মেঘালয় ক্যাম্পিং দ্বিতীয় দিন


হালকা বৃষ্টি হওয়ার কারণে নদীতে আগের তুলনায় কিছুটা পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পানির শব্দটাও। 6 টায় ঘুম ভেঙে গেল। বাইরের আলো আর পানির শব্দে। তাবু থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম দূরের ঐ পাহাড়ের দিকে, ভাবতেই পারিনি সারাটা রাত এখানে ছিলাম কারণ রাতের আধারে কিছুই বুঝিনি। দূর পাহাড়ের গা ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে নদী তারি কোলঘেঁষে ঘুমিয়ে ছিলাম আমরা।

নদীর এপার ওপার দুই পাশেই বসানো হয়েছে রংবেরঙের তাবু। দুপাশে ক্যাম্পিংয়ে স্থান আর মাঝখানে বয়ে চলছে উমাংগট নদী। তাঁবুর ডানপাশে তাকিয়ে আরো বেশি অবাক হলাম ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে।

তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে তিনজন বেরিয়ে পড়লাম সাসপেনশন ব্রিজ দেখার জন্য। ক্যাম্পিং স্থান থেকে দু মিনিটের পথ। রাতের আঁধারে ভালো মতন ব্রিজ থেকে দূরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেনি কিন্তু সকালে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম প্রকৃতি দেখে। ব্রিজের উপর থেকে নিচের তাবুগুলো মনে হচ্ছিল ছোট ছোট পাথরের টুকরো। ব্রিজের মাঝ বরাবর গিয়ে যখন নিচে উমাংগট বয়ে চলা নদীর দিকে তাকালাম নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না, এতটা পরিষ্কার পানি কিভাবে হতে পারে!!!

উপর থেকে নিচের পানির ভেত রের সমস্ত পাথরগুলো খুব স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে মনে হচ্ছেনা পাথরের উপর বয়ে চলছে পানি।

সাসপেনশন ব্রিজ এর পাশে আরেকটি ছোট্ট ব্রিজ রয়েছে, এই বৃষ্টি অনেক সুন্দর, উপর থেকে বয়ে আসা ঝরনার পানি সাদা দুধের মতন বয়ে চলছে ব্রিজের নিচ দিয়ে। ব্রিজ দেখা শেষ করে সবাই চলে আসলাম সকালের নাস্তার জন্য।


গরম গরম নুডুলস আর চা দিয়ে নাস্তা শেষ করে সকলে বেরিয়ে পড়ি নৌকা নিয়ে উমাংগট নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য।লাইফ জ্যাকেট পরে দুটো বোট নিয়ে ছুটে চললাম উমগট নদীর প্রায় উৎপত্তির দিকে। দু’পাশে বিশাল বিশাল সব পাথুরে খাড়া পাহাড়। আর পাহাড় মানেই ঘন জংগল।দু’পাশের পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে এই নদী। বিশাল বিশাল সব পাথরের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে শীতল স্রোতেরা।

পরিপূর্ণতা দিচ্ছে এই নদীটাকে। উমগট নদীকে অনেকেই জীবন্ত অ্যাকুরিয়াম বলে থাকেন।

কারণ এই নদীর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, পানির নিচের মাছগুলোকেও স্পষ্ট দেখা যায়।

এদিকে ঘড়িতে সময় হয়েছে দুপুর বারোটা। সবকিছু গুছিয়ে আগে থেকে রিজার্ভ করা গাড়িতে চড়ে বসলাম। সময় হয়েছে সেনাংপেডাং বিদায় জানিয়ে অন্য একটি স্থানে যাওয়ার।


এবারের গন্তব্য ক্রাংসুরি ঝর্ণায়। দুর্গম লাল পাহাড়ের পথ ধরে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম ক্রাংসুরি। সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে বাইরের আবহাওয়া একটু ঠান্ডা। সবাই ঝর্নায় গোসল করারজন্য প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হলাম নিচের দিকে। ক্রাংসুরি ঝর্ণায় যেতে হলে গাড়ি থেকে নেমে প্রায় ১৫ মিনিট নিচের দিকে হেঁটে যেতে হয়। তবে সেই হাঁটার পথটাও অসাধারণ। গাছগাছালি ঘেরা সেই পথ। ক্রাংসুরিতে গিয়ে সবাই লাইফ জ্যাকেট ভাড়া নিলাম। কারণ ক্রাংসুরিতে নামতে হলে লাইফজ্যাকেট পরিধান করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া এরকম প্রকৃতির কোলে ঝর্না এবং সুইমিংপুলের অপূর্ব সংমিশ্রণ মিস করতে চাচ্ছিলাম না কেউ।

অনেকেই নেমে পড়ল পানিতে কিন্তু আমি আর পারলাম না। এদিকে অনেক লোভ ও সামলাতে পারছিনা, পানি যে এত ঠান্ডা হবে কল্পনাও ছিলনা। পাবি জানুর সাথে সাথে পুরো শরীর শিহরণ ধরে গিয়েছিল। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরও সমগ্র শরীর পানিতে ভিজা তে পারলাম না। আফসোস নিয়ে ফিরতে হল উপরে।

ক্রাংসুরি থেকে উঠে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম ডাউকির পথে। কয়েকজন থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম কারণ টিমের 6 জন যাবে শিলং। আর বাকি মেম্বার যারা আছে সকলেই বাংলাদেশ ফেরত আসবে। গাড়ি ছুটে চলছে পাহাড়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে সীমান্তের দিকে। সন্ধ্যা পাঁচটায় পৌছালাম ডাউকি বাজারে। সবাই হালকা শপিং করে রওনা হলাম ইমিগ্রেশন এর দিকে। আর একটু পরেই বন্ধ হয়ে যাবে ইমিগ্রেশন আমরা ছিলাম শেষ পর্যটক সেদিনের জন্য। তাড়াহুড়া করে ইমিগ্রেশন শেষ করে প্রবেশ করলাম বাংলাদেশ।বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন শেষ করে রওনা হলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে।

সিলেট আসবো আর পানসি খাব না তা কি করে হয়, সবাই মিলে জমিয়ে রাতের খাবার শেষ করে রওনা হলাম বাস কাউন্টার। টিমের সকলেই যাবে ঢাকা শুধু আমি একা যাবো চট্টগ্রাম। রাত সাড়ে দশটার বাসে রওনা হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরতে সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল কিন্তু আপন নীড়ে ফিরতে তো হবে। আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ ভাবে সকাল সাতটায় পৌঁছে গেলাম চট্টগ্রাম।

মেঘালয় ট্রিপের প্রত্যেকটা মানুষকে খুব মিস করবো শেষ করবো গাড়ির ছাদে বসে আড্ডা, নৌভ্রমণ ও ক্রাংসুরি ঝর্ণা পারে বসে থাকা।

মেঘালয় রাজ্য টা আসলেই খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সবকিছু গোছালো। ভ্রমণ করতে গিয়ে এসব জায়গা কেউ নোংরা করে আসবেন না, নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলবেন। দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না যাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

31 Likes

@aukanamul11 আরেকটি অসাধারন পোস্ট শেয়ার। বরাবরের মতই অনেক ভালো লেখনী এবং ফটোগ্রাফী।
চালিয়ে যান…

3 Likes

@aukanamul11 ।। ভালো লিখেছেন। :heartbeat: :heart_decoration: :heart_decoration: :heart_decoration: :heart_decoration: :heart_decoration: :heart_decoration: :heart_decoration:

সুন্দর পোস্ট।।

3 Likes