বাহাদুর শেখ

“নদীর ওইপারে জন্ম হইছিল, বাপ দাদার ভিটা বাড়ি, জমি জিরাত সব আছিল, এরপর একবার ভরা বন্যায় যমুনার যৌবনে সব বিলীন হইয়া গেছে” কথাগুলো বলছিলেন ‘বাহাদুর শেখ’। ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধের চোখে মুখে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, যার দেহের শক্তি শেষের পথে কিন্তু মনের শক্তি অটুট। চার কন্যা ও এক পুত্রের জনক ‘বাহাদুর শেখ’ থাকেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ির কাছেই।

কথা বলতে বলতে জানতে ছেয়েছিলাম, ‘কেমন আছেন?’ এখনও নিজের পায়ে হাইটা বেড়াইতে পারি, বড় কোন অসুখ নাই, পোলাপান মানুষ করছি, হেগো বিয়া দিসি, তিন নাম্বার মাইয়াটা বাদে সবাই ভালো আছে, দেখেন সবকিছু মিলাই কিন্তু ভালো আছি। ‘কেন চাচা তার কি হইছে?’ বাবা, “জামাইটা ভালো জুটে নাই, ভাত কাপর দেয় না, মাইর ধর করত, নিয়া আইছি আমার কাছে, এখন দুই নাতনি সহ আমার ধারেই থাকে, আমিতো মাইয়ার বাপ, আমিতো আর ফালাই দিতে পারিনা”।

চাচা, বাড়িতে চাচী আছেন নি? “আছে তো, না থাকলে এত কিছু কে সামলায়…! ১৮ বছর বয়সে বিয়ে কইরা ঘরে তুলসি তারে, ৬৪ বছরের সংসারে কত ঝড় ঝাঁপটা আইলো গেলো, কত মানুষরে হারাইসি, এই বুড়িটা এখনও থাইকা গেসে আমার সাথে, আল্লায় তারে ভালো রাখুক”। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে অথবা জীবনের গল্প বলতে বলতে কিছুটা ক্লান্ত বাহাদুর চাচা কখন আমার হাত ধরেছেন জানি না, মনে হচ্ছিল আপন কেউ।

জীবনের সকল খারাপ সময়কে আড়চোখ দেখিয়ে জীবন যুদ্ধে কিংবা টিকে থাকার লড়াইয়ে জয়ী সকল ‘বাহাদুর শেখদের’ জন্য শুভেচ্ছা।

4 Likes