১৮৭৫ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের প্রবেশপথ। মীর জুমলার গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি ঐতিহাসিক মোগল স্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কার্জন হল ছাড়িয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমি যেতে চোখে পড়ে হলুদ রঙের মীর জুমলার তোরণ। এ গেটের তিনটি অংশের একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে রোড ডিভাইডারের মাঝে এবং অপর অংশটি রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে
- মীর জুমলা গেট। এর তিনটি অংশ। ছবিতে তিন নেতার মাজারের দক্ষিণ পাশের অংশটি দেখা যাচ্ছে।
- মীর জুমলা গেট। ছবিতে সড়কের উপর মাঝের অংশটি দেখা যাচ্ছে।
গঠনঃ
প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ এ ধরনের স্তম্ভ খুবই বিরল। যার ওপরে রয়েছে কারুকাজ করা চারকোনা বিশিষ্ট একটি শেড। পশ্চিম পাশের বড় স্তম্ভের পাশেই রয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি স্তম্ভ। যার মাঝে টানা অবস্থায় রয়েছে একটি দেয়াল।উঁচু থেকে নিচুতে নামা এ দেয়ালটি প্রায় ২০ ইঞ্চি চওড়া। কিন্তু পূর্ব পাশের বড় স্তম্ভের সঙ্গে দেয়াল বা প্রাচীর থাকলেও নেই ছোট স্তম্ভ।
- ঢাকা গেট বা মীর জুমলা গেটের পশ্চিম পাশে স্থাপিত বিবি মরিয়ম কামান। ২০২৩সালের ডিসেম্বরে এটি ওসমানী উদ্যান থেকে এনে এখানে স্থাপন করা হয়।
নামকরণঃ
মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এ তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনও ‘ময়মনসিংহ গেট’, কখনও ‘ঢাকা গেট’ এবং অনেক পরে নামকরণ করা হয় ‘রমনা গেট’। এ গেট রমনায় প্রবেশ করার জন্য ব্যবহার করা হতো বলে পরে সাধারণ মানুষের কাছে এটি রমনা গেট নামেই পরিচিতি পায়। তবে বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুসারে এ তোরণ এবং আশপাশের জায়গার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মীর জুমলার গেট’।
ঐতিহাসিক স্থাপনাঃ
তোরণের স্তম্ভগুলো পরীক্ষা করেন এ. এইচ. দানী। তার মতে, এগুলো মোগল আমলে তৈরি হয়নি। কারণ স্তম্ভ দুটির গড়ন ইউরোপীয় ধাঁচে মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে যুক্ত করার জন্য রেসকোর্সের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি রাস্তা তৈরি করেন তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। এ রাস্তার প্রবেশমুখে ডস এ দুটি স্তম্ভ তৈরি করেন। যা এখনও অটুট রয়েছে। বর্তমান নজরুল এভিনিউর রাস্তাটিও ডস তৈরি করেন। ‘বাগে বাদশাহী’ নামে মোগল উদ্যানটি ইসলাম খাঁর আমলে ছিল রমনা অঞ্চলে (যেটি বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও পুরনো হাইকোর্ট ভবন)।
হাইকোর্ট ভবনের পূর্ব কোণে একই ধরনের দুটি স্তম্ভবিশিষ্ট প্রবেশপথ ছিল। মূলত সে সময় এ স্তম্ভের মধ্য দিয়ে চলাচল ছিল হাতির। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ওসমানী উদ্যান থেকে মীর জুমলার কামানটি সরিয়ে মীর জুমলা গেটের সামনে স্থাপন করা হয়।
-
মীর জুমলা ফটক (১৬৬০-১৬৫০)
বাংলার মোঘল সুবেদার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মীর জুমলা (১৬৬০-১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ) ঢাকার উত্তর সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি ফটক নির্মাণ করেন যা মীর জুমল্য ফটক নামে পরিচিত।
রমনা ফটক (১৮২৫)
মোঘল সাম্রাজ্যের পতদের সাথে সাথে শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। মুঘল আমলে বর্তমান রমনা এলাকাটি পরিচিত ছিল বাগ-ই-বাদশাহী নামে, যা কালের পরিক্রমায় পরিত্যাক্ত জংলা ভূমিতে পরিণত হয়। ১৮২৫ সালে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডয়’স মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে সংযুক্ত করার জন্য ময়দানের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি সড়ক তৈরি করতে ।এই সড়কের প্রবেশপথে তৈরি করা হয় দুটি স্তম্ভ।
ঢাকা ফটক (১৯৬০-৬২)
ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ দিকে ফটকটির ক্ষতিসাধন হয়। দুই দিকের ছোট বুরুজগুলো এবং বুরুজের চূড়ার আমলা-কলসগুলো ভেঙে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসনামলে গভর্নর মোহাম্মদ আজম খানের সময়ে (১৯৬০-৬২) সড়কটি চওড়া করা হয়। সে সময় ফটকের পূর্ব অংশের বড় বুরুজটি নবনির্মিত সড়কদ্বীপে রেখে বাকি অংশ পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয় এবং নতুন সড়কের পূর্ব পাশে একটি অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়।
ঢাকা ফটক (২০২৪)
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ২০২৩ সালে এই ঐতিহাসিক ঢাকা ফটক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রতিথযশা ইতিহাসবিদের নির্দেশনা এবং পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে দুই দিকের ছোট বুরুজগুলো এবং বুরুজের চূড়ার আমলা-কলসগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে ফটক ঘিরে তৈরি করা হয়েছে গণপরিসর।
- ফটকের পশ্চিমে স্থাপন করা হয়েছে মীর জুমলার আসাম যুদ্ধাভিযানের টিকে থাকা একমাত্র নিদর্শন বিবি মরিয়ম কামান