অ্যাডভেঞ্চারাস এবং পাহাড় প্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে চন্দ্রনাথ এক অন্যতম গন্তব্য স্থল।
এবার আমার গন্তব্য স্থল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ ফুট উঁচু চন্দ্রনাথ পাহাড়।
আমাদের যাত্রা শুরু হয় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে। এবারের যাত্রায় আমার সঙ্গে আরো অনেকেই ছিল, তাই ট্রেন ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়ের আগে সবাই এসে পৌঁছায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের নির্দিষ্ট ট্রেনে আমরা উঠে পড়ি।
যেহেতু এটি লোকাল ট্রেন ছিল তাই এখানে নির্দিষ্ট কোন সিট থাকেনা, যে যেখানে পাড়ে বসে পরে।
নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই আমরা ট্রেনে উঠে ছিলাম তাই আমরা আমাদের ইচ্ছামত সিটে জায়গা পেয়ে যায়।
ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কমলাপুর ত্যাগ করে।
সময়টা শীতকালের শেষের দিকে, ঢাকায় তেমন শীত নেই কিন্তু ঢাকা থেকে যত দূরত্ব বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ তত বাড়তে থাকে।
আমাদের গন্তব্য চট্টগ্রামের ঠিক আগের স্টেশন, সীতাকুণ্ড।
ট্রেন চলতে থাকে তার নিজের গতিতে আমরা উপভোগ করতে থাকি রাতের দৃশ্য।
লোকাল ট্রেন বহু স্টেশনে থামে, একেরপর এক হকার আসে আবার নেমে যায়।
যে সব স্টেশনের ট্রেন অধিক সময় অপেক্ষা করে সেখানে নেমে আমরা চা, কফি, চকলেট ইত্যাদি খেতে থাকি।
এভাবেই ঠিক ভরে ভরে আমরা পৌঁছে যায় আমাদের গন্তব্য স্থল সীতাকুন্ড স্টেশন।
স্টেশন থেকে সীতাকুন্ড বাজারে গিয়ে আমরা ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খেয়ে চন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে সিএনজিতে উঠে পরি।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা পৌছে যাই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।
এখান থেকেই শুরু হবে আমাদের পাহাড় জয়ের মূল যাত্রা।
পাহাড়ে ওঠার সময় ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য হাতে একটি লাঠি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, পাহাড়ের ঠিক পাদদেশে চিকন চিকন বাসগুলো পাওয়া যায়। 20 টাকা করে দাম আমরা সবাই একটি করে নিয়ে নিলাম।
যে যার মত রেডি হয়ে আমরা শুরু করলাম পাহাড়ে উঠা।
পাহাড় অনেক খাড়া, তবে স্বস্তির বিষয় হলো অতিরিক্ত খাড়া জায়গাগুলোতে রয়েছে কৃত্রিম সিঁড়ি।
সিঁড়িগুলো অনেক পুরাতন, দেখলেই বুঝা যায় বহু বছর আগে কে বা কারা এই সব সিঁড়ি পাহাড়ে উঠার জন্য বানিয়েছিল।
চন্দ্রনাথ পাহাড় চন্দ্রনাথ মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।
পাহাড়ের ঠিক উপরে রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির সেখানে যাওয়ার জন্যই এই সকল সিঁড়ি বানানো হয়েছিল। মূলত এটি একটি তীর্থস্থান।
খাড়া উঁচু-নিচু পথ বেয়ে পাহাড়ে উঠতে থাকি আমরা।
মাঝে মাঝে পাহাড় এতটাই খারাপ উঠতে অনেক ভয় লাগে, এছাড়া কৃত্রিম যে সিঁড়ি গুলো রয়েছে সেগুলো অনেক জায়গায় ভঙ্গা।
আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েক জন ছিল তাদের মধ্যে দুই একজনের উঠতে খুবই অসুবিধা হয়ে যায়। তারা একটু পরপর হাঁপিয়ে যাচ্ছিল আর পরবর্তী স্টেপ যাবে না বলে মনস্থ করেছিল। তাদেরকে নানা মোটিভেশন দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠাতে থাকি।
পাহাড়ে উঠার সময় চারদিকের অসাধারণ প্রকৃতির সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। আপনি বিমুগ্ধ হবেন মহান আল্লাহতালার অপরূপ সৃষ্টি দেখে।
এভাবেই প্রায় দেড় ঘণ্টা পাহাড়ে ওঠার পর আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় এসে পৌঁছায়।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়া থেকে সীতাকুণ্ড শহর সম্পূর্ণ দৃশ্যমান।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পাহাড়ে ওঠার পর আমরা সবাই খুব ক্লান্ত, পাহাড়ের চূড়ায় দুই-তিনটি অস্থায়ী খাবারের দোকান রয়েছে সেখান থেকে আমরা হালকা খাবার খেয়ে ফেলি।
পাহাড়ের চুরাই কিছু সময় অতিবাহিত করার পর আমরা নামার প্রস্তুতি নেই।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠা ও নামার জন্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন পথ রয়েছে, যে কেউ চাইলে এই দুইটি পথ এর যেকোনো একটি দিয়ে নামতে অথবা উঠতে পারে।
আমরা একটি পথ দিয়ে উঠেছিলাম এবং অন্য একটি পথ দিয়ে নেমেছি। এতে করে পাহাড়ের অধিকাংশ ঘোরা হয়ে যায়।
নামার সময় আমাদের বেশি সময় প্রয়োজন হয় নাই, প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমরা পাহাড়ের পাদদেশে নেমে পড়ি।
জীবনের অন্যতম অ্যাডভেঞ্চারাস ভ্রমণ হয়ে থাকবে আমাদের এই চন্দ্রনাথ পাহাড় বিজয়।
#localguidesconnect #localguides #letsguide #Bangladesh #7yearsofBDLG