বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, যারা বহন করেছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সমাজব্যবস্থা। এই নিজস্ব আচার,প্রথা,ভাষা,ঐতিহ্য বহন করে চলা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীই আদিবাসী বলে পরিচিত। তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং অভিনব জীবনব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানাতে প্রতি বছর ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী দিবস । পাচটি মহাদেশের ৯০ টি দেশের তিনশ’সত্তর মিলিয়ন আদিবাসী এই দিবসটি উদযাপন করেন । আদিবাসীদের দেশভেদে উপজাতি,প্রথম জাতি,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলেও অভিহিত করা হয়।
সারা পৃথিবীর জনসংখ্যার পাঁচ ভাগ এবং পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় পনের ভাগ হল আদিবাসী। তাদের পাঁচ হাজার স্বতন্ত্র বৈচিত্র্য রয়েছে। সমগ্র বিশ্বের আদিবাসীরা প্রায় সাত হাজার ভাষায় কথা বলেন।
১৯৯৩ সালকে জাতিসংঘ আদিবাসীবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৪৯/২১৪ বিধিমালায় বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের স্বীকৃতি পায়।
বিশ্বব্যাপী আদিবাসী দিবস পালিত হয় আদিবাসীদের নিজস্বতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত আদিবাসীদের সমস্যাগুলোকে সামনে এনে তাদের অধিকার নিশ্চিত করাই ছিল দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়।
১৯৯৪ সালে ঘোষিত হলেও বাংলাদেশে আদিবাসী দিবস পালনের সূচনা ঘটে ২০০৪ সালে। ২০০১ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।তখন প্রথম বেসরকারিভাবে বৃহৎ আকারে আমাদের দেশে দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য বিষয়ের সাথে মিল রেখে প্রতি বছর বাংলাদেশের আদিবাসী ফোরাম নিজস্ব প্রতিপাদ্য বিষয় ঘোষণা করে থাকে।
বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ,রাজশাহী, নাটোর,বগুড়া,পাবনা,সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর,দিনাজপুর, গাইবান্ধা,নওগাঁ প্রভৃতি জেলায় প্রায় ৪৫-৫০ টি ছোট-বড় জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের রয়েছে ছাব্বিশটির মত নিজস্ব ভাষা। বাংলাদেশের আদিবাসীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল- চাকমা,গারো,খাসিয়া,রাখাইন,হাজং,মারমা,কুকি,রাজবংশী, মাহাতো,মালো,খুমী,খিয়াং, পাঙ্গান প্রভৃতি। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী দেশের আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী,সম্প্রদায় বা উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও এদেশের আদিবাসীরা নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচিতি দিতেই বেশ স্বাচ্ছদ্যবোধ করেন। জাতিসংঘও দাপ্তরিক কাজে তাদের আদিবাসী বা Indigenous শব্দটি প্রয়োগ করে থাকে। কেননা,আদিবাসীরা কোন জাতির অংশবিশেষ নয়,বরং তাদের নিজেদের আলাদা একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় রয়েছে।
প্রতিবছর ঢাকা শহীদ মিনার এবং শিল্পকলা একাডেমীতে বড় পরিসরে আদিবাসী দিবস উৎযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। আদিবাসী নাচ,গান,আর্ট ক্যাম্প,আলোচনা চলে দিনভর। আদিবাসীরা নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোষাকে সেজে এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এই বছরে দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন৷ মহামারীর প্রকোপে এইবার আয়োজিত হয়েছে অনলাইন সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সীমিত আকারে সমাবেশ,স্মারকলিপি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া প্রকাশ করা হয়েছে পোস্টার, ক্রোড়পত্র, লিফলেট।
এই বাংলার আদিবাসীদের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অনন্য কৃষ্টি ও বৈচিত্র্যময় জীবনধারা। ভিন্নধর্মী জীবনশৈলী নিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা এই স্বাধীন যোদ্ধাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের ভাষাগুলোকে পরিচয় দান করে তাদের পরিচিত করে তোলাই হোক আদিবাসী দিবসের মূল লক্ষ্য।
আধিবাসী গ্রাম
আমার আধিবাসী বন্ধু পলাশ তঞ্চ্যজ্ঞা।
আধিবাসী গ্রাম দেবছড়া পাড়া।
আধিবাসী গ্রাম দেবতাখুম পাড়া।
আধিবাসী গ্রাম রৌনিন পাড়ায় চায়ের আড্ডা