লালাখাল! নামটা শুনলেই কেমন যেন মনে হয়। লালা বলতে মানুষের মুখ নিঃসৃত তরল পদার্থকেই বুঝায়। কিন্তু একটা খালের সাথে লালার সম্পর্কটাই বা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। আজকে আমরা সিলেটের ঐতিহাসিক খাল লালাখাল ভ্রমনের গল্প শুনবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ভৌগোলিক অবস্থান নিয়েই শুরু করি। সিলেটের প্রায় সবগুলো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গুলো ভারতের সাথে সীমানায় অবস্থিত। সিলেটের ওই পাশে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। যা সারা প্রতিবীতে লেক যার আর ঝর্ণার রাজকণ্যা বলা চলে। আর এই অপরূপ সৌন্দর্যের অনেক বড় প্রভাব পড়েছে সিলেটের এই প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখাল এর অবস্থান। সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়কে ৩৮ কিলোমিটার গেলেই সারিঘাট বাজার পরে। সেখান থেকে ৭ কিলোমিটার ভিতরে গেলেই লালাখাল এর শুরু। নৌকা বা ছোট ট্রলার নিলে পুরো লালাখাল ঘুরে আসা যায়।
যেকোনো সময় লালাখাল ভ্রমণে যাওয়া গেলেও বিকাল বেলা সবচেয়ে সুন্দর সময়। আমরা সকালে জাফলং ঘুরে দুপুরের নাস্তা করে লালাখাল এ যাই। যেতে যেতে দুপুরের ৩ টা বেজে গিয়েছিলো। তাই রোদ খুবই নমনীয় হয়ে গিয়েছিলো। আর তাই লালাখাল এর সৌন্দর্য উপভোগ করা খুবই সুখকর ছিল। আমরা দুইটা ছোট ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এ করে পুরো লালাখাল ঘুরেছিলাম। অসাধারণ এক সময় ছিল। তবে ইঞ্জিন চালিত নৌকার শব্দের কারণে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল।
এবার আসি কেন লালাখালকে ঐতিহাসিক বললাম একটু আগে। লালাখাল এর ইতিহাসটুকুও যেটুকু জানি বলার চেষ্টা করছি। কথিত আছে, চীন সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় “শামস-উদ্-দ্বীন” নামে খ্যাতি লাভ করা মরোক্কোর ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে বতুতা এই লালা খাল হয়েই বাংলায় প্রবেশ কর্রেছিলেন। আসলে নাম এ খাল শব্দটি থাকলেও এই মূলত একটি নদী। সারি নদীর বর্ধিত অংশ এটি। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে ঠিক কি কারণে এর নাম লালাখাল তা এখনও জানা যায়নি।
চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন পানি সারি যদি হয়ে বাংলাদেশে লালাখাল হয়ে প্র্রবাহিত হয়। নদীর পানির রং নীল। তবে আলো এর তারতম্য ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান এর এর কারণে পানির রং কখনো কখনো হালকা সবুজাভ দেখায়। জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে যে পানি এসে লালাখালের সাথে মিশে সেই পানিতে প্রচুরর খনিজ পদার্থ রয়েছে। আর লালাখালের পানির নিচের মাটি কাদা ও বালি যুক্ত। যার কারণে পানির এমন রং হয়েছে।
লালাখালের পানি খুবই শান্ত। সেরকম ঢেউ দেখা যায়না পানিতে। বাতাসের কারণে যেটুকু হালকা ঢেউ এর তৈরী হয়। খালে ভ্রমণের সময় আসে পাশে একটু খেয়াল করলে দেখবেন অনেক বাসিন্দা খাল থেকে কয়লা তুলছেন। খনিজ পদার্থের কারণে লালাখালের বালিতে অনেক কয়লা মিশে থাকে। স্থানীয় অনেকে এই কয়লা তুলে বিক্র্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
লালাখালের দুই পাশে রয়েছে অনেক ঘন জঙ্গল। সবুজ এই প্রতিকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তাছাড়া গোধূলি লগ্নে নৌকায় করে লালাখালে ভ্রমণ করতে করতে আপনি হারিয়ে যাবেন মনের গহীনে। শেষে সূর্যাস্ত দেখে পুলকিত মনে ফিরে আসতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন:
লালাখাল যাওয়ার পথ খুব সোজা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিলেট শহরে চলে আসুন। সিলেট নগরীর ধোপাদিধীর ওসমানী শিশু উদ্যানের বা শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রবাস অথবা জাফলং/তামাবিল বর্ডারগামী বাস এ উঠে পড়ুন। ৩৫ কিলোমিটার পর সারিঘাট বাজার এ নেমে পড়ুন। সারিঘাট থেকে লালাখালে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাবেন। তবে আপনি চাইলে নদীপথেও লালাখাল যেতে পারেন। সেজন্য ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পাবেন সারিঘাট এই।