুখা রুটিও একপ্রকার বাখরখানি যাবিশেষত চিনি দ্বারা তৈরি করা হয়,
যখন নিমশুখা রুটিভাজা বাখরখানি। কাইচারুটি এবং মুলামও বাখরখানির অন্য প্রকারভেদ। পনির বাখরখানি হলো আরেকটি সুস্বাদু খাবার।
এর প্রতিটি ভাঁজে ঘি ও গম বা সুজির পরিবর্তে হালুওয়া ব্যবহৃত হয়।
বৈবাহিক সংক্রান্ত উৎসবে প্রথার অংশ হিসেবে কনের বাড়ি থেকে বর এর বাড়ি কিচমিচ,কাঠবাদামের সাথে ক্রিম দুধদিয়ে ডালায় করে পাঠানো হয়
যা ভিগারুটি নামেও পরিচিতি।
এটি একটি পুরানো ঢাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রাচীন খাদ্য। এখন ঢাকার প্রতিটি অভিজাত কনফেকশনারিতে বাখরখানি নতুন রূপে (পলিথিনে মোড়ানো) পাওয়া যায়।
বর্তমানে এই বাখরখানি ১ কেজি ১৮০ টাকা করে পাওয়া যায়।
#ঐতিহাসিকখাবার
#হ্যাপিগাইডিং
#LGBContest
#LGB7thAnniversary