পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বাহী মাঠা
পুরানো ঢাকায় গিয়েছেন অথচ মাঠা খাননি এমন ভোজন রসিক খুজে পাওয়া যাবে না। মাঠা- পুরানো ঢাকার একটি বিশেষ ঐতিহ্যবাহী খাবার। স্বাদ ও গুণের জন্য মাঠার জনপ্রিয়তা এত কালেও কমেনি এক বিন্দু, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঢাকা শহরের অনেক যায়গাতেই মাঠা পাওয়া যায়। কিন্তু খাঁটি মাঠা ও ঐতিহ্যের স্বাদ একসাথে পেতে পুরানো ঢাকায় যাওয়ার বিকল্প নেই।
আসুন তবে জেনে নেয়া যাক মাঠা বৃত্তান্ত।
প্রায় ১০০ বছর আগের ঢাকায় প্রতিদিন সকালে মাঠা বিক্রি হতো। বিশেষত শীতে এর কদর বেড়ে যেতো। একটি বিরাট হাঁড়ি মাথায় নিয়ে গোয়ালারা হাঁক দিতেন ‘মাঠা-মাখন’ বলে। হাঁড়িতে মাঠা থাকতো এবং হাঁড়ির উপরে একটি আলাদা পাত্রে থাকত হাতে তোলা মাখন। একটি ছোট মাটির পাত্রে লবণও থাকতো খানিকটা।
গোয়ালারা দুটি কাঁচের গ্লাস এবং মাঠা তোলার জন্য টিনের হাতলওয়ালা একটি ছোট মগ আনতেন। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির বাসিন্দাই মাঠা খেতেন এসব গোয়ালাদের কাছ থেকে। এক গ্লাস মাঠার মধ্যে এক টুকরো মাখন এবং অল্প লবন ছিটিয়ে পরিবেশন করা হতো। প্রাচীন ঢাকার মাঠা ছিলো ঘন, ক্রীমি এবং অত্যন্ত সুস্বাদু।
মাঠার প্রধান উপাদান হলো ঘোল। ঘোল হলো মাখন বা পনির উৎপাদনের একটি উপজাত। ঘোলের মাঝে দুধের প্রায় সকল উপাদানই বিদ্যমান। তাই এর পুষ্টিগুন প্রায় দুধের মতই। নিয়মিত ঘোল বা মাঠা পান করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে। দুধের প্রোটিনের উপস্থিতির জন্য যারা দুধ খেতে পারেন না তারা দুধের বদলে মাঠা খেতে পারেন।
মাঠা খেতে হলে সকাল সকাল পুরনো ঢাকার শাখারী বাজারে চলে যেতে পারেন। সাধারণত সকাল ৯টা ১০ টার মধ্যেই মাঠা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এখানের অলি-গলিতে খুঁজলে আপনি পেয়ে যাবেন সুস্বাদু মাঠা। এছাড়াও চকবাজার, নাজিমুদ্দিন রোড, লালবাগ, আমলিগোলা, লক্ষ্মীবাজার, নবাবপুর, উর্দ্দু রোড, ওয়ারী, নারিন্দা, নাজিরাবাজার, ইসলামপুর ইত্যাদি যায়গায় মাঠার খোজ করতে পারেন