আচার্য স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় যিনি (পি সি রায়) নামেও পরিচিত। তিনি মার্কারি(I) নাইট্রেট ( মার্কিউরাস নাইট্রেট ) (সংকেত: Hg 2 (NO 3 ) 2) যৌগটির আবিষ্কারক যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তাঁর অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তাঁর সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামে।
এখানেই তার পৈতিৃক নিবাস এবং জন্মস্থান। ১৮৫০ সালে বিজ্ঞানীর পিতা হরিশচন্দ্র রায় বাড়িটি নির্মান করেন। একই সাথে বিজ্ঞানীর মাতার নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিজ্ঞানীর বাড়িটি পরিতক্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার দখল হয়ে যায় পরে ১৯৯৬ সালে প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষনা করে।
বিজ্ঞানীর বাড়িটি মূল দুটি অংশে বিভক্ত সদরমহল আর অন্দর মহল । সদরমহলটি এখনো দাড়িয়ে আছে কিন্তু অন্দর মহলটি ভগ্নদশায় আছে। সদর মহলটি চতুর্ভূজাকৃতির , এর উত্তর দিকে রয়েছে দুর্গা মন্দির অন্য তিন দিকে রয়েছে একতলা ও দ্বোতলা ইমারত। সদর মহলের দক্ষিণ দিকে রয়েছে সদর দরজা । এছাড়া বাড়িতে রয়েছে পুকুর , আঙিনা, মঞ্চ, বাগান ইত্যাদি। মাঝখানে একটি ফাঁকা স্থানকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে পুরো বাড়িটির নকশা।প্রায় ১৭০টি স্তম্ভের উপর বসানো পুরো কমপ্লেক্সটিতে মোট ৪৫টি দরজা ও প্রায় ১৩০টি জানালা রয়েছে। মূল ভবনের ছাদের উপর রয়েছে একটি সিংহমূর্তি। বাড়িটির বিভিন্ন দেয়াল ও স্তম্ভে ফুল, লতা ও হরেক রকমের নকশা অঙ্কিত রয়েছে। বাড়িটির অবস্থান কপোতাক্ষ নদীর তীরে।
মাত্র আধা কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে রয়েছে আচার্য দেবের পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত আরকেবিকে হরিশচন্দ্র ইনস্টিটিউট, আর পাশেই তার মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত রাড়ুলী ভুবনমোহিনী উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।বাগেরহাট জেলায় ১৯১৮ সালে তিনি পি.সি কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পার্শ্ববর্তী কাঠিপাড়া গ্রামে প্রাচীন জমিদার বাড়ি ও কিছু মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। ঐতিহ্যবাহি এই গ্রামটিতেই ছিল মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের মাতুলালয়।সম্প্রতি স্যার পি.সি রায়ের বাহির বাড়ির সম্মুখে তাঁর একটি ম্মৃতি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। যার নির্মাণ শিল্পী, বিমানেশ বিশ্বাস। ম্যুরালটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত আছে। পাশে রয়েছে রাড়ুলী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, যার একটি কক্ষে (রেকর্ড রুমে) রক্ষিত আছে মহান বিজ্ঞানীর গবেষণা কাজে ব্যবহৃত কিছু পাথরের তৈজষপত্র ও কাচের চিমনী বা জার। যেগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের মনের খোরাক যোগাবে যথেষ্ঠ। বাগানের ছোট খোলা মাঠে জমবে পিকনিক, খাওয়া দাওয়া ও ফটোসেশান।তবে দুর্ভাগ্যবসত উক্ত স্থানের আশেপাশে খাওয়ার বা থাকার জন্য কোনো হোটেল নেই। এখানথেকে ১০ কিলোমিটার দুরে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদে সব রকম সুযোগ সুবিধা আছে।
খুলনার সোনাডাঙ্গা-বাসস্টান্ড থেকে পাইকগাছা প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা। খুলনা থেকে বাসে পাইকগাছা যাবার পথে, রাড়ুলী পাইকগাছা সংযোগ সড়কে নেমে, সেখান থেকে রিক্সা কিংবা অটোরিক্সায় যাওয়া যায়। অথবা তালা উপজেলা বাজারে নেমে অটোরিক্সা বা মোটরসাইকেল এ যাওয়া যায়। খুলনা থেকে সরাসরি মাইক্রোবাসে করেও যাওয়া যায়।