ভরা পূর্নিমায় হাওর বিলাস সুনামগঞ্জ, হাওরের গল্প

হাওরের গল্পঃ ট্যুরদেশ ১২

গ্রুপের ১২ তম ইভেন্ট যখন সাজাতে যাই একটু হিমশিম খাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো খরচ বেশি পরে যাচ্ছে কয় জন যাবে আবার বেশি লোক না হলে নৌকা খরচ বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে একটু ভাবনায় পরেছিলাম। যাই হোক প্রতিবারের মত এবার ও স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ সাইজ ১০ জন নিয়ে চলে গেলাম সুনামগঞ্জ।

প্রতিবারের মত নন-এসি এনা বাসে সুনামগঞ্জ শহরে পৌছে গেলাম ভোর ৫ টায়। ট্যুরদেশিয়ান রা ফ্রেশ হয়ে চলে গেল পানসী রেস্টুরেন্টে, গরম গরম পরাটা, ডাল ভাজি খেয়ে আগে থেকে রিজার্ভ করা লেগুনা তে চলে গেলাম তাহেরপুর।


আব্দুর জহুর ব্রীজ - নতুন ব্রিজ বলে পরিচিত

লেগুনা ড্রাইবার পারভেজ সেই ২০১৭ থেকেই আমাকে ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। পারভেজ এর আন্তরিকতার গল্প অনেক বড় হয়ে যাবে। যাই হোক তাহের পুর যেতে যেতেই জমে উঠে চলতি পথের আড্ডা। গানের আসর জমায় তুলে বকুল ভাই, সোহেল ভাই , নাঈম, প্রান্ত। একের পর এক গান আর ভুল সূর, তাল ভুলে জমে উঠে এক গানের আসর।

আকাশে ঘন কালো মেঘ আর হাওরের বাতাস কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু । তাহেরপুর ঘাটে নেমে ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার) ভাড়া করার জন্য গেলাম, যা বুঝতে পারলাম এখানে বেশি ঘুরলে সুবিধা করা যাবে না। প্রচুর বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ৩ টা ট্রলার ঘুরলাম। ভাড়া ১৬ হাজার থেকে নেমে ৯ হাজারে এসেছে কিন্তু আমাদের টার্গেট আরো কম। বৃষ্টি থাকায় একট্রলারে বসে খোশ গল্প করতে করতে ৭০০০ টাকায় রিজার্ভ করলাম আগামী দিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত। ট্রলারের ম্যানেজার হামীম ভাই এর থেকে বিস্তারিত বাজারের লিস্ট নিয়ে ৩ বেলা খাবারের জন্য বাজার করে নেই। নৌকায় আইপিএস ভাড়া ৩০০ টাকা মোবাইল চার্জ দেয়ার জন্য, আর লাইফ জ্যাকেট ৫০ প্রতিপিস ভাড়া। অনেকে বলে হাওরে পাওয়া যায় লাইফ জ্যাকেট কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে লাইফ জ্যাকেট পাওয়া মুশকিল হয়ে যায় তাই আমি বলবো তাহেরপুর থেকে নিয়ে যাওয়াটাই ভালো। তাহেরপুর থানায় এন্ট্রি করে আমরা নৌকা ভাসিয়ে দিলাম হাওরের দিকে। নৌকার ভিতরে বসে ছোট ছোট জানালা দিয়ে বিটিভিতে দেখা প্রামান্য চিত্রের মত লাগছে সব কিছু। যেন জানালা ভরা ছবি হয়ে জুলছে হাওর।


জানালা বেয়ে বৃষ্টির পানি ছিটে পরছে কপালে, কিছু ছবি আর ভিডিও করে ফেলি এই সুযোগে। প্রচুর বৃষ্টি আর নৌকা ছুটেছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে, যতদূর দৃষ্টি যায় ছেয়ে আছে শূন্যতায়। বাহিরে দীপ্ত ভাই বৃষ্টি তে ছাতা নিয়ে ভিজ চলে গেছে। এদিকে সবাই খোশ গল্পে মেতে উঠেছে নৌকার ভিতরে। ড্রেস চেঞ্জ করে আমি ওঁ চলে যাই ভিজতে নৌকার ছাদে

… আহা ঝুম বৃষ্টি, যেন ছেড়া পাল তোলা নৌকা মাতাল হয়ে হাওরের বুক চিরে দুরন্ত পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে। বৃষ্টির ফোটা টা শরীরে চিমটি কেটে উটছে। এ যেন এক আলিফ লায়লায় দেখা মাঝ দরিয়ায় দখিনা হাওয়ায় উঠা কাল বৈশেখী ঝড়। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আছে আর মেঘলা আকাশ যেন অভিমান নিয়ে ভেসে যাচ্ছে সাগরের বুকে।

এই অনূভুতি লিখে বা বলে প্রকাশ করার মত না।

ঠিক সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত ঝুম বৃষ্টি, এর পর থেকে কিছু টা কমলো আর বাকী ট্যুরদেশিয়ান রা নৌকার ছাদে চলে এসেছে। হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে চলে এসেছি এর মধ্যে। শনিবার থাকায় একটু ভির ই ছিল মনে হচ্ছে, যাই হোক আমরা কিছু টা দূরেই নৌকা থেকে নেমে যাই ঝাপাঝাপি করতে। ১২ টার দিকে বৃষ্টি শেষ, এদিকে নাঈম হ্যামক ঝুলানোর আকজে মহাব্যস্ত।
একে একে সবাই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে এখন হাওরের বুকে জলকেলিতে মেতে উঠেছে।

হ্যামক ঝুলিয়ে সেই লেভেলের আরাম চলছে, সাড়ে ১২ টার দিকে সোনা রোদের একঝলকানি তে সবাই হৈ চৈ শুরু করে দিল।আস্তে আস্তে মেঘলায়ের পাহাড় গুলো উকি দেয়া শুরু করলো, আর সাদা মেঘগুলো ইমিগ্রেশন করে ইন্ডিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে। বকুল ভাই খুব আনন্দ নিয়ে দেখছে সেই সোনা রোদ মাখা প্রকৃতির লিলাখেলা। সবাই হাওরে রঙ চা এ চুমুক দিল (প্রতিকাপ ১০ টাকা) আর যে যার মত ছবি তোলায় ব্যস্ত। সবাই একে একে নৌকায় উঠে ড্রেস চেঞ্জ করা শুরু, আর আমি সবাইকে চমকে দিতে নৌকায় উঠে পরি ড্রোন ফ্লাই করার জন্য, সবাই আবার পানি তে ঝাপ এমন কি নৌকার ম্যানেজার হামিম ভাই সহ।ড্রোন ফ্লাই করে সোহেল ভাই এর কাছে কন্ট্রোলার দিয়ে আমিও দেই ঝাপ। দিপ্ত ভাই সবাই কে নিয়ে ওয়াচ টাওয়ার দেখতে চলে যায় ট্রলার নিয়ে এদিকে আমি আর প্রান্ত এখানেই ভাসতে থাকি। ছোট নৌকা নিয়ে দূর থেকে রঙ চা বিক্রি করতে করিম উল্লাহ আসছে,



চা খেতে খেতে করিম উল্লাহ ভাই এর থেকে মোহনগঞ্জ হয়ে হাওরে আসার রুট বিবরণ শুনে আরেকবার পানিতে ডুব, পানি তে ভাসতে ভাসতেই ট্রেনে হাওরে ট্যুর দেয়ার জন্য আরেকটা প্লান করে ফেলি, সাথে থাকবে দুপুরে খাওয়ার জন্য রাজ হাস এর মাংস।

একটানা ৩ ঘন্টা ঝাপাঝাপি শেষে আমরা নৌকায় ভেসে ভেসে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই।

খাবার শেষে রওনা হই নিলাদ্রীর দিকে, ইঞ্জিন চালিত নৌকার এর স্পিড আর প্রচুর বাতাস থাকায় টিকটক করা কালীন সময়ে বকুল ভাই ট্যুরদেশের এর প্রিয় টিশার্ট টি উড়িয়ে নিয়ে চলে যায় । সাথে সাথে নৌকা ঘুরিয়ে অনেক খুজাখুজি করেও আর পাওয়া গেল না। সেই থেকে আফসোস থেকেই গেল বকুল ভাই এর।

নিলাদ্রী লেকের পাশে ট্রলার নোঙ্গর করলো মাঝি। আমরা নেমে বিকালের মুহুর্ত্য টা নিলাদ্রীর টিলায় শুয়ে সময় কাটাই। কাটাতারে মানচিত্র ভাগ করা নিয়ন আলো গুলো এর মধ্যে জ্বলে উঠছে।

চোখে লাগছে কিন্তু তবুও ভাললাগা এপাশে প্রিয় দেশ ওপাশে বিদেশ। সন্ধ্যা আসে আসে আনমনে পাখিদের কিচিরমিচির সূরের গান শুনা তাও আবার নিলাদ্রী তে শুয়ে, উপলব্দি করতে পারেন — ?

নিলাদ্রী লেকঃ


( ২য় পর্ব - আসবে )

প্রথম দিনের খরচঃ

গাজীপুর - সুনামগঞ্জ বাস ভাড়া = ৫৫০ (জনপ্রতি)
লেগুনা ভাড়া = ১০০০
তিনবেলা খাবার = ২৪৯০ টাকা
ট্রলার ভাড়া = ৭০০০
লাইফ জ্যাকেট = ৫০ জনপ্রতি
আইপিএস = ৩০০
ব্যাক্রিগত খরচ = ১০০ আনুমানিক

এই ট্যুরের বিস্তারিত সব এখানে পাবেনঃ ইভেন্ট লিঙ্ক

30 Likes

অনেক সুন্দর হয়েছে, বিস্তারিত লিখেছেন, আর ছবি গুলো চমৎকার হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ @lrkhokon

3 Likes

Beautiful photos shot in the rain and I especially love the floating forest scenes with hammock and colorful stuff @lrkhokon looks like the water is clear and good for swimming!

2 Likes

কিভাবে একটি ভ্রমণকাহিনী সাজিয়ে লিখতে হয় তা শিখলাম এই পোস্ট থেকে @lrkhokon ভাই!

ধন্যবাদ @MahabubMunna ভাই গ্রুপে শেয়ার দিয়ে পোস্টটি পড়তে বলার জন্য!

2 Likes

Nothing to say @lrkhokon vaiya. Totally awesome :grinning:

#localguides

2 Likes

@lrkhokon ভাই খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। ছবিগুলোও কিনতু দারুন হয়েছে। আমার মনে ধরেছে ভাই।

2 Likes

দারুণ লিখেছেন ভাই ছবি খুব ভালো লাগছে @lrkhokon

2 Likes

@lrkhokon Outstanding write up, Thanks for valuable information and tour plan with budget & details.

2 Likes

সুন্দর লেখনী, তথ্যবহুল, দারুণ সব ছবি সম্বলিত পোস্ট।

আগামীতে আরও সুন্দর পোস্ট দেবেন।

ধন্যবাদ @lrkhokon ভাই।

3 Likes

চমৎকার ভাবে বিস্তারিত বর্ণনা লিখেছে পড়ে মনে হচ্ছিলো আমিও আছি এই ট্যুরে । ধন্যবাদ @lrkhokon

2 Likes

excellent description with amazing picture. To be continue Bro

1 Like

দেখেই তো যাওয়ার ইচ্ছা জাগে ভাই।

1 Like