সিকিম ভ্রমন: গ্যাংটক টু দার্জিলিং হয়ে শিলিগুড়ি (শেষ পর্ব )

আজ গ্যাংটকে আমাদের শেষ দিন। আজকে আমরা গ্যাংটক থেকে দার্জিলিং যাবো। হোটেল থেকে চেকআউট করে চলে যাই দেওরালি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। এখন থেকেই দার্জিলিং এর শেয়ারড জীপ ছেড়ে যায়। গিয়েই টিকেট কেটে নিই ৪০০ রুপি করে। আমাদের ব্যাগ জীপে লোড করা হলো। যেতে সময় লাগবে আনুমানিক ৪ ঘন্টা। জীপ চলছে রংপোর দিকে এখন থেকে আমাদের এক্সিট সিল নিতে হবে। ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম রংপোতে। এক্সিট সিল নিয়ে দার্জিলিং এর দিকে এগিয়ে চলছি। পথে একটি চেকপোস্টে গাড়ি চেক হলো অবৈধ কিসু আছে কিনা। তিস্তা নদীর পার ঘেঁষে গাড়ি এগিয়ে চললো। পথে চা বাগান, বাশ বাগান, পাইন বন আরো কত কিছু পড়লো। দার্জিলিং এ গিয়েই আমরা বৃষ্টির কবলে পড়লাম। অথচ সারা রাস্তায় কোনো বৃষ্টি ছিলনা। আমরা উপায় না পেয়ে ট্যাক্সি নিয়ে মল রোডে চলে যাই। এবার হোটেল খোঁজার পালা। বৃষ্টি এখনো চলছে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত। কয়েকটি হোটেল দেখলাম কিন্তু রুম পছন্দ হলোনা। ঘন্টা দেড়েক পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানে আমরা থাকবো না কারণ পুরো দার্জিলিং অন্ধকার হয়ে আছে। কোনো ভিউ নাই। আমরা শিলিগুড়ি চলে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ফাস্ট ফুড দিয়ে কোনো রকম লাঞ্চ সেরে জিপ ভাড়া করলাম। শিলিগুড়ি আসার পথে আমরা বাতাসিয়া লুপে ব্রেক নিয়েছিলাম। সেখানে কিসু ছবি তুলে আবার রওয়ানা দিলাম। পথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এর মধ্যে গাড়ি নিচে নেমে যাচ্ছে। রাত ৮ টার দিকে আমরা শিলিগুড়ি চলে আসি। আমি ভুটান থেকে এসে যেই হোটেলে ছিলাম সেই হোটেলেই উঠে যাই রাত কাটানোর জন্য। চেক ইন করে ব্যাগ রেখে ডিনার করা জন্য বেরিয়ে যাই। হোটেলের পাশের গলিতেই একটি খাবার হোটেল খোলা পেয়ে যাই এবং ডিনার সেরে নেই।

শিলিগুড়িতে আজ প্রথম সকাল আমাদের। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেলাম নাস্তা করার উদ্দেশ্যে। রাস্তার ধরে একটি হোটেলে নাস্তা খেয়েই চলে যাই সিটি সেন্টার শপিং মলে। আমাদের হোটেলে থেকে অনেকটাই দূর। হোটেল থেকে ১০ রুপি দিয়ে ভেনাস মোড় পরে ঐখানথেকে আরেকটা গাড়িতে করে সিটি সেন্টার যাই ভাড়া মনে হয় ২০ রুপি নিয়েছিল।
শিলিগুড়ি প্রথম এসেছিলাম ২০১৬ তে ভুটান থেকে ফিরে এখানে ছিলাম। তখন সিটি সেন্টার এ আসিনি। এবারই প্রথম। বিশাল মার্কেট। এখানে অনেক নামি দামি ব্রান্ডের শোরুম আছে। এডিডাস, নাইকি, পুমা, ক্যাসিও ইত্যাদি। মার্কেটের ভিতরে অনেক জায়গা সুপ্রশস্ত চলাচলের জায়গা আছে। তবে যেটাই হাত দেই বেশ দাম। ঘন্টা তিনেক ছিলাম কিছু শপিংও করলাম। কেএফসি তে লাঞ্চ করে বের হয়ে গেলাম। মার্কেটের সামনের টং দোকানে গিয়ে মাটির ভারে চা খেলাম।

সন্ধ্যায় বিধান মার্কেট ও হংকং মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করলাম। আমাদের হোটেল থেকে ৫ মিনিটের হাটা পথ। চকলেটে, কসমেটিক্স কিনলাম পাইকারি দোকান থেকে। রাতে গেলাম শ্রীলেদার্সে লেডিস ব্যাগ মানিব্যাগ ও বেল্ট কিনতে।

দেশে ফিরবো। অনেকদিন হলো পরিবারের সাথে সময় কাটাই না। ঘুম থেকে উঠেই ব্যাগ ঘুছিয়ে নিলাম। আমার সহযাত্রীর একটি মেডিসিন লাগবে। সেটার খোঁজে বের হবো আমরা। বের হয়ে স্ট্রিট ফুড দিয়ে নাস্তা করলাম। গরম গরম লুচি, ছোলা আর চাটনি। এর পর গেলাম একটি মিষ্টির দোকানে। চার পাঁচ ধরণের মিষ্টি খেলাম। পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। মেডিসিন টা খুঁজে পেতে অনেক সময় লেগে গেলো। হোটেলে ফিরেই বিল চুকিয়ে বের হয়ে গেলাম। আমরা মোট ৬ জন ছিলাম। একটা জীপ রিজার্ভ করে চ্যাংড়াবান্ধার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম চ্যাংড়াবান্ধা। ভারতে ঢুকার সময় যেই ব্রোকারের মাধ্যমে পোর্টের কাজ করিয়েছিলাম এবারও তাকেই কাজ দিয়ে দিলাম। আমরা রুপি ভাঙিয়ে টাকা করে নিলাম। ভারতের ইম্মিগ্রেশনে আজকে প্রচন্ড ভিড়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম। নিজের দেশ। এখানে বেশি সময় লাগলো না। বের হয়ে চলে গেলাম বাস কাউন্টারে। টিকেট আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। এস আর এসি বাস সিট্ গুলো ভালই ছিল। ব্যাগ রেখে চলে গেলাম বুড়ির হোটেলে খাবার খেতে। খাবার খেয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন বাস ছাড়বে। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাস ছাড়লো।

অবশেষে লম্বা সফর শেষ করে সকাল ৮টার দিকে ঘরে ঢুকলাম। হ্যাপি এন্ডিং।

খরচঃ

আসলে ভ্রমণের খরচটা ভ্যারিয়েবল। আপনি কিভাবে যাচ্ছেন, কোন হোটেলে থাকছেন, কি খাচ্ছেন, কোন কোন স্পট ঘুরে দেখছেন এসবের উপর নির্ভর করে। একেকজন একেক ভাবে তাদের বাজেট অনুযায়ী ঘুরে থাকেন। আমি মূলত বাজেট ট্রাভেলার, তাই মধ্যম মানের ট্যুর দেই, একেবারে নিচেও যাই না আবার উপরেও উঠিনা। তাই আমার হিসাব কিতাব অনেকের সাথে নাও মিলতে পারে। আমি আপনাদের একটি সাধারণ ধারণা দিব। যাতে করে আপনারা বুঝতে পারেন।

আমরা ৩ রাত গ্যাংটকে, ১ রাত লাচুংয়ে এবং ২ রাত শিলিগুড়িতে মোট ৬ রাত হোটেলে ছিলাম। গাড়ি রিজার্ভ করে ঘুরেছি বিভিন্ন স্পট । নরমাল খানাপিনা করেছি। আমাদের আনুমানিক ১৬-১৭ হাজার টাকা লেগেছে জনপ্রতি।

অগোছালো লেখা। আপনাদের অসংক্ষ ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। বাংলায় লিখতে গিয়ে অনেক বানান ভুল হতে পারে। তাই ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন। ইতি।

13 Likes