আপনি যদি সিকিমের প্রথম পর্বটি না পড়ে থাকেন তাহলে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
আমি আশা করছি আপনি আপনার সহযোগী ভ্রমণ পিপাসুদের সাথে নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত বরফাচ্ছন্ন পরিবেশ ভ্রমণ করে সুষ্ঠুভাবে সুস্থতার সাথে গ্যাংটক পৌঁছেছেন।
খুব ক্লান্ত লাগছে তাইনা? সারাটা দিন পাহাড়ের উপরে উঠা আর নামা সব মিলে 21 হাজার ফিট ও প্রায় ২২০ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা রাস্তা ভ্রমণ শেষে শরীরে কোনো রকম এনার্জি নাই তাই না? আজ রাতে চমৎকার ঘুম হবে বিছানায় যাওয়া মাত্রই ঘুম। আজকে সারাদিনের ক্লান্তি মই ভ্রমণের ফলে এবং মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে পরিবার-পরিজনদের থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম সামান্য কিছু আত্মতৃপ্তির জন্য। এতক্ষণে তো শরীরে শক্তি ও পাচ্ছেন না তাই না, ওকে ঘুমিয়ে পড়ুন কালকে সকালে বের হতে হবে সাংগু লেক এর জন্য।
হ্যাঁ, আজ আমি আপনাদেরকে সাংগু লেক যেটা সাউথ সিকিম এর মধ্যেই আছে যা গ্যাংটক থেকে 12 হাজার ফিট উপরে।
সাঙ্গু লেকটা হলো সিকিমের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,৮০০ ফিট উপরে তাপমাত্রা ০৪ থেকে ০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস,চায়না বর্ডার ( নাথুলা ) এখান থেকে ১৬ কিঃমিঃ পূর্বে এবং নাথুলা পাশের উচ্চতা ১৭,৬০০। বাংলাদেশী নাগরিক দের নাথুলা পাশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।
আজকের ভ্রমণের পার্থক্য তো একটা গতকালকে ভ্রমণ এর চেয়ে একটু আলাদা অনুভব করবেন। নর্থ সিকিমের পাহাড়ের রাস্তা লম্বা এবং শট থাকার কারণে আপনার যাত্রা টা দীর্ঘ ছিল। কিন্তু সাঙ্গু লেক যেতে আপনাকে কম সময়ে এরমধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, যে কারণে আপনাকে খাড়া রাস্তার সম্মুখীন হতে হবে। সাঙ্গু লেক যেতে হলে আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয় যা আপনি প্যাকেজ এর আওতাভুক্ত হওয়ার সময় হোটেল অথবা ট্রাভেল গাইড কে দিয়ে ফেলেছেন। পরবর্তীতে গত কালকের মতোই ড্রাইভার সব ব্যাপার গুলো ডিল করবে।
সাঙ্গু লেক এরিয়াতে প্রবেশের সময় 10 রুপি দিয়ে একটা এন্ট্রি টিকেট নিতে হবে।
সাঙ্গু লেক যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে এই যাত্রায় আপনি ক্লান্তি বোধ করবেন না আশা করছি। আপনি যদি সকাল সকালে জান দুপুরের মধ্যে ফিরে আসতে পারবেন।
সাঙ্গু লেক সাধারণত তিনটি জিনিসের জন্য জনপ্রিয় :
১. একটি পানির লেক
২. ইয়াক
৩. ক্যাবল কার
সাঙ্গু লেক এ অক্সিজেনের কোন সমস্যা নেই। সেখানে পর্যাপ্ত বাতাস পাবেন গাছপালা আছে এজন্য নিঃশ্বাস নিতে কোন সমস্যা হবেনা।
ক্যাবল কারে চলতেই হলে আপনাকে 380 রুপি গুনতে হবে। ক্যাবল কারে আপনি যে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন সেটি হচ্ছে সিকিমের সিটি টা সম্পূর্ণ দেখা যায়। এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় যা সবার পরিচিত একটি নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এটি খুব কাছ থেকে দেখা যায়। প্রায় 40 মিনিটের মধ্যে আপনি ফিরে আসতে পারবেন।
সাঙ্গু লেক যেতে অনেক ছোট ছোট পাহাড়ের ঝরনা দেখতে পাবেন। সেই সাথে একটা মজার জিনিস উপলব্ধি করবেন, সিকিমে মূলত ছেলে অথবা পুরুষ মানুষ অলস প্রকৃতির হয় এবং সবচেয়ে কর্মঠ হয় নারীরা।
ভ্রমণের সময় :
ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। হয়তো ব্যস্ত জীবনের অজুহাতে তা হয়ে উঠে না অনেকেরই। কিন্তু এই ব্যস্ত জীবন নিয়ে স্টিফেন কভিয়ের একটি সুন্দর কথা আছে : “আপনার জীবন চলে একটি কম্পাস দিয়ে, ঘড়ি দিয়ে নয়”। সাঙ্গু লেক ভ্রমণের সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই সময় ভ্রমণের সবচেয়ে সঠিক সময় বলা হয়।
সতর্কতাঃ
সিকিম ভারতের প্রথম রাসায়নিক মুক্ত বা অর্গানিক রাজ্য বলে পরিচিত। পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে সিকিম সরকার উত্তর সিকিমের লাচুং ও লাচেন গ্রামে নিষিদ্ধ করেছে প্লাস্টিকের বোতল। সেই সাথে নির্দেশ অমান্যকারী কে গুনতে হয় অনেক মোটা অঙ্কের জরিমানা, আর কপাল বেশি খারাপ থাকলে মার ফ্রি।
পরবর্তী পোস্টে আমি সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক এ ঘুরাঘুরি নিয়ে একটি তৃতীয় পর্ব লিখব। ধন্যবাদ সবাইকে আমার পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে পড়ার জন্য। এবং আমি আশা করছি পড়া শেষে আমাকে কদুছ দিতে ভুলে যাবেন।