হ্যালো লোকাল গাইড। আমি এখন আছি কলকাতায়, শুরু করলাম আমার আন্দামান সিরিজ, তিন পর্বের এ সিরিজ টি হবে, এখন আমি যাচ্ছি কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ার অর্থাৎ আন্দামানের রাজধানী উদ্দেশ্যে। আমার ফ্লাইট ভোর 7 টা 15 মিনিটে তাই আমি বেরিয়ে গেছি একেবারেই ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে কারণ একটু আগে পৌঁছানো দরকার বলে।
আমার গন্তব্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট আমার আজকের ফ্লাইট ইন্ডিগো এয়ারলাইনস 2 ঘন্টা 25 মিনিট সময় লাগবে কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছাতে। শেষ রাতের কলকাতা দেখতে কথায় অসাধারণ। ১ ঘন্টা সময়ের একটু কম সময়ের মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম।যেহেতু এটা একটা ডোমেস্টিক ফ্লাইট তাই খুব বেশি আগে না আসলেও হয় যেহেতু সোয়া সাতটায় ফ্লাইট ছয়টার মধ্যে এয়ারপোর্টে আসলেই হবে। 5 টা 40 এর মধ্যে আমি পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্টে। আমার ঘণ্টাখানেকের একটু কম সময় লেগেছে কারণ আমি এসেছে সাউথ কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে এমন সময় আমি এয়ারপোর্টে আসি নাই তাই অভিজ্ঞতাটা তেমন নাই বললেই চলে। এয়ারপোর্টে ঢুকে বুঝার কোন উপায় নাই যে এখন রাত কি দিন, প্রচন্ড ভিড়, ব্যস্ততম একটা এয়ারপোর্ট সম্ভবত ভোরের বেলায় প্রচুর ফ্লাইট অপারেট করে এয়ারলাইন্সগুলো।
প্রথমে বলে রাখি, এয়ারপোর্টে ঢোকার সময় টিকেট এবং ফোটো আইডেন্টিটি চেক করবে এটা বাধ্যতামূলক, ইন্ডিয়ান তাদের আধার কার্ড অথবা প্যান কার্ড দেখবে, আর যারা ইন্টারন্যাশনাল তাদের পাসপোর্ট চেক করবে, বাংলাদেশি তাই আমার পাসপোর্ট চেক করা হয়েছে।
এয়ারপোর্টে প্রবেশ করলাম, প্রথমে লাগেজটা সিকিউরিটি চেকিং করে নিলাম তারপর ব্যাগে আমার সিকিউরিটি লাগিয়ে দিল, বোডিং করে নিলাম সেল্ফ চেকিং দিয়ে, যেহেতু এটা ডোমেস্টিক ফ্লাইট ইমিগ্রেশনের কোন ঝামেলা নাই। ইতিমধ্যে ভোরে সূর্য উঠে গেছে। এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ থেকে বসে উপভোগ করছি এবং প্রতীক্ষায় আছি বিমান ছেড়ে যাওয়ার।
অবশেষে বিমানে উঠলাম আমার গেট নাম্বার ছিল ২৩, ফ্লাইট নাম্বার 6E2128। অন টাইম ফ্লাইট ছিল।
তবে বলে রাখি, কলকাতা এয়ারপোর্টে গেট নাম্বার গুলোতে যেমন এ,বি,সি,ডি গেট আছে। আমার ছিল 23 এ, 23 এ,বি,সি,ডি এমন গেট আছে, আপনাকে অবশ্যই বোর্ডিংয়ে উল্লেখ করা গেট নাম্বার খুঁজে বের করতে হবে তা না হলে আপনার ফ্লাইট মিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন তারা যারা প্রথমবার ট্রাভেল করছেন ডোমেস্টিক এ। আমি বেশ কয়েকজনকে ফ্লাইট মিস হতে দেখেছি, এ কারণে আপনাদের বিষয়টা জানিয়ে রাখলাম।
বেডিং ব্রিজ দিয়ে অবশেষে বিমানে উঠলাম, ইন্ডিগো এয়ার ক্রাফট টি ছিল একটি এয়ারবাস, এয়ারবাস a320 মডেলের। লাকিলি সেখানে দেখতে পারলাম রজনীকান্তের ব্র্যান্ডেড চার্টার্ড এয়ারক্রাফট।
তবে বলে রাখি এই বিমানে আপনি খাবার পাবেন না তবে যদি কিছু খেতে মন চায় অবশ্যই আপনাকে সেটা পেমেন্ট করে খেতে হবে, বিমানটি বাজেট ক্যারিয়ার। ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে আমার বিশ্বাস আপনি অনেক মজা পাবেন কেবিন ক্রুদের কেনাবেচা সার্ভিস দেখে। আমি এই বিষয়টা খুব ইনজয় করি যে, বিমানে কেবিন ক্রুরা খাবার বেঁচে। দাম তুলনামূলক বেশি থাকে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় যেটা আমার মাথায় আজও ঢুকে নাই, আপনি আপনার ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আকাশে 30 হাজার ফুট উপরে ইনস্ট্যান্ট খাবারের বিল পেমেন্ট করতে পারবেন পস মেশিন এর মাধ্যমে।
আমি একটি চাওমিন নিয়েছিলাম rs.400 দিয়ে এবং পেমেন্ট করেছিলাম আমার কার্ড দিয়ে কার্ড থেকে ইনস্ট্যান্ট টাকা কেটে নিয়ে ছিল। সেই সাথে আমি আমার ব্যাংক থেকে নোটিফিকেশন পেয়েছিলাম ইনস্ট্যান্ট সেই ট্রানজেকশন এর ব্যাপারে, যেটি আমি বিমান থেকে নামার পরে দেখতে পেরেছিলাম।
আমি আশা করছি খুব সুন্দর জায়গা হবে আন্দামান, আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে অবতরণ করতে যাচ্ছি, অনেক ইতিহাস জুড়ে আছে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। এখানকার সেলুলার জেল, আমাদের ইন্দো-পাক যে ইতিহাস তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, আমরা জানি আমাদের বিপ্লবীদেরকে শাস্তি দেয়া হতো এই সেলুলার জেলে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত। আশা করছি পরবর্তীতে আপনাদেরকে বলবো এই আন্দামানের সেলুলার জেল এর ব্যাপারে। আপাতত উপভোগ করছি পাখির চোখে উড়োজাহাজ থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে অবস্থান করলাম ভীর সভারকার এয়ারপোর্টে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। পোর্ট ব্লেয়ার এয়ারপোর্ট এর নাম করা হয়েছে ভারতের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীর নামে। ভীর সভারকার এই সেলুলার জেলে একসময় বন্দি ছিলেন। সময় ও নিয়তি আসলেই অদ্ভুত পোর্ট ব্লেয়ারের বিপ্লবী হিসেবে বন্দী ছিলেন যে ভীর সভারকার তার নামেই এই পোর্ট ব্লেয়ারের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। সত্যিই জীবন খুবই বিচিত্র। পোর্ট ব্লেয়ারের শহরটি দেখা যাচ্ছে বিমান থেকে।
অনেকেরই একটা কোশ্চেন থাকে, আন্দামানে যেতে কোন ভিসা লাগে কিনা আন্দামান অন্য কোন দেশ কিনা, এটি ভারতের কোন ধরনের বা কিরকম অংশ। আন্দামান কোন স্টেট নয়, আন্দামান হল ইউনিয়ন টেরিটোরি ভারতের 29 টি স্টেট আছে, এবং 7 টি ইউনিয়ন টেরিটোরি আছে আন্দামান হচ্ছে একটি ইউনিয়ন টেরিটোরি। এবং পোর্টব্লেয়ার সেই ইউনিয়ন টেরিটোরি রাজধানী।
আমি ইতিমধ্যেই লাইন করেছি পোর্টব্লেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। এরপর থেকে বের হয়ে 200 রুপিতে ঠিক করলাম হোটেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। এরপরের পোস্টে আপনাদের কাছে শেয়ার করব আমার নানান ধরনের অভিজ্ঞতা। সেই পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
বি : দ্রো : এই পোস্টটি আমি লিখেছি ভ্রমণ চলাকালীন অবস্থায় , যাতে আপনারা আমার ভ্রমণ এর রিয়েল অভিজ্ঞতটার অনুভূতি পান। পরবর্তী পোস্ট লিখবো আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে হ্যাভলক আইল্যান্ড।