ছবিঃ একসাথে তিনটি জমিদার বাড়ি।
দুইদিন আগেই হঠাৎ করে প্লান। তারপর গত ৫ তারিখে গিয়ে মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের তিনটি জমিদার বাড়ি দেখে আসলাম।
ভ্রমন বৃত্তান্তঃ প্রথমে আমরা সকল বন্ধুরা মিলে মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গেলাম মৌমিতা বাসে করে। তারপর সেখান থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও টাঙ্গাইলের নাগরপুরগামী এসবি সুপার লিংক বাসে ৯০ টাকা করে টিকিট কেটে উঠে পড়লাম।
ছবিঃ এসবি সুপার লিংক বাসে ভ্রমণসঙ্গীরা।
বাস ছাড়ার পর ঢাকা আরিচা হাইওয়ে ধরে একে একে আমরা ছাড়িয়ে যেতে লাগলাম আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর,জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধামরাই, কালামপুর। কালামপুর দিয়ে যখন গ্রামের রাস্তায় বাস চলা শুরু করলো তখন মনে হলে বাংলা মায়ের সৌন্দর্যের আসল রুপ এই বুঝি শুরু হলো। রাস্তার দুইপাশ জুড়ে দিগন্ত বিস্তৃত ধানের মাঠ। কিছু ধান কাটা হয়েছে৷ আবার কিছু বাকি আছে। আর দুপাশের মানুষ ধান কাটার পাশাপাশি ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত। এই মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে ৫৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে চলে আসলাম টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ১০০ বছরের পুরনো পাকুটিয়া ইউনিয়নের বিখ্যাত পাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে।
ছবিঃ পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির প্রধান ৩টি ভবন।
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির আদ্যোপান্তঃ
জমিদার বাড়িটির মোট চারটি ভবন রয়েছে। তিনটি ছিলো জমিদারদের থাকার জন্য। আরেকটি ছোট ভবন নাচের কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ছবিঃ নাচের কক্ষের ফটক।
তিনটি ভবনের মধ্যে এখন একটি কলেজ ও আরেকটি ইউনিয়ান স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং অপরটির দোতলায় মানুষ বসবাস করে। রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল নামের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি পাকুটিয়াতে বসতি স্থাপন করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংরেজদের কাছ থেকে জায়গা কিনে তাদের জমিদারী শুরু হয়। রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডলের দুই ছেলে বৃন্দাবন সাহা ও রাধা গোবিন্দ সাহা। রাধা গোবিন্দ সাহা ছিলেন নিঃসন্তান। কিন্তু বৃন্দাবন চন্দ্র সাহার ছিলো তিন ছেলে ব্রজেন্দ্র মোহন সাহা,উপেন্দ্র মোহন সাহা এবং যোগেন্দ্র মোহন সাহা । আর এভাবেই পাকুটিয়ার জমিদারী তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রধান তিনটি স্থাপনাই অপূর্ব শিল্প মন্ডিত। পাশ্চাত্যের শিল্প সংস্কৃতির মাধুরী মিশিয়ে স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি তাদের এই অট্টালিকা। তিনটি বাড়ীর সামনেই তিনটি নাট মন্দির। প্রাসাদগুলো দেখলাম আর অবাক বিস্ময়ের চিন্তা করলাম তখনকার সময়ের স্থ্যাপত্য শিল্প কতটা উন্নত ও শৈল্পিক ছিলো। জমিদার বাড়িটির উত্তর দিকে বিশাল বড় আকারের দুইটি পুকুর রয়েছে।
ছবিঃ জমিদার বাড়ি পুকুর।
আর শান বাধানো ঘাটের সৌন্দর্য তা আর বলার নয়। দক্ষিণ দিকে বিশাল বড় একটি খেলার মাঠ ও পূর্বদিকে আরো একটি বিশাল বড় পুকুর। জমিদার বাড়ির ইতিহাস জানতে শুরু করার পর হঠাৎ করে উইকিপিডিয়ায় দেখতে পেলাম ১৪ কিলোমিটারের মধ্যেই নাগরপুর ইউনিয়নে আরো একটি জমিদার বাড়ি আছে। যেই ভাবা সেই কাজ। জমিদার বাড়ির পাশের স্টেশন থেকে সিএনজি নিয়ে চললাম নাগরপুর জমিদার বাড়ি দিকে। দুপাশের সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলে আসলাম ধলেশ্বরী নদীতে স্থাপিত ব্রিজের উপড়ে। তারপর ব্রিজের উপরে কিছুক্ষণ সিএনজি থামিয়ে দেখলাম চারপাশের সৌন্দর্য ও ধলেশ্বরী নদীর কান্না।
ছবিঃ ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের উপরে তোলা ছবি।
এতো বড় নদী কিন্তু পানির পরিমাণ নদীতে খুব কম। চারদিকে চর পড়ে নদীর অবস্থা এখন মৃত প্রায়।
ছবিঃ ধলেশ্বরী নদীর বর্তমান অবস্থা।
নদী দেখা শেষ করে আবার রওনা দিলাম। তারপর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম নাগরপুর জমিদার বাড়িতে।
ছবিঃ জমিদার বাড়ির নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভবনটি।
নাগরপুর জমিদার বাড়ির আদ্যোপান্তঃ
জমিদার যদুনাথ চৌধুরী প্রায় ৫৪ একর জমির উপর নাগরপুরের এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখনকার সময়ে তিনি নাগরপুরকে কলকাতার আদলে সাজানোর চেষ্টা করেন। পাশ্চত্য এবং মোঘল সংস্কৃতির সংমিশ্রনে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত যেকোনো দর্শণার্থীকেই মুগ্ধ করবে। জমিদার বাড়ির প্রথম ভবনটি এখনো অক্ষত রয়েছে। যা এখন নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি ভবনগুলো এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
ছবিঃ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জমিদার বাড়ির ভবনগুলো।
চৌধুরীবাড়ীর দক্ষিনদিকে ১১ একর জমির ওপর একটি বিরাট দিঘী রয়েছে। যা উপেন্দ্র সরোবর নামে এলাকায় পরিচিত। এই দিঘীটি আজোও মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।
দুপুরের খাবার গ্রহনঃ
জমিদার বাড়িটি পরিদর্শন করতে করতে তখন প্রায় বেলা ২ বেজে যায়। তাই তাড়াতাড়ি চললাম দুপুরের খাবার খেতে। বাড়িটির পাশেই বিশাল বড় বাজারের অবস্থান। আর সেই বাজারেই আমরা সকল বন্ধুরা মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।
ছবিঃ আমাদের দুপুরের খাবার নাগরপুর বাজারের মোরগ পোলাও।
বালিয়াটি রওনাঃ
খাবার খাওয়া পর ছুটলাম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলাস্থ বালিয়াটি জমিদার বাড়ির দিকে। আমাদের হাতে সময় কম থাকায় আমরা দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করলাম। তাই আমরা একটি ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ি ভাড়া করলাম। ড্রাইভার বলল যে আমাদেরকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে পৌঁছে দিবে। মাহমুদনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে আমরা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে।
ছবিঃ অল্প সময়ে বালিয়াটি পৌছে দেওয়া চালকের সাথে একটা সেলফি।
ছবিঃ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভবনগুলো।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির আদ্যোপান্তঃ
২০ টাকা করে প্রবেশ টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলাম।
ছবিঃ বালিয়াটি জমিদার বাড়ির প্রবেশ করার ফটকের চিত্র।
ভেতরে ঢুকতেই আমাদের সামনে নজরে পড়ল সুউচ্চ চারটি দালান। চারটি দালানের সৌন্দর্য দেখে যেকোনো পর্যটকই বিমোহিত হতে বাধ্য। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গোবিন্দ রাম সাহা নামক এক লবণ ব্যবসায়ী বালিয়াটিতে জমিদার পরিবারের গোড়াপত্তন করেন। সামনের দিকে চারটি দালান এবং পিছনের দিকে লম্বালম্বি করে আরো তিনটি দালাল রয়েছে এই জমিদার বাড়িটিতে। আর একেবারে পেছনে উত্তর দিকে রয়েছে একটি দিঘীর উপরে ৭ টি শান বাধানো ঘাট।
ছবিঃ জমিদার বাড়ি দক্ষিন দিকের পুকুর ও ঘাটলা।
যা দিয়ে তখনকার সময়ের মানুষজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করত। আর সুপেও পানির জন্য ব্যবস্থা ছিল কয়েকটি গভীর কূপের। যার থেকে পানি উত্তোলন করে মানুষ পান করত।
ছবিঃ সুপেয় পানির জন্য নির্মিত কূপ।
ছবিঃ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমন শেষে সকলের একটা গ্রুপ ছবি।
নীড়ে ফেরাঃ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি পরিদর্শনের সময়ই প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসলো। তাই আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। জমিদার বাড়ি থেকে মেইন রোডে আসার জন্য আমরা সাটুরিয়ার ঐতিহ্যবাহী অটোভ্যান গাড়িতে উঠলাম।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই চালক আমাদেরকে মেইন রোডে নামিয়ে দিল। তারপর সেখান থেকে আমরা ঢাকার গাবতলীগামী এসবি সুপার লিংক বাস ধরলাম। রাত ৮ঃ৩০ মধ্যেই আমরা ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌঁছে গেলাম।
#bdlgwritingcontest
bdlg200
#200meetup
















