১. মহেড়া জমিদার বাড়ী, মহেড়া, মির্জাপুর, টাঙ্গাইলঃ মহেরা জমিদার বাড়ি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত কয়েকটি ইতিহাসজ্ঞ স্থাপনার মধ্যে একটি যা মির্জাপুর উপজেলায় অবস্থিত। ইতিহাসের তথ্য অনুসারে ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়ীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে এই জমিদার বাড়ীটি পুলিশ ট্রেনিং বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ও তা ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।
জানা যায় ,মহেড়া জমিদার বাড়ীটিতে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় Zonal Police Training School যা পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে Police Training Center হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। আর এই মহতী কাজটি ১৯৭২ সালে সম্পাদিত হয়ে যায় অতীতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান কর্তৃক। এইখানে গমনাগমন করতে হলে ঢাকা-টাংগাইল জাতীয় মহা সড়কের জামুর্কী হতে টাংগাইল এর দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে এবং টাংগাইল হতে ঢাকার দিকে নাটিয়া পাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ডুবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট বাস থেকে নেমে রিক্সা বা টেম্পু যোগে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়া যায়। ঢাকা- টাংগাইল জাতীয় মহা সড়ক থেকে পূর্ব- দক্ষিণ দিকে একটু টেরাবাঁকা রাস্তায় প্রায় ০৪(চার) কিলোমিটার দুরুত্বে মহেড়া জমিদার বাড়ী/ মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার অবস্থিত। নিরতিশয় কম খরচে এইখানে যাতায়াত করা যায়। বর্তমানে মাত্র ১০০ (একশত) টাকা জনপ্রতি ফ্রি প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি দর্শন লাভ করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি গর্ভনমেন্টের পুলিশ বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও চালিত হচ্ছে।
কিভাবে যাওয়া যায় ও অবস্থানঃ মহেড়া জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কি.মি. দূরে প্রায় আট (৮) একর ঠাঁই জুড়ে এই মহেড়া জমিদার বাড়ি বিস্তৃত। প্রাচীন সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের অমূল্য নজির স্বরূপ মাথা অভিজাত করে দাঁড়িয়ে বিদ্যমান এ মহেড়া জমিদার বাড়িটি। ঢাকা-টাংগাইল জাতীয় মহা সড়কের জামুর্কী হতে টাংগাইল এর দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে ও টাংগাইল থেকে ঢাকার দিকে নাটিয়া পাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ডুবাইল সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের নিকট বাস থেকে নেমে রিক্সা/টেম্পু/অটো/সিএনজি যোগে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়া যায়।
২. করটিয়া জমিদার বাড়ি, করটিয়া, টাঙ্গাইলঃ করটিয়া জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর বা শহর হতে মাত্র ১০ কি.কি দূরে পুটিয়ার নদীর তীরে অবস্থিত। জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী বাড়িটি নির্মান করেন। প্রায় ১ কি.মি. দৈর্ঘ্য ও ০.৫ কি.মি. প্রস্থের করটিয়া জমিদার বাড়ি চারদিকে প্রাচীর দ্বারা ঘেরা। জমিদার বাড়িতে রয়েছে লোহার ঘর, রাণীর পুকুরঘাট, রোকেয়া মহল, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং মোগল স্থাপত্যে নির্মিত একটি মসজিদ। মসজিদটিতে মোট আটটি গম্বুজ এবং পনের ফুট একটি মিনার রয়েছে। করটিয়া জমিদার থাকার জায়গা করটিয়া রাজবাড়ী নামেও পরিচিত। ঢাকা থেকে সড়কপথে টাঙ্গাইলের দূরত্ব প্রায় ৮৪ কি.মি। ঢাক-টাঙ্গইল মহা সড়কের করটিয়া বাইপাসের নিকট বাস হতে নেমে অটো রিকশা বা সিএনজি যোগে করটিয়া জমিদার বাড়ি যেতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া লাগবে।
করটিয়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণ পরামর্শঃ বর্তমানে করটিয়া জমিদার বাড়ির ভেতরে অনুমতি ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না, মূল গেটে তালাবন্ধ অবস্থায় থাকে। একারণে ঝামেলা এড়াতে জমিদার বাড়িতে যাওয়ার আগে এর ভেতর ঢুকতে পারবেন এরূপ নিশ্চিয়তা থাকলে আপনার ভ্রমণটি স্বার্থক হয়ে উঠবে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, বৈশাখ মাসের ১ ও ১২ তারিখ এবং দুই ঈদের দুই দিন জমিদার বাড়ি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
৩. আতিয়া মসজিদ, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইলঃ আতিয়া মসজিদ টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রামে অধিষ্ঠিত। এটি প্রায় ৪০০ বছর পুরনো একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। টাঙ্গাইল শহর হতে মসজিদটির দূরত্ব প্রায় ৬ কি.মি.। তথ্যমেত বাইজিদ খান পন্নীর পুত্র জমিদার সাইদ খান পন্নী ১৬১০ সালে আতিয়া মসজিদটি প্রস্তুত করেন। ১৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের মসজিদটির পাশে বয়ে গেছে লৌহজং নদী। আতিয়া মসজিদে একটি সুবিশাল এবং তিনটি ছোট গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। যে গম্বুজের নীচে ও চারকোণার চারটি পিলারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বেশ ভালো নকশা। মসজিদের পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশ রাস্তা ছাড়াও উত্তর-দক্ষিণে আরো দুটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। লাল ইটে তৈরি আতিয়া মসজিদটিতে সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্যরীতির নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। তথ্য অনুযায়ী ১৮০০ সালের ভূমিকম্পে আতিয়া মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৮৩৭ এবং ১৯০৯ সালে মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা মুদ্রিত পুরোন দশ টাকার নোটের একপার্শ্বে আতিয়া মসজিদের ছবি রয়েছে।
আতিয়া মসজিদ কেমন করে যাবেনঃ ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল হতে সনিয়া, নিরালা, বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী প্রভৃতি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে ছেড়ে যায়। এ সব বাসে টাঙ্গাইল যেতে ভাড়া লাগে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। টাঙ্গাইলের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা দ্বারা পাথরাইল বটতলা যেতে হবে। এর পর সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা বা পায়ে হেটে আতিয়া মসজিদে যাওয়া যাবে।
৪. ২০১ গম্বুজ মসজিদ, গোপালপুর, টাঙ্গাইলঃ ২০১ গম্বুজ মসজিদ টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত, যা ইতিমধ্যেই পৃথিবীর সব থেকে বেশি সংখ্যক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের স্বীকৃতি পেয়েছে। আর মিনারের উচ্চতার দিক দিয়ে এ মসজিদটির অবস্থান পৃথিবীর দ্বিতীয়। মসজিদের ছাদে সর্বমোট ২০১ টি কারুকার্যময় সুন্দর গম্বুজ থাকার কারণে মসজিদটি ‘২০১ গম্বুজ মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ২০১৩ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৫ বিঘা ভূমির উপর বড় মসজিদ ও মসজিদ কমপ্লেক্স ভবন তৈরি কাজ শুরু হয়। দ্বিতল বিশিষ্ট এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৪৪ ফুট ও প্রস্থ ১৪৪। দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছাদে অবস্থিত মূল গম্বুজটি উচ্চতায় ৮১ ফুট ও এ গম্বুজের চারপাশকে ঘিরে মসজিদটির ছাদে রয়েছে ১৭ ফুট উচ্চতার আরো ২০০টি গম্বুজ। মসজিদের চার কোণায় ১০১ ফুট খানদানি ৪ টি মিনার মিনার রয়েছে। এছাড়াও ৮১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার পাশাপশি স্থাপন করা হয়েছে। আরোও রয়েছে ৪৫১ ফুট উচ্চতার মূল মিনার। তথ্যানুসারে ২০১ গম্বুজ মসজিদে এক সঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালে অংকিত রয়েছে সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে লাশ রাখার হিমাগার, বিনা মূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের ফেমেলির পুর্নবাসনের ব্যবস্থা আছে।
২০১ গম্বুজ মসিজিদে যাওয়ার উপায়ঃ ২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখতে যেতে হলে প্রথমে টাঙ্গাইল শহতে আসতে হবে। এরপর টাঙ্গাইল সদর হতে বাসে কিংবা সিএনজিতে করে গোপালপুর উপজেলায় এসে অটোরিক্সা বা সিএনজি নিয়ে সহজেই ২০১ গম্বুজ মসজিদে যেতে পারবেন।