কর্মব্যস্তময় এই শহুরে জীবন থেকে ফাঁকি দিয়ে একটু সময় প্রকৃতির মাঝে নিজেকে উজার করে দেওয়ার নিমিত্তে ছূটে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাইয়ের অনিন্দ্য সুন্দর নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে।
ভয়ংকর সুন্দর এই ট্রেইলে ট্র্যাকিং করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে মীরসরাই নয়দুয়ার বাজার যেতে হবে। তারপর নয়দুয়ার বাজার থেকে ১৫/২০ মিনিট পথ হাঁটলে পাহাড়ি রাস্তা শুরু হবে। সেই রাস্তা অনুসরণ করলেই কাজ শেষ।
প্রথমেই বলে নেই নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে মোট ৪টি ঝর্ণা রয়েছে।
১. টিপরাখুম ঝর্ণা
২. কুপিটাকুম ঝর্ণা
৩. বান্দরখুম ঝর্ণা
৪. বাঘবিয়ানী ঝর্না
ভয়ানক পাথরের রাস্তা আর এবড়ো-থেবড়ো পাহাড় এর রাস্তা পেড়িয়ে যে অভিজ্ঞতা তা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
ঢাকা থেকে মিরেরসরাই চট্রগ্রাম গামি বাস এর ভাড়া ৪৮০ টাকা। লোকাল বাসে ভাড়া:-৩৫০ টাকা। যাত্রাবাড়ী ও কাচপুর থেকে ২০০/২৫০ টাকা।
ঢাকা থেকে রাতের দিকে রওনা দিয়েই ভোরবেলা পোছে যাই মীরসরাইয়ে। অতপর হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।সেখানে যেতে আমাদের আনুমানিক ২০ মিনিট লেগেছিল। অতপর ব্যাগ রেখে আমরা সকলেই ১০ টাকা দিয়ে লাঠি কিনে মূল ট্রেকিং শুরু করলাম। পা ফেলার আগে বাঁশ দিয়ে সামনের জায়গায় গর্ত আছে নাকি নিশ্চিত হয়ে সামনে আগাচ্ছিলাম । প্রায় ৩০/৪০ মিনিট ঝিরিপথ ধরে হেটে হেটে পৌছে যাই কুপিকাটাখুম ঝর্ণা। যারা নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে যাবেন, তারা কুপিকাটাকুমে একটু সাবধানে নামবেন এবং তারুণ্যসুলভ আচরণ থেকে মানে লাফালাফি করা থেকে বিরত থাকবেন। আর তাড়াহুড়া করবেন না, এতে বিপদ হতে পারে এবং একটু পরপর পা চেক করবেন। জোঁক ধরতে পারে। ঝর্ণাধারায় সিক্ত হয়ে আমরা পা বাড়াই আরও উপরে। উপরে উঠতে গিয়ে বুজলাম,আজকে আমার বারোটা বাজতে বেশি দেরি নেই। তবুও ঐ ঝর্ণাটি আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।
এরপর আমাদের একটা কঠিন পথ পারি দিতে হয়, যেখানে আমাদের একটা খাড়া পাহাড়ে চরতে হয়েছিল (উচ্চতা আনুমানিক ১৫০-২০০ ফুট)। পাহাড়ে উঠার পর কিছুক্ষণ হেটে আমরা ডানে-বামে দুটি রাস্তা পেলাম, কারণ দুই দিকেই দুটি ঝর্ণা রয়েছে। বায়ে ৩০ মিনিট হাটার পরেই পেয়ে গেলাম বাঘবিয়ানী ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটা একটু ভেতরে এবং রাস্তাটাও কিছুটা জটিল আর বিকেলেই অন্ধকার হয়ে যায় সেখনে। তবে যেতে পারলে মন ভরে যাবে। সেখানে কিছুক্ষণ ঝাপা-ঝাপি করে আমরা পিছনের দিকে রওনা হলাম এবং ৩০ মিনিট হাটার পরেই পেয়ে গেলাম নাপিত্তছড়ার সবচেয়ে বড় বান্দরখুম ঝর্ণা। এই ঝর্ণাকেই অনেকে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণাও বলে। সেখানে আমরা অনেকটা সময়ই প্রকৃতিটাকে উপভোগ করে তারপর হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
সেখানে খেয়ে রেস্ট নিয়ে আমরা রওনা দেই মহামায়া লেক এ কায়াকিং এর উদ্দেশ্য। কায়াকিং আসলেই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা!
সাবধানতা:
১. ব্যাকপ্যাক যতটা পারবেন হালকা রাখুন।
২. ক্যামেরা না নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৩. মোবাইল ওয়ালেট রাখার জন্য পলিথিন নিয়ে যাবেন।
৪. পানি এবং কলা সাথে রাখবেন।
৫. গাইড নিয়ে গেলে কিছুটা সুবিধা হতে পারে।
বিঃদ্রঃ স্থানীয় লোকদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন এবং সর্বদা খেয়াল রাখুন যেন আপনারদ্বারা সেই সৌন্দর্যময় স্থানের নুন্যতম সৌন্দর্য নষ্ট না হয়।